কার্টুনিস্ট কিশোরের কারাবাসের ২৫৭তম দিন

‘রাষ্ট্র-সরকারকে এর দায় নিতে হবে’
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

কার্টুন এঁকে সরকারের সমালোচনা করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২৫৭ দিন যাবৎ কারাবন্দি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। এরই মধ্যে কিশোরের শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হলেও এখনো মেলেনি তার জামিন। কিশোরের পরিবার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ছয় বার তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হলেও তা নাকচ করেছেন আদালত।

কিশোরের বড় ভাই লেখক আহসান কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রথমে নিম্ন আদালতে তিন বার কিশোরের জামিন আবেদনের শুনানি হয়েছে। এরপর হাইকোর্টে হয়েছে একবার। এরপর আবার নিম্ন আদালতে একবার ও মহানগর দায়রা জজ আদালতে একবার। মোট ছয় বার শুনানি হয়েছে। কিন্তু, তার জামিন পাওয়া যায়নি। বর্তমানে আমরা ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়ার নেতৃত্বে হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আহসান কবির বলেন, ‘কিশোরের দুই কানে প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে। চোখের জ্যোতি অনেকটাই কমে এসেছে, ঠিকমতো দেখছে না। পায়ের গোড়ালিতে স্কিন-ডিজিস দেখা দিয়েছে। বেশকিছু দিন তিনি কাশেমপুরের মেডিকেলে ছিলেন। এখন আবার ছয় নম্বর ওয়ার্ডে আছেন।’

‘আমরা ন্যায্যবিচার চাই। আমিও আগেও বলেছি যে, কিশোর হচ্ছে সেই মানুষ যার কার্টুন দিয়ে প্রথম বাংলাদেশে মৌলবাদ ও জামায়াত-শিবির বিরোধী কার্টুন প্রদর্শনী হয়েছিল এবং কিশোরই সেটার আয়োজন করেছিল। শেখ রেহানা সম্পাদিত বিচিত্রায় তিনি কার্টুন এঁকেছেন। এরপরেও কিশোর কারাগারে। সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা অবিলম্বে কিশোরের মুক্তি চাই’, যোগ করেন তিনি।

আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় কার্টুনিস্ট কিশোর কারাগারে আছেন। এই মামলার কিছু আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি কারাগারে আছেন। এখানে জামিনের বিষয়টি এক রকম। আর মূল মামলার তদন্ত শেষ করে বিচার, সেটা ভিন্ন প্রক্রিয়া। জামিনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। যেকোনো স্টেপে আদালত যদি মনে করেন জামিন দেবেন, তাহলে দিতে পারেন। নিম্ন আদালতে জামিন হয়নি। আমরা আবার উচ্চ আদালতে চেষ্টা করব। সেখান থেকে ইতিবাচক ফল পাব বলেই আশা করছি।’

কারাবন্দি অবস্থাতেই সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘অ্যানুয়াল রবার্ট রাসেল কারেজ ইন কার্টুনিং অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন কিশোর। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও ইতোমধ্যে কিশোরের মুক্তি চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দীর্ঘদিন যাবৎ কার্টুনিস্ট কিশোরের কারাবন্দি থাকার বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যে আইনের মামলায় তিনি কারাগারে, সেই আইনটাই হয়েছে দুইটি লক্ষ্য নিয়ে। একটি হচ্ছে মানুষের অধিকার হরণ করা এবং বাস্তবে সেই হিসেবেই এটা ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা। মূলত এই দুইটি বিষয়ই খুব পরিষ্কার। এই আইনটির যে অপব্যবহার করা হচ্ছে, কিশোরের কারাবন্দি থাকা সেটারই একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে সহজে প্রতীয়মান হচ্ছে। একদিকে কিশোর তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে।’

‘যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের একজন নাগরিকের মতো আমিও আহ্বান জানাতে চাই যে, কিশোরের জীবনের অধিকার আছে, নাগরিক অধিকার আছে, আইনের শাসনের অধিকার আছে এবং এগুলোর প্রতি যাতে সরকার শ্রদ্ধাশীল হয়। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কার্টুনিস্ট কিশোরের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে নিউজ হিসেবে চলে এসেছে এবং আলোচিত হচ্ছে, সেটা তো একটা দিক। কিন্তু, তাকে তো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে এভাবে তো তাকে কারাবন্দি করে রাখা ও হয়রানি করা যায় না। এই যে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে, এর দায় তো রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কিশোরের প্রতি যা ঘটছে, তার দায় রাষ্ট্র-সরকারকে নিতে হবে।’

আরও পড়ুন:

কার্টুনিস্ট কিশোরকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের

কারাবন্দি কার্টুনিস্ট কিশোর পেলেন রবার্ট রাসেল কারেজ অ্যাওয়ার্ড

কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক গ্রেপ্তার

কিশোর ও মুশতাকের জামিন শুনানিতে অপরাগতা জানিয়েছেন ভার্চুয়াল আদালত

Comments

The Daily Star  | English

Liberation war a founding pillar of the state: Nahid Islam

Clarifies NCP's stance opposing religious extremism, secularist ideologies

23m ago