বিয়ের রেজিস্ট্রেশনে নারীর অংশগ্রহণে বাধা দূর করার দাবি ৯০ নাগরিকের

নারীদের নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে না পারার ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৯০ জন নাগরিক। তারা বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৯ বছরে দেশে নারী অধিকার আন্দোলনের যে ভিত তৈরি হয়েছে, এ নির্দেশনা সে অর্জনকে কুঠারাঘাত করেছে।

এজ এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, যেহেতু বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের কাজ একটি রাষ্ট্রীয় আইনি দায়িত্ব সেহেতু যেকোনো ধর্মের নারী বা পুরুষের এই অধিকার রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তারা বলেন, ওই নির্দেশনা একচ্ছত্র পুরুষাধিপত্যদুষ্ট এবং অনেকাংশেই পশ্চাৎপদ ধারণার অনুবর্তী।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন: নাসরিন খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, জাবি; সীমা দত্ত, সভাপতি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র; মাহা মির্জা, লেখক ও গবেষক; দিদারুল ভূঁইয়া, সদস্য, রাষ্ট্রচিন্তা; সুস্মিতা চক্রবর্তী , শিক্ষক, রাবি; ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্ট; শর্মি হোসেন, শিক্ষক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রমুখ।

আদালতের এই নির্দেশনাকে ‘আত্মঘাতী’ ও ‘সংবিধান সম্মত নয়’ উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান নারী, পুরুষসহ সকল জেন্ডার, সকল ধর্মের এবং সকল বর্ণের সম অধিকার ও মর্যাদার সুরক্ষা দিয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা পুরোপুরিই সেই সাংবিধানিক নীতিকে ভূলুণ্ঠিত করেছে।’

যুক্তি দিয়ে তারা বলেন, বিয়ে এবং রেজিস্ট্রেশন ভিন্ন বিষয়। মুসলমানদের বিয়ে হয় মুসলিম আইনে আর মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে একটি চুক্তি। রেজিস্ট্রেশন হয় রাষ্ট্রীয় আইনে। এই রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব পালন করার জন্য মসজিদে যাওয়া আবশ্যক নয়, এমন কি বিয়ে করার জন্যও নয়।

সরকারি কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তারা বলেন, ‘সংবিধানের ২৯ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না, কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। সরাসরি বিয়ে পড়ানো সরকারি কাজ না হলেও, বিয়ে পড়ানোর যে লাইসেন্স অর্জন করতে হয় তা রাষ্ট্রীয়ভাবেই অর্জন করতে হয়। সেই অর্জনে নারী পুরুষের লিঙ্গ কোনো বাধা নয়।’

তারা বলেন, ‘বিয়ের নিবন্ধন অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় একটি আইনগত কাজে নারীর মাসিক কোনো বাধা হতে পারে না। এই মাসিক নিয়েই আমাদের দেশের প্রতিটা নারী সরকারি-বেসরকারি কাজ করছে এবং মাসিক একটি নারীর স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় ঘটনা; যা নারীকে ভবিষ্যতে প্রজন্ম তৈরির জন্য সক্ষম করে তোলে। মাসিকের দোহাই দিয়ে এই নির্দেশনা প্রকৃতপক্ষেই নারীর দেশ এবং সমাজের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে।’

যে দেশে প্রধানমন্ত্রীর আসনে একজন নারী, স্পীকার হিসেবে একজন নারী দায়িত্ব পালন করছে, সেই দেশে মাসিকের জন্য একজন নারী কেন বিয়ের কাজীর দায়িত্ব পালন করতে পারবে না? এই প্রশ্ন রেখে তারা বিয়ের রেজিস্ট্রেশনে নারীর অংশগ্রহণে আইনগত বাধা দূর করতে হাইকোর্টের প্রতি দাবি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

18h ago