ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু
দেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনের জানানো হয়, সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় (এসআইআই) তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম কিস্তি ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে।
ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের আবেদন করতে হবে একটি অ্যাপের মাধ্যমে। আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে অ্যাপে আবেদন করা যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বেক্সিমকো আমাদের জানিয়েছে যে সেরামের ভ্যাকসিনের প্রথম চালান ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে পৌঁছে যাবে।’
তিনি জানান, প্রথম মাসে জন প্রতি দুটি করে ডোজ হিসাবে ২৫ লাখ মানুষকে মোট ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ফাইজারের ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজনীয় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সংরক্ষণ ক্যাপাসিটি কত সেটা যাচাই চলছে।
অধ্যাপক খুরশিদ বলেন, ‘আমাদের (কোভ্যাক্স থেকে) জানাতে বলা হয়েছে, আমরা (ফাইজারের ভ্যাকসিন নিতে) রাজি কিনা। আমরা নীতিগতভাবে এ বিষয়ে সম্মত হয়েছি। আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই চিঠির উত্তর দেব। এখন আমরা আমাদের সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়াচ্ছি।’
এ সময় জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পরিকল্পনার সদস্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক শামসুল হক মৃধা গণমাধ্যমের কাছে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পরিকল্পনা’ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘(ভ্যাকসিনের প্রভাব) দেখার জন্য আমরা প্রথমে স্বেচ্ছায় তালিকাভুক্তদের ভ্যাকসিন দিব, এটা সম্ভবত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে। এর জন্য আমাদের সাত দিনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা। …এটি চূড়ান্ত করা হবে। এর জন্য আমাদের একটি কমিটি রয়েছে।’
সংরক্ষণ
ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা অনুসারে, ৬৪ জেলায় ওয়াক-ইন কোল্ড রুম বা আইস লাইনেড রেফ্রিজারেটরে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে। অন্তত ৪৮৩টি উপজেলায় ইপিআই নেটওয়ার্কের আওতায় আইস লাইনেড রেফ্রিজারেটর রয়েছে।
প্রতিটি ওয়াক-ইন কোল্ড রুমে ভ্যাকসিনের অন্তত চার লাখ ২৫ হাজার শিশি রাখা যাবে এবং একটি আইস লাইনেড রেফ্রিজারেটরে রাখা যাবে সাত হাজার ১০০ শিশি।
৯০০ শিশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কোল্ড বাক্স এবং ৮০ শিশি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভ্যাকসিন ক্যারিয়ারের প্রয়োজন হবে।
শামসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এবং অন্যান্য উত্স থেকে হিমাগার ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঢাকায় ১৪টি এবং বিভিন্ন জেলায় ১৭টি আইস লাইনেড রেফ্রিজারেটর স্থাপনের কাজ করছি।’
চুক্তি অনুসারে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ছয় কিস্তিতে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দেশের জেলা পর্যায়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে।
ভ্যাকসিন টিম
ভ্যাকসিন প্রয়োগে মোট সাত হাজার ৩৪৪টি টিম কাজ করবে। প্রতিটি টিমে ছয় জন সদস্য থাকবেন। যাদের দুজন ভ্যাকসিন দেবেন এবং বাকি চার জন থাকবেন স্বেচ্ছাসেবক।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন দেওয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রম ২৭ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তকে, ভ্যাকসিন কেন্দ্রের সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মিরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘নিবন্ধিত ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করব।’
প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ ও বিজিবি হাসপাতাল, সিএমএইচ এবং বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভ্যাকসিন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য অ্যাপে ডিজিটাল নিবন্ধনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
প্রতিটি নিবন্ধনের জন্য কতক্ষণ সময় প্রয়োজন হতে পারে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, প্রতিটি নিবন্ধনের জন্য পাঁচ মিনিট থেকে ১০ মিনিট সময় লাগবে। আসলে এটি ব্যবহারকারীর দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।’
অধ্যাপক খুরশিদ আলম যোগ করেন, ‘আমরা জানি দেশের প্রতিটি বাড়িতে এই কাজের জন্য উপযুক্ত অন্তত একজন সদস্য আছে। তাছাড়াও বিকল্প তো সব জায়গাতেই আছে।’
নিবন্ধনের পর ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার তারিখ এবং সম্পর্কিত তথ্য মেসেজের মাধ্যমে মোবাইলে পাঠানো হবে।
প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার আট থেকে ১২ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর যে কোনো বিরূপ প্রভাব দেখা দিলে তা মোকাবিলায় প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিত্সা সহায়তা থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম। ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরা হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, মাথা ঘোরা বা দুটোই হতে পারে। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট ও জ্বর থেকে অ্যানাফিল্যাক্সিসের সৃষ্টি হতে পারে।’
Comments