দুই মাইলফলকের সামনে দাঁড়ানো লায়ন জানালেন, ‘শেষ বহুদূরে’
নিউ সাউথ ওয়েলসে বেড়ে ওঠা ন্যাথান লায়ন ২০১০ সালেও ছিলেন অ্যাডিলেড ওভালের মাঠকর্মী। পরের গল্পটা রূপকথার মতো। একটি স্থানীয় টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় সাউথ অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন বেরির নজরে পড়েন তিনি। দ্রুত সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে পরের বছর অগাস্টে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়ে যায় তার।
বহু চেনা-অচেনা বাঁক ঘুরে সেই লায়ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক দশকের বেশি সময় পার করে দিয়েছেন। শেন ওয়ার্ন পরবর্তী অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের স্পিন আক্রমণের নেতাও হয়েছেন। তিনি এবারে দাঁড়িয়ে আছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের সামনে। শেষ মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না ঘটলে একটি কীর্তি নিশ্চিতভাবেই গড়া হয়ে যাবে তার। আরেকটি পূরণের জন্য তাকে দেখাতে হবে ডান হাতের কব্জির জাদু। যা করতে তিনি অতিশয় দক্ষ।
আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া-ভারতের ব্রিসবেন টেস্টটি হতে যাচ্ছে অফ স্পিনার লায়নের শততম ম্যাচ। আর সেখানে চারটি উইকেট শিকার করতে পারলেই তিনি ঢুকে পড়বেন ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে ৪০০ উইকেট শিকারিদের অভিজাত তালিকায়। অবধারিতভাবেই ভীষণ রোমাঞ্চিত এই তারকা জানালেন, তার এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার বাকি আছে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ টেস্ট খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মাত্র ১২ ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ন, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং ও বর্তমান অজি কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের নাম। পূর্বসূরি কিংবদন্তিদের সঙ্গী হতে যাওয়া নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে লায়ন বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যে ১২ জন ১০০ বা এর চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে, আমি যখন তাদের দিকে তাকাই, আমি দেখি যে, তারা সবাই খাটি কিংবদন্তি। কেবল অস্ট্রেলিয়ার হয়েই নয়, অন্য দেশের হয়েও যারা (১০০ টেস্ট) খেলেছে, তাদের পাশে নিজেকে দেখে সামনের প্রতিটি দিনেই আমি নিজের গায়ে চিমটি কাটব।’
‘এটা সত্যিই অসাধারণ। অতীতেও আমি চেষ্টা করেছি খুব বেশি সামনে না তাকাতে। কিন্তু এটা নিয়ে আমি বেশ রোমাঞ্চিত… অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১০০ টেস্ট খেলতে পারার ভাবনাটাও ভীষণ সম্মানের।’
প্রথাগত অফ স্পিনে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা লায়নের চেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট আছে কেবল দুজন অস্ট্রেলিয়ানের। তারা হলেন লেগ স্পিনার ওয়ার্ন (৭০৮) ও পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা (৫৬৩)।
চলতি সিরিজে অবশ্য সেরা ছন্দে এখনও পাওয়া যায়নি লায়নকে। আগের তিন ম্যাচে পেয়েছেন মোটে ৬ উইকেট। আর বয়সও পেরিয়েছে ৩৩। তবে লায়ন প্রকাশ করলেন উজ্জ্বল আগামীর প্রত্যাশা, ‘আমার জন্য শেষ দেখে ফেলাটা এখনও বহুদূরের পথ। যেকোনো সময়ের চেয়ে আমি অনেক বেশি ক্ষুধার্ত। আমি মাঠে নামতে চাই, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলতে চাই… অনেক অনেক টেস্ট সিরিজ জিততে চাই। আমি এখনও শিখছি। ১০০ টেস্ট ম্যাচ পেরিয়েও আমি শিখতে থাকব।’
গত সপ্তাহে সিডনি ডেইলি টেলিগ্রাফে একটি কলামে লায়নকে নিয়ে নিজের আকাশচুম্বী স্বপ্নের কথা জানান ওয়ার্ন। তার মতে, লায়ন যে গতিতে এগোচ্ছেন, তাতে চোট আঘাত না করলে অনায়াসে ৬০০ উইকেট পেয়ে যাবেন তিনি। এমনকি তার এবং মুত্তিয়া মুরালিধরনের ৮০০ টেস্ট উইকেটের রেকর্ডও পড়তে পারে হুমকির মুখে।
ওয়ার্ন লিখেন, ‘যদি সে নিজেকে চোটমুক্ত রাখতে পারে, তবে আমার ধারণা, সে সহজেই আরও পাঁচ বছর খেলা চালিয়ে যেতে পারবে। অর্থাৎ অন্তত ৫০টি টেস্ট। আর প্রতি ম্যাচে যদি চারটি করে উইকেট শিকার করতে থাকে, তবে আরও ২০০ উইকেট। ২৫০ উইকেটও হতে পারে, যদি বছরগুলো খুব ভালো কাটে।’
‘তার ৪০০ উইকেটের সঙ্গে সেগুলো যোগ করুন এবং তাহলে দেখবেন, ৩৮ বছর বয়সে সে ৬০০-৬৫০ উইকেটের ক্লাবে আছে। এরপরও যদি সে ভালোভাবে এগোতে থাকে, তাহলে আমার ও মুরালির জন্য সে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এমন কিছু দেখতে পেলে অসাধারণ হবে।’
Comments