চলে গেলেন সিলেটের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজামউদ্দিন লস্কর

চলে গেলেন সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধাব্যক্তি নিজামউদ্দিন লস্কর। তিনি জেলায় সবার কাছে ‘ময়না ভাই’ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
Nizamuddin Laskar
সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধাব্যক্তি নিজামউদ্দিন লস্কর। ছবি: সংগৃহীত

চলে গেলেন সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধাব্যক্তি নিজামউদ্দিন লস্কর। তিনি জেলায় সবার কাছে ‘ময়না ভাই’ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাঁচ নম্বর সেক্টরের বালাট সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা একাধারে একজন লেখক, নাট্যাভিনেতা, নির্দেশক ও আলোকচিত্রী।

গত ৮ জানুয়ারি স্ট্রোক করে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল রোববার রাত ৯টা ১৫ মিনিটে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

আজ সোমবার সকালে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তার মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জোহর নামাজের পর হযরত শাহজালাল (র) এর মাজার প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে মাজার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

সিলেট নগরীর লামাবাজার এলাকার বিলপাড়ের পৈতৃক বাড়িতে ১৯৫২ সালের ৯ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন নিজামউদ্দিন লস্কর। আমৃত্যু তিনি এই বাড়িতেই ছিলেন।

মাত্র ১২ বছর বয়সে মঞ্চে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল তার। তার একক অভিনীত নাটক ‘চেয়ার’ এর জন্য তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিলেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ই মঞ্চনাটকের নির্দেশনা দেওয়া শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভূক্ত নাট্যশিল্পী হয়েছিলেন তিনি।

মুক্তিসংগ্রাম চলার সময়ে নিজামউদ্দিন লস্কর ছাত্রলীগের রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করে, নিজামউদ্দিন লস্কর সেই রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় একটি মঞ্চনাটক প্রদর্শনী করছিলেন।

মাঝরাতে গণহত্যার সংবাদ পেয়ে তিনি নাটক বন্ধ করে মঞ্চে ওঠে প্রকাশ্যে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতে তিনি চলে যান ভারতের মেঘালয়ে। সেখানে ইকো-ওয়ান ট্রেনিং ক্যাম্পের প্রথম ব্যাচে ট্রেনিং শেষে পাঁচ নম্বর সেক্টরের বালাট সাব-সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি।

১৯৭১ এর ১৬ আগস্ট সুনামগঞ্জের জয়কলসে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিজয় পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ক্রাচে ভর করেই চলতে হয়েছিল তাকে।

স্বাধীনতার পর তিনি শুরু করেছিলেন সাংস্কৃতিক সংগ্রাম।

বিজয়ের মাত্র ৪১ দিন পর তথা ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে মঞ্চনাটক ‘রক্তপলাশ’র নির্দেশনা ও মঞ্চায়ন করেছিলেন তিনি।

১৯৮৪ সালে সিলেটে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছিলেন নিজামউদ্দিন লস্কর। তিনি এই সংগঠনের প্রধান পরিচালক হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৯২ সালে তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (এসপিএস)। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তিনি তিনবার এ সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০০০ সালে তার রচনা ও নির্দেশনায় সিলেটের প্রবীণ ও নবীন নাট্যকর্মীদের নিয়ে ‘পাগলাগারদ’ নাটক সিলেট, মৌলভীবাজার ও ঢাকায় মঞ্চায়িত হয়েছিল।

বিভিন্ন নাট্যসংগঠনের কর্মীদের নিয়ে কর্মশালাভিত্তিক নাটক ‘ঝুঁকি’ মঞ্চায়িত হয়েছিল ২০১৪ সালে। একইভাবে গত সেপ্টেম্বরেও মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’।

মঞ্চ ছাড়াও চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছিলেন নিজামউদ্দিন লস্কর। এছাড়াও, তিনি শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন দীর্ঘদিন।

লেখক ও অনুবাদক হিসেবে তার কাজের মধ্যে রয়েছে ‘একাত্তরের রণাঙ্গণে’, ‘আই লাভড এ গার্ল’, ‘ডেথ অব এ ডিকটেটর’, ‘দ্য ম্যান হু সোল্ড হিজ ফেরারি’, ‘লিভ টু বি হান্ড্রেড অ্যান্ড এনজয় ইট’, ‘হৃদবদল’ ও ‘ইউরোপের পথে’।

Comments

The Daily Star  | English

Taka to trade more freely by next month

Bangladesh will introduce a crawling peg system by next month to make the exchange rate more flexible and improve the foreign currency reserves, a key prescription from the International Monetary Fund.

52m ago