‘গিনি পিগ হতে চাই না’

দিল্লি সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকৃতি
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

ভারতব্যাপী করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরুর প্রাক্কালে দিল্লির ছয়টি সরকারি হাসপাতালের ৭০ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী ভারতীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেক উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল হেরাল্ড এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, গত তিন সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্যকর্মী তথা চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও প্যারামেডিকেল স্টাফরা তাদের নাম জমা দিলেও ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে তারা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান।

সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সার্ভিসেস (এআইআইএমএস), রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল (আরএমএল), সফদার জং হাসপাতাল, লোকনায়ক হাসপাতাল ও গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

এআইআইএমএস, আরএমএল ও সফদার জং হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ এবং বাকি দুই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার ‘কোভিশিল্ড’ দেওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, এআইআইএমএস’র ১২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ১৫০ জনকে প্রথম তালিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু, গতকাল তাদের মধ্যে ৫০ জনেরও কম কর্মী ভ্যাকসিন নিতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন।

হাসপাতালটির ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী কয়েকজনের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাদের কারো ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অজুহাত হিসেবে কেউ বলেছেন যে তারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে গেছেন, আবার কেউ বলেছেন তারা দিল্লির বাইরে রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআইআইএমএস’র এক স্বাস্থ্যকর্মী সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘আমরা ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে নই। আমি সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে বলব। তবে যে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল এখনো শেষ হয়নি সেই ভ্যাকসিন নিতে আমি প্রস্তুত নই।’

‘আমাদের অধিকাংশই গিনি পিগ হতে চান না,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘এটি হচ্ছে ভ্যাকসিনের বৃহৎ ট্রায়াল। যদিও তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে তারপরও আমাদের অধিকাংশই আরও অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

লোকনায়ক হাসপাতালের মাত্র ৭৫ স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন নিতে রাজি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৮ জন চিকিৎসক এবং ১১ জন নার্স। কয়েকজনের বয়স ৫০ বছরের বেশি হওয়ায় তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তালিকার অধিকাংশ চিকিৎসক সিনিয়র রেসিডেন্ট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী।

হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. সুরেশ কুমার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ১০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

তালিকায় তার নাম আছে কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন, ‘হাসপাতালের চার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমার নাম তালিকায় আছে কি না আমি জানি না।... তালিকায় কার নাম রয়েছে তা ডিস্ট্রিক্ট সারভেলেন্স কর্মকর্তা বলতে পারবেন।’

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির জন্যে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ ডোজ ‘কোভিশিল্ড’ ও ২০ হাজার ডোজ ‘কোভ্যাক্সিন’ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আরএমএল হাসপাতালের ১০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা রয়েছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, সেখানকার চিকিৎসকসহ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন নিতে চান না বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভ্যাকসিন ট্রায়াল শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ট্রায়ালের ডাটা প্রকাশের অনুরোধ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফদার জং হাসপাতালের ৫০ শতাংশের কম স্টাফ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্যে নাম নিবন্ধন করেছেন। গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে সূত্র জানিয়েছে, সেখানেও অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ দেখাননি।

সংবাদমাধ্যমটিকে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেছেন, তারা ভ্যাকসিনের ফল সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রলালয়ের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অতিরিক্ত সচিব ডা. মনোহর আগনানি এক চিঠিতে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ১৮ বছরের ওপরে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া কথা বলেছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ভারত গতকাল থেকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। গতকাল প্রথম দিনে দেশটির প্রায় দুই লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:

প্রথম দিনে ভ্যাকসিন পেলেন প্রায় ২ লাখ ভারতীয়

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

2h ago