অবসরের কারণ নিয়ে আমিরের বক্তব্য মনগড়া, মত মিসবাহর

আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা মোহাম্মদ আমির কাঠগড়ায় তুলেছিলেন পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্টকে। তিনি দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কাছ থেকে অসহনীয় মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগও করেছিলেন। কিন্তু তার এসব বক্তব্যকে মনগড়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের কোচ ও প্রধান নির্বাচক কোচ মিসবাহ উল হক। তিনি আরও জানিয়েছেন, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে নিজেকে প্রমাণ করে দলে ফেরার দাবি রাখা উচিত ছিল বাঁহাতি পেসারের।
নিউজিল্যান্ড সফরের পাকিস্তান দলে জায়গা না পাওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে নিজ দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিকেট থেকেই সরে দাঁড়ানোর কথা জানান আমির। তিনি অবশ্য টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন আরও আগে, ২০১৯ সালের জুলাইতে। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তার অবসরের বিষয়টি নিশ্চিত করে পিসিবি। সেখানে বলা হয়, ক্রিকেট পুরোপুরি না ছাড়লেও পাকিস্তানের জার্সিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর দেখা যাবে না ২৮ বছর বয়সী তারকাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মহীনতায় ভোগা আমিরকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্য বিবেচনা করেনি পাকিস্তানের ছয় সদস্যের নির্বাচক কমিটি। তাতে কোচ মিসবাহ ও অধিনায়ক বাবর আজমেরও সায় ছিল। তবে আমির আলাদা করে আঙুল তাক করেছিলেন বোলিং কোচ ও সাবেক ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনুসের দিকে। তার অভিযোগ অবশ্য আমলে নিচ্ছেন না মিসবাহ।
সোমবার লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, আমির তিলকে তাল বানাচ্ছেন, ‘আমিরের (অবসরের) ঘটনায় ওয়াকারকে জড়িয়ে কথা উঠেছে। কিন্তু এসবের কোনো সত্যতা নেই। নির্বাচক হিসেবে ছয় (অ্যাসোসিয়েশনের) কোচ ছিলেন, সঙ্গে আমি প্রধান নির্বাচক হিসেবে ছিলাম এবং অধিনায়ক তো ছিলেনই। তাই, কেবল একজনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছে, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

‘পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তাকে দলের জন্য বেছে নেওয়াটা কেউই সমর্থন করেনি। আমি বুঝতে পারছি না যে, কেন সে এসব মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছে এবং পুরো দৃশ্যপটকে তিল থেকে তাল বানানোর চেষ্টা করছে। (বাদ পড়ার) পরের প্রক্রিয়াটা ছিল খুব সাধারণ: ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ফর্ম দেখিয়ে জাতীয় দলে ফিরে আসা। এছাড়া, বাকি সবকিছুই অপ্রাসঙ্গিক।’
স্পট-ফিক্সিংয়ের কারণে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে ২০১৬ সালে আমির যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য মুক্ত হন, তখন পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় তাকে দলে নেওয়ার বিষয়ে বেঁকে বসেছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ ও আজহার আলীর মতো তারকারা। ওই সময় পাকিস্তানের প্রধান কোচ ছিলেন ওয়াকার। তিনি ও পিসিবির তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান মিলে ক্রিকেটারদের রাজী করিয়েছিলেন আমিরকে গ্রহণ করার ব্যাপারে।
স্মৃতি হাতড়ে পুরো ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে মিসবাহ বলেছেন, ‘আমিরের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং আমি সবসময়ই ক্রিকেটারদেরকে করেছি, সে সিনিয়র হোক কিংবা জুনিয়র। সে যখন ফিরে আসে (নিষেধাজ্ঞা শেষে), তখন আমি ছিলাম অধিনায়ক। তখন আমি তাকে স্বাগত জানিয়েছি এবং সবকিছু একপাশে সরিয়ে রেখে পাকিস্তান ক্রিকেটের স্বার্থেই তাকে সমর্থন করেছিলাম।’
পাকিস্তানের হয়ে ৩৬ টেস্ট, ৬১ ওয়ানডে ও ৫০ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন আমির। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার উইকেটের সংখ্যা ২৫৯টি। টেস্টে তিনি পেয়েছেন ১১৯ উইকেট। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে তার শিকার যথাক্রমে ৮১ ও ৫৯টি। তবে শেষ পাঁচ ওয়ানডেতে ৬ ও শেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ১ উইকেট নেন আমির।
Comments