রাজশাহীর আড়ানীতে আবারও নির্বাচনি সহিংসতা, আহত ২
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর এলাকায় আবারও নির্বাচনি সহিংসতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দুই সমর্থক আহত হয়েছেন। এরা হলেন— আড়ানী পৌর এলাকার ৪ নম্বর নূরনগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান (৪৫) ও তার ভাগ্নে আরিফ হোসেন (৩০)।
আজ শুক্রবার দুপুরে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ‘আরিফ হোসেনকে আশঙ্কাজনক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। বজলুর ও আরিফ দুজনই আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদুজ্জামানের সমর্থক।’
হাসপাতালে বজলুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গতকাল রাত ১০টার দিকে নূরনগর এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান পৌর মেয়র মুক্তার আলীর ছেলে রাজু আহমেদ ও তার সমর্থককরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সে সময় তারা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামানের কাছ থেকে কেন্দ্র খরচের টাকা নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন।
তিনি বলেন, ‘নূরনগর রাস্তার মোড়ে যেতেই মুখোশ পরা আট থেকে ১০ জন আমাদের পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল ও ড্যাগার দিয়ে কোপাতে শুরু করে।’
হামলাকারীরা বজলুরের বুকে, পিঠে ও দুপায়ে কোপ দিয়ে আহত করেন এবং ড্যাগার আরিফের পেট চিরে দেন। এক পর্যায়ে তাদের মৃত ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যান হামলাকারীরা। আমাদের হত্যার জন্যই এই আক্রমণ হয়েছে— বলেন বজলুর রহমান।
হাসপাতালে আরিফের মামাতো বোন আঁখি খাতুন বলেন, চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন যে, তারা আরিফের অপারেশন করেছেন এবং ২৪ ঘণ্টা পার না হলে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যাবে না।
হামলার পরে রাতেই শহীদুজ্জামানের সমর্থকরা মুক্তার আলীর নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর করেন। সে সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নির্বাচনে আড়ানী পৌরসভার বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় আগে থেকেই সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বুধবার রাত ৯টার দিকে আড়ানী বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শহীদুজ্জামানের পথসভা পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তার আলীর কয়েকজন সমর্থককে শহীদুজ্জামানের সমর্থকরা ধাওয়া করেন।
কিছু পরেই মুক্তারের সমর্থকরা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শহীদুজ্জামানের পথসভায় ধারালো অস্ত্র হাতে হামলা করেন। তারা শহীদুজ্জামানের নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। হামলাকারীরা সে সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা হামলার সময় গুলির শব্দও শুনেছেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন।
হামলাকারীরা আড়ানী বাজারের অন্তত ৩০টি দোকান ভাঙচুর করেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সে সময় প্রাণ ভয়ে বাজার ছেড়ে গিয়েছিলেন। গতকাল সারাদিন আড়ানীতে কোনো বাজার বসেনি। কিছু সময় পরপর বাজারের দুই পাশে বিরোধী দুই পক্ষের সমর্থকদের মহড়া চলছিল। সেখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল।
বিকেলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আড়ানীতে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছেন। কিন্তু সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এরপর রাতেই বজলুর রহমান ও আরিফ আহত হন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্রিয়ার আলম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘১২ বছর ধরে আড়ানীতে সকলের প্রচেষ্টায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। একটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেই শান্তি বিনষ্ট করা জনগণ এবং আমি মেনে নেব না। নির্বাচন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে। সকলের সহযোগিতার আহ্বান করছি। কারও অসহযোগিতার আভাস পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি প্রশাসন গ্রহণ করেছে।’
Comments