একাডেমিক এক্সপেরিয়েন্স প্রজেক্ট

আমিও কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশ?

‘কান্ট্রি রোডস, টেক মি হোম, টু দ্য প্লেস আই বিলং’; পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় নিজের বাড়ি ফেরার তাগাদা অনুভব করে গানটি করেছিলেন জন ডেনভার। একইভাবে, শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাড়ির মতোই ভাবতে চায়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত একাডেমিক এক্সপেরিয়েন্স প্রজেক্টের সাম্প্রতিক এক জরিপে এমনটিই উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। ছবি: অর্কিড চাকমা

‘কান্ট্রি রোডস, টেক মি হোম, টু দ্য প্লেস আই বিলং’;

পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় নিজের বাড়ি ফেরার তাগাদা অনুভব করে গানটি করেছিলেন জন ডেনভার। একইভাবে, শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাড়ির মতোই ভাবতে চায়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত একাডেমিক এক্সপেরিয়েন্স প্রজেক্টের সাম্প্রতিক এক জরিপে এমনটিই উঠে এসেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়মিতভাবে উপেক্ষা করে গেছেন প্রশাসকরা। এর একটি হলো ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ এবং অপরটি ‘সামাজিক সংহতিকরণ’। এই দুটি বিষয়ের কারণেই একজন শিক্ষার্থী অনুভব করতে পারেন যে, তিনি এখানে নিরাপদে থাকবেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সামাজিক কাঠামোতে তিনিও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে অনুভবটি পাওয়া যায় নিজের বাড়িতে। কোনো কারণে শিক্ষার্থীদের এই অনুভূতিটি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দেখা হয় উপার্জনের উত্স হিসেবে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীতে অবস্থিত। বাকিগুলো চট্টগ্রাম, সিলেট বা খুলনার মতো বড় শহরে অবস্থিত। এর অর্থ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শহরগুলোতে, বিশেষত ঢাকায় আসতে হয়। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শহুরে জীবনে অভ্যস্ত নন এবং অনেকে প্রথমবারের মতো তাদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে জীবনযাপন করছেন। তাদের সন্তোষজনক একাডেমিক অভিজ্ঞতার জন্য, তারা যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের নিরাপদ বোধ করে তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের জন্য খুবই জরুরি।

শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজের বাড়ির মতো মনে করাতে নিম্নোক্ত কাজগুলো করা প্রয়োজন বলে মনে করে একাডেমিক এক্সপেরিয়েন্স প্রজেক্ট।

আবাসন

যেসব শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা প্রয়োজন তাদের জন্য এই সুবিধা নিশ্চিত করা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত। এই সুবিধা হতে হবে সুনিয়ন্ত্রিত। আবাসনে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। এই আবাসন সুবিধাগুলোই আক্ষরিক অর্থে তাদের শিক্ষা জীবনে ‘বাড়ি’ হয়ে থাকবে। তাই শিক্ষা জীবনে তাদের নিরাপদ বোধ করাতে ভালো আবাসন ব্যবস্থার বিকল্প নেই বলে উঠে এসেছে জরিপে।

সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি প্রায়শই উত্তপ্ত ও হিংস্র হয়ে উঠে। বুয়েটের আবরার হত্যার ঘটনাটি শিক্ষার্থীদের ‘শৃঙ্খলা’ বজায় না রাখার অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত কি না তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেচনার বিষয়। তবে, এর কারণে সহিংসতা যেন না হয় এবং অন্যায়কারীদের দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। যাতে করে প্রতিষ্ঠানে ‘নিরাপদ’ পরিবেশ বজায় থাকে।

কাউন্সিলর

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক কাউন্সিলর এবং মনোবিজ্ঞানী থাকা উচিত, যাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের আলাপচারিতা কঠোর নিয়মের মাধ্যমে গোপনীয় রাখা উচিত। এতে করে তারা কাউন্সিলরদের কাছে যেতে এবং নিজেদের সব ধরনের সমস্যা খুলে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বাংলাদেশে উপেক্ষিত। এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো বলতে বিব্রত বোধ না করেন বা ভয় না পান। এ জন্য বড় আকারের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবর্তন প্রয়োজন। তবে, প্রক্রিয়াটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে শুরু করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন মনোরোগবিদ নিয়োগ দেওয়া উচিত, যারা শিক্ষার্থীদের উচ্চতর পড়াশুনার চাপ লাঘবে সহায়তা করতে পারবেন। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংহতি বাড়বে।

মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম

দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনো এই প্রোগ্রাম বিস্তৃতি পায়নি। এ প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিটি নতুন শিক্ষার্থীর জন্য একজন সিনিয়র পরামর্শদাতা নিযুক্ত করা যেতে পারে। যিনি নিজের অভিজ্ঞতা লব্ধ পরামর্শ দিয়ে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে সহায়তা করবেন।

শিক্ষক

শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা বহুমুখী এবং এর তাত্পর্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের নিরাপদ মনে করেন তা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের সক্রিয়ভাবে জড়িত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের উচিত জ্ঞানের সহ-স্রষ্টা হিসেবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা এবং শিক্ষার্থীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে নতুন ধারণা নিয়ে তাদের কাছে যেতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি নিজেদের অভাব-অভিযোগগুলো শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষকদের কাছে মন খুলে বলতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিতের চেষ্টা করা উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ। এখানে প্রস্তাবিত ব্যবস্থাগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের নিরাপদ বোধ করতে এবং নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশ হিসেবে ভাবতে সহায়তা করবে। তারা পাবেন নিজেদের বাড়িতে থাকার অনুভূতি। এটা হয়তো শিক্ষার্থীদের আগামী বিশ্বে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আরও ভালোভাবে তৈরি করবে।

 

ইরফান আহনাফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ করছেন। ড. আন্দালিব পেনসিলভেনিয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ইমেরিটাস এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অনুষদের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এই নিবন্ধটি তৈরি করেন এবং অপ-এডের জন্য উপস্থাপন করেন ড. আন্দালিব। অপ-এডগুলো লেখা হয়েছে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ওপর আলোকপাতের মাধ্যমে একে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে। ‘অ্যাকাডেমিক এক্সপেরিয়েন্স প্রকল্প’তে অবদান রাখতে ইচ্ছুক যে কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ড. আন্দালিবের সঙ্গে [email protected] মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন।

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের থেকে সবচেয়ে ভালোটা যেভাবে পেতে পারি

পড়াশোনায় আনন্দ ফেরাতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রামগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago