মালখানা, না আবর্জনার স্তূপ!

Maalkhanas-1.jpg
ছবি: স্টার

প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল, আবর্জনার স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার স্টোররুমে (যা মালখানা নামে বহুল প্রচলিত) এভাবেই পড়ে ছিল দলিল-দস্তাবেজ, আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, জীর্ণ পোশাক ও জুতা, মানুষের হাড়গোড় এবং মাদকদ্রব্য।

এগুলো থানায় দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের অংশ। রুমটি বেশিরভাগ সময় আবদ্ধ থাকায় সেখানে উৎকট গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে এবং পোকামাকড়ের ছড়াছড়ি দেখা গেছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য আমাদের সক্ষমতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে, যার কারণে এসব আলামত নষ্টের ঝুঁকিতে আছে।’

এসব প্রমাণাদি সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি।

এটি অত্যন্ত উচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে থাকা একটি পুলিশ মালখানার চিত্র, যেখানে বছরের পর বছর ধরে মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণাদি জঞ্জালের স্তূপের মতো করে ফেলে রাখা হচ্ছে।

বিশেষ করে ছোট পুরনো ভবন অথবা ভাড়া করা বাড়িতে থাকা থানাগুলোতে এ সমস্যা অত্যন্ত প্রকট, যেখানে প্রায় ২০ বছর ধরে নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে প্রমাণাদি রাখা হচ্ছে।

ছোট ছোট মালখানায় এতোসব জিনিসপত্রের সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে খোলা স্থান অর্থাৎ থানার ছাদ, অস্থায়ী টিন-শেড কাঠামো, করিডোর কিংবা সিঁড়ি ঘর, এমনকি জেনারেটর রুমে এগুলো রাখতে বাধ্য হচ্ছে পুলিশ।

গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর, ফরিদপুর এবং বাগেরহাটের অন্তত ৩৩টি থানা পরিদর্শন এবং ওসিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জোগাড় করেছে দ্য ডেইলি স্টার।

এই প্রতিবেদকদের ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এলাকা ও কুষ্টিয়ার দুটি মালখানার ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এ ছাড়াও, তারা খুলনা ও ডিএমপির আরও দুটি মালখানা কিছুক্ষণের জন্য প্রত্যক্ষ করতে পেরেছিলেন।

কুষ্টিয়া ও ঢাকার দুটি মালখানায় আগ্নেয়াস্ত্র, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, রঙিন টিভি, ডেক্সটপ মনিটর, ল্যাপটপ, কীবোর্ড, কাঠের ডাইনিং টেবিল, শোকেস, ট্রাউজার ও শার্ট, জাল মুদ্রা, মদের বোতল ও ফেনসিডিল, গাঁজার প্যাকেট, বালিশ, তোষক এবং সেলাই মেশিন জঞ্জালের মতো মেঝেতে ফেলে রাখতে দেখা গেছে। কেবল স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা তালাবদ্ধ বক্সে রাখা ছিল।

তবে ডিএমপির মালখানার অবস্থা তুলনামূলক ভালো। নতুন ভবনে থাকা সেই মালখানায় বেশিরভাগ প্রমাণাদির সঙ্গে প্রোপার্টি রেজিস্টার (পিআর) নম্বরযুক্ত ট্যাগ লাগানো রয়েছে। এই নম্বরটি রেজিস্টার বইতেও লিপিবদ্ধ থাকে, যাতে সহজে মালামাল খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিটি থানাতেই এ ধরনের স্টোররুম আছে, আদালত কর্তৃক মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে সব প্রমাণাদি রেজিস্ট্রি সহকারে সংরক্ষণ করা হয়।

বর্তমানে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে প্রায় ৩৭ লাখ মামলা বিচারাধীন আছে এবং দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। ফলে পুলিশ স্টোররুমে প্রমাণাদির স্তূপও বাড়ছে।

তবে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, থানায় ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রমাণ হারিয়ে যাওয়ার কারণে কোনো মামলার ফল পরিবর্তন হয়েছে অথবা কোনো আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি, এমন দৃষ্টান্তের কোনো রেকর্ড নেই।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে থানা ও নৌ-থানাসহ সারাদেশে ৬২২টি থানা রয়েছে এবং এর মধ্যে ৫০টি থানা আছে ডিএমপির অধীনে।

সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Evidence Preservation at Police Stations: It’s a mess in Maalkhanas

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

9h ago