‘সেলিম আল দীনের চলা ফেরা ছিল সাধারণ, তিনি নিজে ছিলেন অসাধারণ’

বাংলা নাটকে নতুন ধারার প্রবর্তক নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। এছাড়াও, তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রাণপুরুষ।
selim al deen.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বাংলা নাটকে নতুন ধারার প্রবর্তক নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। এছাড়াও, তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রাণপুরুষ।

অনেক কালজয়ী নাটক লিখে গেছেন সেলিম আল দীন। মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটককে করেছেন সমৃদ্ধ। বিশেষ করে মঞ্চ নাটকে তার রয়েছে বিশাল অবদান।

‘বনপাংশুল’, ‘কিওনখোলা’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসী’, ‘নিমজ্জন’, ‘হাতহদাই’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’সহ আরও অসংখ্য নাটক লিখে তিনি বাংলা নাটকে নতুন ধারা সৃষ্টি করে গেছেন।

একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মুনির চৌধুরী  সম্মাননা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী  বরেণ্য নাট্যকার সেলিম আল দীনের প্রয়াণ দিবস আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি)।

নাট্যাচার্যের প্রয়াণ দিবসে তাকে স্মরণ করে দ্য ডেইলি স্টার'র সঙ্গে কথা বলেছেন স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও নন্দিত অভিনেতা আফজাল হোসেন।

নাসিরউদ্দিন ইউসুফ: বাংলা নাটকের নতুন ধারার প্রবর্তক সেলিম আল দীনের আজ ১৩তম প্রয়ান দিবস। আমি মনে করি তার প্রয়াণের মধ্যে দিয়ে বাংলা নাটক ও আমাদের শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই ক্ষতি সহজে কাটিয়ে উঠবার নয়।

সেলিম আল দীন যেভাবে শিল্প-সাহিত্যের কথা বলেছেন আমরা তার মতো করে বলতে পারিনি। এখানেই তিনি ব্যতিক্রম এবং তা উল্লেখ করার মতো।

সেলিম আল দীনের সময়ে প্যারালাল শিল্পচর্চার হয়েছে, যা এখন নেই।

যখন আমি গ্রামে যাই, দৃশ্যমান বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস আশ্রিত কবিগান, যাত্রাপালা দেখতে পাই। যদিও এখন তা কমে গেছে। গ্রাম থিয়েটারের যাত্রা সেলিমের কারণে অনেকদূর এগিয়ে ছিল।

যে শিল্প শহরে তৈরি হচ্ছে পশ্চিমের ঢংয়ে তা তো আমাদের শিল্প না। সেলিম এখানেই আলাদা ছিলেন। নিজের শেকড় থেকে তিনি কথা বলেছেন।

সেলিম আল দীন বার বার বলেছেন— নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে থেকে আধুনিককালের যাত্রা হোক। তা আজও হয়নি। তার প্রয়াণের মধ্যে দিয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আমাদের বাংলা নাটকের ও আমাদের শিল্পচর্চার।

সেলিম আল দীন আমাদের পথ দেখিয়েছেন, কিন্তু পথটা শেষ করতে পারেননি। তা না পারার কারণ ছিল তার স্বল্প আয়ু। বড় অসময়ে চলে গেছেন তিনি।

তার দেখানো পথ সুন্দর করতে চাইলে তাকে জানতে হবে, তার রচনা পড়তে হবে। তাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

তার দেখানো পথে আমরা সংস্কৃতির লড়াই শুরু করতে পারি।

সেলিম আল দীনকে আমরা একদিন অতিক্রম করে যাব— এই প্রত্যাশা করতে পারি। যদি কেউ অতিক্রম করতে পারে সেটিই হবে  সেলিমের জয়। তাহলে তাকে আরও বেশি করে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

আফজাল হোসেন: সেলিম আল দীনের এর মতো অসাধারণ মানুষ আমি আর দেখিনি। তাকে যারা চিনতেন, জানতেন, তার চলাফেরা, তার সবকিছুতে সাধারণ ভাব ছিল। কিন্তু মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। তার সৃষ্টি ছিল অসাধারণ।

তার কাজগুলো অনেক উঁচুমানের। বিশাল সৃষ্টির ভাণ্ডার তার। তার কাজ মানুষের ভাবনার জগতকে জাগিয়ে তুলবে। এখনো জাগিয়ে তুলছে।

তার বড় বড় লেখায় বহু যুগ ধরে অসাধরণ কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে। এ কারণেই আমি বলেছি— তার মতো অসাধারণ মানুষ দেখিনি।

‘সংবাদ কার্টুন’ নাটকটির কথা ধরা যাক। এটি ১৯৭৫ সালে মঞ্চে আসে। এই নাটকের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম।। এটি একেবারেই নতুন ধারার নাটক। বাংলাদেশের মঞ্চে এর মাধ্যমে একটি নতুন ধারার নাটক আসে। এই ঢংয়ের নাটক আগে কখনো দর্শকরা দেখেননি।

এরপর বলব ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ নাটকটির কথা। একেবারেই জটিল মনস্তত্বের নাটক। মানুষ এই নাটকটিও সাদরে গ্রহণ করেছেন। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সব সময় ছিল। এই নাটকের গল্পও নতুন ধরনের।

ফলে ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ নাটকটিও মানুষের ভাবনার জগতকে স্পর্শ করতে পেরেছিল।

তার ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’ খুবই আধুনিক একটি নাটক। বিস্ময় জাগানিয়া একটি নাটক। একজন মানুষ সব খেয়ে ফেলছে। কী চমৎকার লেখনি। এই নাটকের মধ্যে দিয়েই মিউজিক্যাল কনসেপ্টটি আমাদের মঞ্চ নাটকে ওঠে আসে।

সেলিম আল দীন সব সময় নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন তার সৃাষ্ট দিয়ে। কোনো একটি লেখার সঙ্গে অপরটির মিল নেই। সব কাজে রয়েছে ভিন্নতা।

একটি করে নাটক মঞ্চে আসে আর তার জন্য দর্শকদের মধ্যে কী বিপুল সাড়া! প্রত্যেকটি নাটকের শো হাউজফুল হতো। দীর্ঘদিন নাটকগুলো মঞ্চায়িত হয়েছে।

নতুনের খোঁজে সেলিম আল দীন লিখেছিলেন ‘শকুন্তলা’। শকুন্তলা তো সাধারণ মানুষ নয়। তাকে তিনি আবিস্কার করলেন নতুনভাবে। একটি মিথকে ভাঙা হলো নাটকটির মধ্যে দিয়ে। নতুন ধারার মধ্য দিয়ে তাকে হাজির করা হলো। সেলিম আল দীনের অসাধারণত্ব এখানেই।

তার ‘কীওনখোলা’ বাংলা নাটকে যোগ করেছে নতুন ইতিহাস। আবার নতুনত্বও।

আসলে কখনো তিনি থেমে থাকেননি। যখনই যেরকম ভাবনায় যা লিখেছেন, তােই দর্শকদের মধ্যে ভীষণ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

আমি আবারও বলেছি— তার মতো অসাধারণ মানুষ আর দেখিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Advocate Tajul Islam made ICT chief prosecutor

Supreme Court lawyer Md Tajul Islam, joint convener of Amar Bangladesh Party (AB Party), has been appointed as the chief prosecutor of the International Crimes Tribunal

Now