বসনিয়ার জঙ্গলে শরণার্থীদের আহাজারি

‘দয়া করে আমাদের বাঁচান’

বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসার কাছে জঙ্গলের ভেতরে অসমতল ভূমিতে বরফের ওপর ছোট তাঁবু টানিয়ে সীমানা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন বাংলাদেশি। ১২ জানুয়ারি ২০২১। ছবি: রয়টার্স

বসনিয়ার তাপমাত্রা নেমেছে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। ছোট বাচ্চাসহ পুরো পরিবার নিয়ে পশ্চিম ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় থাকা শত শত অভিবাসী প্রত্যাশী ও শরণার্থীদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

এ মাসের শুরুর দিকে টানা কয়েকদিনের তুষারপাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিম বসনিয়ায় মারাত্মক শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিয়েছে।

বসনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার আবহাওয়াবিদরা তাদের নাগরিকদের এই শীতের মধ্যে বেশি সময় বাইরে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক চাপে বসনিয়ান কর্তৃপক্ষ আটকা পড়া কয়েক শতাধিক অভিবাসী প্রত্যাশীদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে এখনো কয়েক শ মানুষ অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছেন। তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা বা আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়নি।

ভেলিকা ক্লাদুসা শহরের কাছে একটি জঙ্গলের ভেতরে ছোট তাঁবুতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশি নাগরিক শাহীন। তিনি বলেন, ‘গত রাতে খুবই ঠান্ডা ছিল। আমরা খুবই কষ্ট পাচ্ছি। আমি সারারাত ঘুমাইনি।’

অবৈধভাবে ক্রোয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর আশায় শাহীনের মতো শত শত অভিবাসী প্রত্যাশীরা কয়েক মাস ধরে এই অঞ্চলে অবস্থান করছেন। বারবার দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেও ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত পুলিশের বাধার মুখে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

ভেলিকা ক্লাদুসার কাছে জঙ্গলের ভেতরে অসমতল ভূমিতে বরফের ওপর কয়েকটি ছোট তাঁবু টানিয়ে সেখানেই রয়েছেন এই অভিবাসী প্রত্যাশী ও শরণার্থীরা। সেখানে শৌচাগার বা বিদ্যুৎ সুবিধা নেই। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে অনেকেই আগুন জ্বালাচ্ছেন।

শাহীন এপির একজন প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখানে সুপেয় পানি নেই। এটা নিরাপদ না। আমাদের সবার স্বাস্থ্য অনেক বড় ঝুঁকিতে...দয়া করে আমাদের বাঁচান।’

আফগানিস্তানের ২০ বছর বয়সী সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী মোহাম্মদ খান। তিনি বিহাক শহরের কাছে একটি আবর্জনা-জর্জরিত পরিত্যক্ত কারখানায় আরও অনেক অভিবাসীদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি বলেন, ইউরোপে একটি ‘নিরাপদ’ ও ‘পরিষ্কার’ জীবন চান তারা।

সেখানে দেখা যায়, অভিবাসীরা কম্বল জড়িয়ে বা ছোট তাঁবুতে শুয়ে আছেন। জানালাহীন ভবনগুলো শীত থেকে তেমন কোনো সুরক্ষা দেয় না।

১৮ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী চার সন্তান নিয়ে আফগানিস্তানের এক দম্পতি ক্রোয়েশিয়ান সীমান্তের কাছে একটি গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়িতে অস্থায়ী আশ্রয় পেয়েছেন।

সীমানা পেরিয়ে দেশটিতে ঢোকার সুযোগের অপেক্ষায় থাকা এই পরিবারটি কাঠের জ্বালানি পুড়িয়ে রান্না করেন। রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতরে থাকা পুরানো আসবাবগুলো ব্যবহার করে দিন পার করছেন। এপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য তারা ৪০ বার চেষ্টা করেছেন। তবে প্রতিবারই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

পরিবারটির কর্তা মোস্তফা বলেন, বহুবার ব্যর্থ হয়েছেন তারা। মাঝে মাঝে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে অনেক কষ্টে বেঁচে আছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘এরা অনেক শক্ত, অনেক ধরনের খেলা।’

রয়টার্সের মতে, ইউরোপের ধনী দেশগুলোতে পৌঁছানোর জন্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা হাজার হাজার অভিবাসী প্রত্যাশীর জন্য ট্রানজিট রুটের অংশ হয়ে গেছে বসনিয়া। বসনিয়াতে প্রায় আট হাজার অভিবাসী রয়েছেন। বেশিরভাগই বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিম অংশে থাকেন। কারণ, এ দিকেই রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশিরভাগ বসনিয়ান বাসিন্দাদের বিক্ষোভের কারণে তারা অভিবাসীদের গ্রহণ করতে পারছেন না।

আরও পড়ুন: শীত-তুষারপাতে বসনিয়ার শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশিদের দুঃসহ জীবন

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

8h ago