‘আমরা আশা হারাইনি, বিশ্বাসও হারাইনি’

মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাস থেকে পায়ে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেওয়া কয়েক হাজার অভিবাসন-প্রত্যাশীকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে গুয়েতেমালার সেনা ও পুলিশ সদস্যরা।
Migrant Caravan
গুয়েতেমালার ভাদো হন্দো এলাকায় দেশটির নিরাপত্তারক্ষীদের অভিযানের শিকার হন্ডুরাসের এক অভিবাসন-প্রত্যাশী। ১৮ জানুয়ারি ২০২১। ছবি: রয়টার্স

মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাস থেকে পায়ে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেওয়া কয়েক হাজার অভিবাসন-প্রত্যাশীকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে গুয়েতেমালার সেনা ও পুলিশ সদস্যরা।

আজ মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গুয়েতেমালার নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা অতিক্রম করে গত দুই দিন থেকে এগিয়ে যাওয়া অভিবাসন-প্রত্যাশীদের দেশটির সেনা ও পুলিশ সদস্যরা গতকাল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

নিরাপত্তারক্ষীদের অভিযান সম্পর্কে তৃতীয়লিঙ্গের ১৬ বছর বয়সী কায়লা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছে, ‘(তাদের অভিযানে) আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

হন্ডুরাস সম্পর্কে সে বলেছে, ‘আমি তৃতীয়লিঙ্গের হওয়ায় সেখানে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাই অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সে মেক্সিকো পর্যন্ত যাওয়ার চিন্তা করছে বলেও সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছে।

হন্ডুরাসের অভিবাসন-প্রত্যাশীরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত নভেম্বরে সামুদ্রিক ঝড়ে তারা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছেন। এছাড়াও, দেশটিতে রয়েছে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও সহিংসতা।

প্রতিবেশী গুয়েতেমালা ও মেক্সিকো হয়ে তারা অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয়ের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

ছবি: রয়টার্স

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত আট হাজার হন্ডুরান গত বৃহস্পতিবার সীমান্ত অতিক্রম করে গুয়েতেমালায় পৌঁছে ছিল। তাদের সঙ্গে প্রতিবেশী সালভাদরের আরও তিন শ অভিবাসন-প্রত্যাশী যোগ দিয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, অধিকাংশ অভিবাসন-প্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আশা করলেও কেউ কেউ মেক্সিকো পর্যন্ত যাওয়ার কথাও চিন্তা করছেন।

প্রথম দিকে, অভিবাসন-প্রত্যাশীদের কয়েকটি দল যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল। এরপর, তাদের কয়েকটি দলকে হন্ডুরাস সরকার আটকে দিয়েছিল। এবার, তাদেরকে আটকে দিয়েছে গুয়েতেমালার সরকার।

‘অভিবাসন আমাদের অধিকার’

গত রোববার হন্ডুরাসের দক্ষিণাঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে অভিবাসনের আশায় পায়ে হেঁটে রওনা দেওয়া ৩০ বছর বয়সী পোশাককর্মী লিসেথ সিরা গুয়েতেমালায় পৌঁছে ছিলেন গতকাল।

তিনি গুয়েতেমালার এল ফ্লোরিডো মহাসড়কের পাশে আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘সবকিছুই ঠিক ছিল। আশা করেছিলাম, আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। কিন্তু, তারা (নিরাপত্তারক্ষীরা) আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে।’

‘অভিবাসন আমাদের অধিকার,’ যোগ করেন তিনি।

গত মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পরপরই তার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দামও বেড়ে গেছে। কুলিয়ে ওঠতে পারছি না।’

পোশাককর্মী সিরা তার ৬, ১১ ও ১৬ বছরের সন্তানদের এক নিকটাত্মীয়ের কাছে রেখে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের এই পদযাত্রায় যোগ দিয়েছেন।

গুয়েতেমালায় নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে পড়ে তিনি এখন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

গুয়েতেমালার কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, অভিবাসন-প্রত্যাশীদের হুন্ডুরাসে ফেরত পাঠানোর বাস প্রস্তুত রাখা আছে।

অনেকেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। তবে ঠিক কতজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা উল্লেখ করেননি।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে প্রায় দেড় হাজার হন্ডুরানকে গুয়েতেমালা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরকে সীমান্ত এলাকা থেকেই বের করে দেওয়া হয়েছে।

সিরা আল জাজিরা’কে জানিয়েছেন, তিনি আবারও চেষ্টা করবেন উত্তরের উন্নত দেশটিতে যেতে। বলেছেন, ‘আমরা আশা হারাইনি। আমরা বিশ্বাসও হারাইনি।’

আরও পড়ুন:

বাধা উপেক্ষা করে যু্ক্তরাষ্ট্রের পথে হন্ডুরাসের অভিবাসন-প্রত্যাশীরা

পায়ে হেঁটে ৮ হাজার হন্ডুরান যুক্তরাষ্ট্রের পথে

Comments

The Daily Star  | English

Houses for homeless: A project destined to fall into ruin

At least a dozen homes built for the homeless and landless on a river island in Bogura’s Sariakandi upazila have been devoured by the Jamuna while dozens of others are under threat of being lost.

5h ago