গভীর সংকটে ইতালি: ঘরে-বাইরে মহামারি

ইতালির কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভালো না। আপাতত ভালোর কোনো লক্ষণ নেই। মৃত্যুর সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়িয়েছে। এখনো প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয় শ মানুষ মারা যাচ্ছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি আগের মতো গুরুত্ব না পাওয়ায় মহামারি নিয়ে হয়তো আলোচনাও এখন কম।
ইতালিতে করোনার সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন জায়গায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ইতালির কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভালো না। আপাতত ভালোর কোনো লক্ষণ নেই। মৃত্যুর সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়িয়েছে। এখনো প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয় শ মানুষ মারা যাচ্ছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি আগের মতো গুরুত্ব না পাওয়ায় মহামারি নিয়ে হয়তো আলোচনাও এখন কম।

সংক্রমণের ভয়াবহতা বুঝে বিভিন্ন এলাকায় লকডাউনের কড়াকড়ি নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ জনজীবন এখন অতিষ্ঠ। দেশের অর্থ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে খাবি খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। বহু মানুষের ঘরে খাবার নেই। স্থানীয় গণমাধ্যমে এই সংখ্যা বলা হয়েছে ৪০ লাখ। তারা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা থেকে দেওয়া খাবারের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।

সংকটের শুরুতে ইতালির সরকার যেমন আশ্বাস দিয়েছিল তা রাখতে পরেনি, পারছে না। সাধারণ মানুষের আয়ের প্রায় সব রাস্তা বন্ধ। সরকারের ঘোষণা অনুসারে চাকরিজীবীরা বেতনের ৮০ ভাগ পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে পাচ্ছে ৪০ ভাগের কাছাকাছি।

সরকার ব্যবসায়ীদের কিছু প্রণোদনা দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। চাকরিজীবীদের জন্যও নানা রকমের প্রণোদনার ঘোষণা থাকলেও অতীতে অধিকাংশই ভালো বেতনের এবং স্থায়ী চাকরি করার ফলে নিয়ম-কানুনের প্যাঁচে পড়ে ওইসব বোনাসের জন্য আবেদনই করতে পারছে না। এদের বড় একটা অংশই আবার অভিবাসী।

পরিস্থিতি সম্পর্কে যারা খোঁজ-খবর রখছেন তারা বলছেন, এই অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। মানুষ অভাবের তাড়নায় আইন ভাঙতে শুরু করবে। আর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হলে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজনৈতিক পাড়ার অস্থিরতা কমাতে হবে।

এই নাকাল অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর জুজেপ্পে কোনতে ব্যাপক চাপের মধ্যে আছেন। একদিকে দেশে মহামারি, অর্থনৈতিক সংকট, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, অন্যদিকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা। সরকার টিকিয়ে রাখতেই এখন তার ত্রাহি অবস্থা।

মহামারির প্রথমাবস্থায় সিনোর কোনতের কথায়, কাজে মানুষ আস্থা রেখেছিল। কিন্তু, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মোহভঙ্গ হতে থাকে। এর মধ্যে পত্রিকায় খবর আসে, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ৮০ হাজার ইউরো দিয়ে ব্যাগ কিনেছেন। এতে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছায়। সবাই বলতে শুরু করে, এই সরকার ‘কথার’ সরকার। এই সরকার ‘গদির’ সরকার।

কোভিড মহামারির মধ্যে প্রফেসর কোনতের কোয়ালিশন সরকারেও মহামারি লেগেছে। তার সরকার এখন সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি। সোমবার ভোট হবে। নিম্নকক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারলে মঙ্গলবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তর জন্য উচ্চকক্ষে যাবে এবং সেখানেই ফয়সালা হবে সরকার টিকবে কি টিকবে না।

ভয়াবহ কোভিড সংকটের মধ্যে কোনতে সরকারকে অনাস্থায় ফেলে দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেয় রেনসির দল ভিভা ইতালিয়া। ওই দলের দুজন মন্ত্রী কোয়ালিশন সরকার থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেন। ‘ভিভা ইতালিয়া’ সংসদে সরকার থেকে আস্থা তুলে নেয়।

সিনোর রেনসি বলেছেন, কোভিড মোকাবিলায় সরকার বারবার ভুল করছে। বহুবার বলেও সরকারকে ফেরানো যাচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী কোনতে বলেছেন, দেশের এই সংকটকালে কৃত্রিম রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা মানা যায় না।

বিরোধী দল লেগা নর্দের কড়া জাতীয়তাবাদী নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেয় সালভিনি বলেছেন, এই সরকার ইতালীয় নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার সরকার নয়। এই সরকার অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার সরকার। তিনি আস্থাহীন সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতি সেরজো মাত্তারেল্লার প্রতি আহ্বান জানান।

ধারণা করা হচ্ছে, সরকার ও ভিভা ইতালিয়ার মধ্যে মূলত অনাস্থা তৈরি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে। কারণ ইইউ থেকে পাওয়া ২২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো ফান্ড অনুমোদনের সময় রেনসির দল ভিভা ইতালিয়া উপস্থিত ছিল না।

মূলত সংকটের শুরু তখন থেকেই।

ইতালিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন কিছু নয়। গত ৩০ বছরে এ দেশে ক্ষমতায় ছিলেন ১৩ জন প্রধানমন্ত্রী এবং ২০টি সরকার। এ এক জটিল অঙ্ক। এ জন্যেই অনেকে মজা করে বলেন, ইতালি হচ্ছে ইউরোপের রাজনৈতিক ‘ড্রামা কুইন’।

বাংলাদেশের মতোই ইতালিতে অনেক রাজনৈতিক দল। তবে এখানে দ্বি-দলীয় শাসন গড়ে ওঠেনি। একক দলের ক্ষেত্রে তিন শতাংশ এবং জোটের ক্ষেত্রে মাত্র ১০ শতাংশ ভোট পেলেই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা যায়। ফলে ছোট বড় প্রায় সব দল সংসদে ভূমিকা রাখতে পারে। সংকটও ঘন ঘন তৈরি হয়।

অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা যায়, পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে যদি ভিভা ইতালিয়ার বনিবনা হয়ে যায়, তবে সোমবারের আস্থা ভোটে উৎরে যাবে প্রফেসর কোনতে সরকার।

আরও পড়ুন:

ইতালিতে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু

ইতালিতে দ্বিতীয় দফায় ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত

ভুয়া করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট: ইতালির পত্রিকার শিরোনামে বাংলাদেশ

পর্যটকশূন্য ভেনিসের ‘হাহাকার’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago