সাহস করে সত্য কথা বলা পছন্দ করেন প্রধানমন্ত্রী: কাদের মির্জা

Abdul Qader Mirza.jpg
বসুরহাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরপার্বতী এলাকায় কর্মী সভায় বক্তব্য রাখেন আবদুল কাদের মির্জা। ছবি: স্টার

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, সাহস করে সত্য কথা বলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পছন্দ করেন। আমি নোয়াখালী-ফেনীর অপরাজনীতি, অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে কথা বলেছি, তা নিয়ে নেত্রীর কাছ থেকে আমার ওপর কোনো চাপ নেই।

‘কিছু কিছু নেতা এলোমেলো কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনার অর্জন যে কতো বড়, তা ভোটারদের দুয়ারে না গেলে বোঝা যাবে না। শেখ হাসিনার উন্নয়ন বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। এর একমাত্র দাবিদার শেখ হাসিনা’, বলেন তিনি।

আজ বুধবার সকালে বসুরহাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরপার্বতী এলাকায় কর্মী সভায় এসব কথা বলেন আবদুল কাদের মির্জা।

ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকবেন। আপনাদের কাজ হলো লাঠি হাতে নিয়ে কেন্দ্রের আশপাশে থাকা। কেউ ভোট কারচুপি কিংবা অনিয়ম করলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেবেন, বাকিটা আমি দেখব। ভোটের দিন লাঠির পাশাপাশি পুরনো জুতা নিয়ে যাবেন। পুরনো জুতা দিয়ে পেটালে ইজ্জত যাবে। কেন্দ্রে কোনো ভোটারকে আসতে বাধা দিলেই তাকে জুতা ও লাঠি দিয়ে পেটাবেন।’

ভোট দিয়ে ভোটারদের বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, ‘কেন্দ্রের আশপাশে অযথা ঘোরাফেরা করে ঝামেলা করবেন না।’

সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে তথাকথিত আওয়ামী লীগ নেতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একরাম নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার বিএনপির সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদের মাধ্যমে আমার প্রতিপক্ষ বিএনপির মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরীকে দুদিন আগে ৫০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। ভোটের দিন তাদের নেতা-কর্মীরা মারামারি করে ভোট বানচালের পায়তারা করবে। টাকা খেয়ে আমার ভোটে রঙ লাগানোর জন্য তৎপর একরাম চক্র।’

দলের নেতা-কর্মীদেরকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পর এখন দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সহ-সভাপতি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় এখনও বলছি- ১৬ জানুয়ারির নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে হবে। নিরপেক্ষভাবে আমি যদি এক ভোটও পাই তবে আমি বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে চা-মিষ্টি খেয়ে বাড়ি চলে যাব। কিন্তু কোনোপ্রকার অনিয়মের নির্বাচন হতে দেব না।’

তিনি বলেন, ‘আমি অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে কোনো আপোষ করব না। জীবনে আমিও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি করেছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন কী জন্য? ভাত ও ভোটের অধিকারের জন্য। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ভোটের অধিকার এখানও নিশ্চিত হয়নি। ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ চলছে।’

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আওয়ামী লীগে অপরাজনীতি বন্ধ করে দলকে সুসংগঠিত ও সংশোধন করে সুষ্ঠু রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার জন্যই এসব কথা বলেছি। না হয় আগামী নির্বাচনে দলকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। আমি যখন নোয়াখালী-ফেনীর আওয়ামী লীগের দুই নেতার অন্যায়, অনিয়ম, পুলিশ সদস্যদের চাকরি দিয়ে পাঁচ লাখ করে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি দিয়ে টাকা নেওয়া, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা বলি তখন আমাকে বলা হয় পাগল। আপনারাই বলেন- আমি কি পাগল?’

এক নারী ভোটারের উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা কাদের বলেন, ‘গতকাল বিকালে গণসংযোগ করতে এক বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক নারী ভোটার আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন- আপনি এখানে কেন এসেছেন? জবাবে আমি বললাম- ভোট চাইতে এসেছি। ওই নারী বললেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু তৈরি করে দিয়েছেন। যতোদিন জীবিত আছি নৌকায় ভোট দেব। এতেই বুঝা যায় শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কতো বেড়েছে।’

‘তবে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বাড়লেও নোয়াখালী ও ফেনীর দুই সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও নিজাম হাজারীর জনপ্রিয়তা কি বেড়েছে? এই দুই সংসদ সদস্য সরকারের সব বরাদ্দ কাবিখা, টিআর ও বিশেষ বরাদ্দ লুটপাট করে খেয়েছেন। কর্মীরা কিছুই পায়নি’, বলেন তিনি।

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘তারেক জিয়া বিশ্বচোর। শেখ হাসিনা সাহসী নেত্রী। খালেদা জিয়া ঘরে ঢুকে গেছেন। জামায়াতে ইসলামী আরও ৫০ বছর অন্য দলের কোলবালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ দেশে মানুষের ভোট, ভাত, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অধিকার একমাত্র শেখ হাসিনাই দিতে পারবেন। তার নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং ভোটাধিকার বাস্তবায়নের নির্বাচন হবে।’

পৌরসভা নির্বাচন শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা যাবেন আবদুল কাদের মির্জা। করোনা সতর্কতার কারণে যদি দেখা করতে না পারেন, তবে জাতীয় প্রেসক্লাবে যাবেন। সেখানে নোয়াখালীর একরাম চৌধুরী ও ফেনীর নিজাম হাজারীর অনিয়ম নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান।

তিনি একরাম চৌধুরীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘চাকরি দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করেন।’

ফেনীর নিজাম হাজারীকে চোরাচালানকারী আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এমন অপকর্ম নেই যে, তারা দুজন করেন না। এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ডা. মাহবুবুল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল গাফফার নিপু, ওমর ফারুক, নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মাকসুদা আক্তার হ্যাপি, মো. লিটন ও বাহার উদ্দিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন:

আমি কি স্বঘোষিত প্রার্থী, এতো অপমান: সেতুমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কাদের মির্জা

কেউ মারা গেলে ডিসি, এসপি ও রিটার্নিং কর্মকর্তার রেহাই নেই: কাদের মির্জা

আল্লাহর গজব পড়বে, আমি ঈমানদার: কাদের মির্জা

অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বলায় জাতীয়ভাবে আমাকে উন্মাদ বলা হয়: কাদের মির্জা

অস্ত্র তাক করে রেখেছে, আমাকে মেরে ফেলতে পারে: কাদের মির্জা

অনেক বিপদে আছি, চাপে আছি, রাতে আমার ঘুম হয় না: কাদের মির্জা

ডেইলি স্টারকে যা বললেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা

Comments

The Daily Star  | English
child victims of July uprising Bangladesh

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

11h ago