রোমাঞ্চকর ফাইনালে বার্সেলোনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বিলবাও

ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিট। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বার্সেলোনা নিচ্ছে উৎসবের প্রস্তুতি। কিন্তু আক্রমণে প্রাধান্য দেখিয়েও পিছিয়ে থাকা অ্যাথলেতিক বিলবাও হাল ছাড়েনি। সমতায় ফিরে শিরোপার লড়াই অতিরিক্ত সময়ে টেনে জয়সূচক গোলও আদায় করে নেয় তারা। বার্সাকে হারিয়ে ছয় বছর পর কোনো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ নিল মার্সেলিনো গার্সিয়ার দল।
রবিবার রাতে সেভিয়াতে স্প্যানিশ সুপার কাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে ৩-২ গোলে জেতে বিলবাও। এই প্রতিযোগিতায় এটি তাদের তৃতীয় শিরোপা। শেষবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১৫ সালে। সেবার দুই লেগের ফাইনালে বার্সেলোনাকেই ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল দলটি।
বরাবরের মতো বল দখলে আধিপত্য দেখায় কাতালানরা। জোড়া গোল করে দুবার তাদেরকে এগিয়ে দিয়েছিলেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। বিপরীতে, আগ্রাসী খেলা উপহার দেওয়া বিলবাও প্রথমার্ধে অস্কার দি মার্কোস ও দ্বিতীয়ার্ধে আসিয়ের ভিয়ালিবরের লক্ষ্যভেদে গোল শোধ করে দেয়। এরপর অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে ব্যবধান গড়ে দেন ইনাকি উইলিয়ামস। শেষদিকে বার্সার হতাশা বাড়িয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দোলাচল কাটিয়ে মাঠে নামলেও এদিন পুরো ছন্দে ছিলেন না আর্জেন্টাইন তারকা।

ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে ২৫তম মিনিটে। সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে এড়িয়ে ফাঁকায় চলে গিয়েছিলেন আরাউহো। কিন্তু মেসির ফ্রি-কিকে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটে গোলের প্রথম ভালো সুযোগ তৈরি করে বিলবাও। ডি-বক্সের ভেতর থেকে আন্দার কাপার জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন।
ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ায় বার্সা। ৩৭তম মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে শট নেন মেসি। তবে তা লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে দি মার্কোসের ক্রসে দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া রাউল গার্সিয়ার হেড পোস্টের অনেকটা ওপর দিয়ে ভলে যায়।

৪০তম মিনিটে গোল পেয়ে যায় রোনাল্ড কোমানের দল। জর্দি আলবার কাছ থেকে ফিরতি বল পেয়ে মেসির নেওয়া শট বাধা পায় বিলবাওয়ের রক্ষণে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তা পড়ে গ্রিজমানের সামনে। গড়ানো শটে জাল কাঁপান ফরাসি ফরোয়ার্ড। বার্সার উল্লাসের রেশ থাকতে থাকতেই অবশ্য সমতায় ফেরে বিলবাও। ৪২তম মিনিটে উইলিয়ামসের বুদ্ধিদীপ্ত পাসে প্রথম ছোঁয়ায় দারুণভাবে বল জালে পাঠান দি মার্কোস।
বিরতির পর ৫১তম মিনিটে দানি গার্সিয়া ৩০ গজ দূর থেকে শট নিলেও পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি টের স্টেগেনকে। দুই মিনিট পর মেসির ফ্রি-কিকে পরাস্ত হয়েছিলেন বিলবাও গোলরক্ষক উনাই সিমন। তবে বল পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৫৭তম মিনিটে রাউল নিশানা ভেদ করলেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। নয় মিনিট পর দি মার্কোসের ক্রস আরাউহো বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে পেয়ে যান উইলিয়ামস। তবে ভালো পজিশনে থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।

বার্সেলোনা ফের এগিয়ে যায় ৭৭তম মিনিটে। আলবার পাসে প্রতিপক্ষের রক্ষণদেয়াল ভেঙে আরেকটি গড়ানো শটে জাল কাঁপান বিশ্বকাপজয়ী গ্রিজমান। গোল হজমের পরপরই চারটি বদল আনেন মার্সেলিনো। সেই বদলিদেরই একজন ভিয়ালিবরে স্তব্ধ করে দেন বার্সাকে। ৯০তম মিনিটে ইকার মুনিয়াইনের ফ্রি-কিকে খুব কাছ থেকে টের স্টেগেনকে ফাঁকি দেন তিনি।
অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে চোখ ধাঁধানো গোলে বিলবাওকে ফাইনালে প্রথমবারের মতো লিড পাইয়ে দেন উইলিয়ামস। মুনিয়াইন ডি-বক্সের ভেতরে খুঁজে নেন তাকে। সামনে থাকা প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়কে দর্শক বানিয়ে বুলেট গতির শট নেন তিনি। বল দূরের পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে পৌঁছায়। টের স্টেগেনের কোনো সুযোগই ছিল তা শট রুখে দেওয়ার।

১০৫তম মিনিটে সব হিসাবনিকাশ শেষ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন উনাই নুনেজ। কিন্তু মুনিয়াইনের ক্রসে অবিশ্বাস্যভাবে পা স্পর্শ করাতে পারেননি তিনি। ছয় মিনিট পর উল্টো তার কারণেই আত্মঘাতী গোল খেতে বসেছিল বিলবাও। কিন্তু বল বাইরে চলে যাওয়ায় বেঁচে যায় বাস্ক অঞ্চলের ক্লাবটি।
১১২তম মিনিটে গ্রিজমান সুযোগ হাতছাড়া করার পরের মিনিটে তার পথেই ফের হাঁটেন নুনেজ। দুজনই ফাঁকায় থেকেও ব্যর্থ হন গোল করতে। আট মিনিট পর ভিএআরের সাহায্য নিয়ে লাল কার্ড দেখানো হয় মেসিকে। মাঝমাঠে ভিয়ালিবরে পথ আটকালে রেকর্ড ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা মেজাজ হারিয়ে তার মাথার পিছনে আঘাত করেন।
বার্সেলোনার জার্সিতে ৭৫৩তম ম্যাচে মেসির এটি প্রথম লাল কার্ড পাওয়ার ঘটনা। আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার সময় অবশ্য দুবার লাল কার্ড দেখেছেন ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। তার তিক্ত অভিজ্ঞতা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে খানিক বাদেই শিরোপা উদযাপনে মাতে বিলবাও।
Comments