লাকিংমে চাকমার মৃত্যু: ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন

ছবি: রাশেদ সুমন

লাকিংমে চাকমাকে অপহরণ, ধর্মান্তর, ও তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ জানিয়েছে পাঁচটি মানবাধিকার সংগঠন।

আজ শনিবার লাকিংমে স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, ব্লাস্ট, এএলআরডি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

এসময় লাকিংকে চাকমাকে নিয়ে সংঘটিত ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজিম তিথিল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি অপহৃত হয় লাকিংমে চাকমা। জন্মসনদ অনুযায়ী, অপহৃত হওয়ার দিনটিতে তার বয়স ছিল ১৪ বছর ১০ মাস।

তিথিল বলেন, আমাদের অনুসন্ধানে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, অপহরণের পর ৮ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত লাকিংমেকে আশপাশের গ্রামে রাখা হয়। ৯ জানুয়ারি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টেকনাফেরই শাহপরীর দ্বীপে। সেখানে জনৈক কালা মনুর বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল অন্তত দুদিন। এরপর গত ১১ জানুয়ারি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লায়। এরপর ২১ জানুয়ারি কুমিল্লার আদালতে লাকিংমেকে ধর্মান্তর এবং একটি কাজি অফিসে নিয়ে বিয়েতে বাধ্য করা হয়। টেকনাফের বাহারছড়া মাথাভাঙ্গা এলাকার ইয়াসিন, ইসা, আবুইয়াসহ আরও পাঁচজন লাকিংমেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। লালাঅং তার মেয়ে অপহরণের পর টেকনাফ থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। তখন কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় বরখাস্ত এবং বর্তমানে জেলবন্দি প্রদীপ কুমার দাশ।

পুলিশ এবিষয়ে মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন এই শিক্ষক।

তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে যাওয়া নাগরিক প্রতিনিধিদল তাদের পর্যবেক্ষণে আতাউল্লাহ এবং তার সহযোগীরা মারাত্মক পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছেন বলে চিহ্নিত করেছেন।

সেগুলো হলো- ১. অপহরণ, ২. ধর্মান্তরে বাধ্য করা, ৩. অপ্রাপ্ত বয়স্ককে বিয়ে করা, ৪. ধর্ষণ এবং ৫. হত্যা অথবা আত্মহত্যায় প্ররোচনা।

এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী লাকিংমে চাকমাকে জোরপূর্বক ধর্মান্তর, বিয়ে, যা ধর্ষণেরই নামান্তর। তাই নিয়মিত মামলা দায়ের করে অনতিবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, লাকিংমে আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করে জনসমক্ষে প্রকাশ করা, চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা লাকিংমে চাকমার পরিবারকে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, লাকিংমের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং লাকিংমের সন্তানকে আইনানুযায়ী রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নিয়ে শিশুটির যথাযথ ভরণ-পোষণের ব্যবস্থাসহ ৭ দফা দাবিও তুলে ধরেন ফারহা তানজিম তিথিল।

প্রদীপ প্রজ্জ্বালন আয়োজনে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কত লাকিংমেকে এ ধরনের নির্মমতার শিকার হতে হচ্ছে তার কোনো শেষ নেই।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রিনা রায় বলেন, গত এক বছরের ১৬২৭ জন মেয়ে শিশু এবং নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এত কিছুর পরেও আমরা বিচার ব্যবস্থায় এর কোনো প্রতিফলন দেখিনি। সমাজে আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই আমাদের চোখের সামনে এতগুলো বিষয় ঘটতে দেখছি।

তিনি আরো বলেন, ১৪ বছরের এক মেয়েকে বিয়ে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা ধর্ষণ ও জরবদস্তির সামিল। কাজেই আমরা খুব ক্ষুব্ধ হয়েই লাকিংমের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছি।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, লাকিংমে চাকমা নির্মম মৃত্যুর শিকার। এই প্রিয় রাষ্ট্রে কোনো নাগরিকের যেন এরকম পরিণতি না হয়। আমরা এই রাষ্ট্রকে আরো সংবেদনশীল ও আরো গণতান্ত্রিক হিসেবে দেখতে চাই।

তিনি বলেন, কেবল লাকিংমে নয়, সকল মানুষের জন্য  সুন্দর বাংলাদেশ আমাদেরকে বিনির্মাণ করতে হবে।

আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন আইনজীবী রফিক সিরাজী ও লাকিংমের আইনজীবি মহিউদ্দীন।

Comments

The Daily Star  | English
What’s in the new budget?

Budget to set 10 priorities

Govt puts inflation control, revenue reform, fiscal restraint at the heart of its economic plan

9h ago