মহড়া ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ছাড়াই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা

অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কিংবা কোনো ধরনের মহড়া ছাড়াই আগামী মাস থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভ্যাকসিনের জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষা এবং মহড়া দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: রয়টার্স

অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কিংবা কোনো ধরনের মহড়া ছাড়াই আগামী মাস থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভ্যাকসিনের জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষা এবং মহড়া দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মহড়া বা প্র্যাকটিস রান হচ্ছে এমন একটি পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সম্ভাব্য সমস্যাগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বের করা সম্ভব হয়। এই প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন বিতরণের প্রতিটি ধাপই সম্পন্ন করা হয়। যেকোনো ধরনের সমস্যা সম্পর্কে ধারণা পেতে সর্বসাধারণকে ভ্যাকসিন দেওয়ার আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মহড়ায় সব ধরনের সম্ভাব্য সমস্যা প্রকাশ পায় এবং সমাধানের সুযোগ পাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়া ভ্যাকসিন ডোজের সম্ভাব্য অপচয় কমাতে সহায়তা করে।

তারা আরও জানান, ভ্যাকসিনের কোনো বিরূপ প্রভাব আছে কি না, তা জানার জন্য হলেও এই মহড়া দরকার।

অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে কারো শরীরে কোভিড-১৯’র অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা জানা সম্ভব। এতে করে ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ডোজগুলো আগে কাদের মাঝে বিতরণ করতে হবে, তা নির্ধারণ করা সহজ হবে।

জাতীয় টিকাদান টাস্কফোর্সের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলেন, তারা ভ্যাকসিনগুলো সবার মাঝে বিতরণ শুরু করার আগে কয়েকটি কেন্দ্রে প্রাথমিক পরীক্ষা করবেন।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি এ মাসের শেষে বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী মাসের প্রথম দিকেই এই ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু হওয়ার কথা। সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড অর্ডার করেছে। এ ছাড়াও, কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় আরও ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৫ জন।

গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাত হাজার ৮৬২ জন। মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৪৯ শতাংশে।

যোগাযোগ করা হলে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘আমরা যদি মহড়া দিতে পারতাম তাহলে ভালো হতো। তবে, আমরা পাইলটিং করব। সাধারণ মানুষকে দেওয়ার আগে নার্স ও স্বেচ্ছাসেবীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এতে করে আমরা কিছুটা হলেও বুঝতে পারব যে, কী ধরনের সমস্যা হতে পারে।’

পাইলট পরীক্ষায় কতজন অংশ নেবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংখ্যাটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে, এই প্রক্রিয়ায় তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যারা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে চাইবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, তিনটি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা হতে পারে।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করার আগে প্রায় এক হাজার ৯০০ কেন্দ্রে মহড়া চালানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে দেশটির ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ২০ ভাগের মাঝে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে ভারত।

অন্যান্য যেসব দেশ ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করেছে, তারাও প্রথম মহড়া চালিয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘মহড়া খুব জরুরি ছিল। এই মহড়ার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা যায় এবং সমাধান পাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে উপজেলা, জেলা ও শহর পর্যায়ের অন্তত ২০০ কেন্দ্রে মহড়া চালাতে হবে। তা না হলে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালানোর সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পতে পারে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তারা কোনো অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করবেন না। অথচ, ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করব না। এটি করা থাকলে আরও ভালো হতো। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি বাধ্যতামূলক করেনি।’

সম্প্রতি একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে লক্ষণবিহীন করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর,বি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের অধিবাসীদের মধ্যে নয় শতাংশ ইতোমধ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশের কোনো লক্ষণ ছিল না।

সাবেক বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে অনেক লক্ষণবিহীন করোনা রোগী রয়েছেন এবং অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে কাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা শনাক্ত করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তাদের এখন ভ্যাকসিন দরকার নেই। আমরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে, দেশে সঠিক কিটের সংকট রয়েছে।’

একই কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা সম্ভব হলে অনেক মানুষকে দুই ডোজের বদলে এক ডোজ ভ্যাকসিন দিলেই হয়ে যেত।’

‘অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, ওই ব্যক্তির ভ্যাকসিন লাগবে কি না। পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি যে, তার শরীরে কতটা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে তার দুই ডোজ ভ্যাকসিন দরকার নাকি এক ডোজ হলেই যথেষ্ট হবে’, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘শরীরে অ্যান্টিবডি কতক্ষণ টিকে থাকে, তা পরীক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা দরকার।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago