হোয়াইট হাউসে বাইডেনের আগমন: উত্তরসূরিকে স্বাগত জানাবে না ট্রাম্প দম্পতি
উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আগামী ২০ জানুয়ারি নাটকীয়ভাবে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। প্রথা অনুযায়ী, বিদায়ী প্রেসিডেন্টরা উত্তরসূরিকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানালেও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে স্বাগত জানাবেন না ট্রাম্প দম্পতি।
গতকাল সোমবার সিএনএনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির পরিবর্তে জো ও জিল বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাবেন হোয়াইট হাউসের চিফ উশার তিমোথি হারলেথ। ২০১৭ সালে তিমোথি হারলেথকে হোয়াইট হাউসে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, অভিষেকের পর নতুন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির কাছের কেউ এই পদে নিয়োগ পেতে পারেন।
অভিষেকের দিন বিকেলে আর্লিংটন ন্যাশনাল সেমেট্রিতে একটি আনুষ্ঠানিক পুষ্পস্তবক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন জো ও জিল বাইডেন। এতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, ওই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই বাইডেন দম্পতির মালপত্রের বেশিরভাগই হোয়াইট হাউসে পৌঁছে যাবে।
এদিকে, ইতোমধ্যেই মালপত্র গুছিয়ে নিয়েছেন ডোনাল্ড ও মেলানিয়া ট্রাম্প। সোমবার মুভিং ট্রাকগুলোকে ফ্লোরিডার পাম বিচের মার-এ-লেগোর ড্রাইভওয়েতে দেখা গেছে। আগামী ২০ জানুয়ারি সকালেই ফ্লোরিডার মার-এ-লেগো রিসোর্টের উদ্দেশে রওনা হবেন তারা।
ট্রাম্প দম্পতির বিদায়ের পরপরই গোটা হোয়াইট হাউসের সবগুলো রুম পরিষ্কার করা শুরু হবে। কোভিড-১৯ বা অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য কর্মীরা হোয়াইট হাউসের গালিচা, পর্দাসহ সবকিছু জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করবেন।
সূত্রের বরাতে সিএনএন জানায়, নতুন প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার আগেই সমস্ত আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে ভ্যাকুয়ামিং করা হবে। বেসবোর্ড, পর্দা, ঝাড়বাতি পরিষ্কার করা হবে। সবগুলো রুমের ধুলোবালি পরিষ্কার করা হবে।
জানা গেছে, বেডরুমগুলো পরিষ্কারের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে। আগত নতুন পরিবারের জন্য নতুন গদি, বিছানা থাকবে।
হোয়াইট হাউস সূত্রটি জানায়, বাইডেন দম্পতির বেডরুম সেট-আপের একটি অংশ ট্রাম্প দম্পতির চেয়ে আলাদা হবে।
ওয়েস্ট সিটিং হল সংলগ্ন বড় বেডরুম স্যুট যেটিতে সাধারণত প্রেসিডেন্ট ও তাদের স্ত্রীরা থাকেন, হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন বেশিরভাগ সময়ই সেটিতে একা থাকতেন মেলানিয়া ট্রাম্প। অন্যান্য প্রশাসনের সময় স্টাডি হিসেবে ব্যবহার হতো এমন রুম ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজস্ব বেডরুম। বেশিরভাগ সময়ই সেখানে আলাদা থাকতেন তিনি।
তবে, বাইডেন দম্পতির ক্ষেত্রে তারা দুজনই একই বেডরুম ভাগ করে নেবেন।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই ভোট জালিয়াতির দাবি করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার কথা জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন, যতই আঘাতপ্রাপ্ত হোক না কেন, ফার্স্ট লেডি ও প্রেসিডেন্টরা সবসময় তাদের কঠোর অনুভূতি ও অহংকারকে আলাদা করে রেখেছেন। তারা সবসময়ই হোয়াইট হাউসের রীতি অনুযায়ী পরেরজনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ওভাল অফিসের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের যে চিঠি দেওয়ার কথা, বাইডেনকে সেই চিঠিও দিতে চান না ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মেলানিয়া ট্রাম্পও এখনো পর্যন্ত নতুন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের সঙ্গে আলাপ করেননি। আশা ছিল যে, মেলানিয়া নিজে তার পূর্বসূরির কাছে যে আতিথেয়তা পেয়েছেন, একইরকমভাবে তিনি নতুন ফার্স্ট লেডিকে স্বাগত জানাবেন, তাকে নিয়ে হোয়াইট হাউস সফর করবেন।
এদিকে, কিছুটা হলেও আনুষ্ঠানিকতা ধরে রেখেছেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত বিদায়ী ও আগত প্রশাসনের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ।
বিষয়টি সম্পর্কে পরিচিত এক সূত্রে জানা গেছে, কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পেন্স। নতুন ভাইস প্রেসিডেন্টের পাশে থেকে সাহায্য করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তাদের মধ্যে কথোপকথনটি বেশ আন্তরিক ছিল বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে নতুন সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগ এমহফের সঙ্গে বিদায়ী সেকেন্ড লেডি ক্যারেন পেন্স আনুষ্ঠানিকভাবে আলাপ করেছেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে সিএনএন ক্যারেন পেন্সের অফিসে যোগাযোগ করেছে। তবে, এখনো পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
Comments