জাদুকরী ব্যাপার, এই ভারত ভয়ডরহীন: গাভাস্কার
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের নাটকীয় ও রোমাঞ্চকর টেস্ট সিরিজ জয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখালেন দলটির সাবেক তারকা সুনীল গাভাস্কার। আজিঙ্কা রাহানের দলের ঐতিহাসিক অর্জনের পর অজি গণমাধ্যম চ্যানেল সেভেন ও ভারতীয় গণমাধ্যম সনি টেন থ্রির কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন সিরিজজুড়ে মাইক্রোফোন হাতে ধারাভাষ্য দেওয়া এই কিংবদন্তি। বললেন, তরুণ ভারতীয় দল যে ভয়ডরহীন মানসিকতা দেখিয়েছে, তা রীতিমতো জাদুকরী ব্যাপার।
মঙ্গলবার অজিদের দুর্গ ব্রিসবেনে ৩ উইকেটে জেতে ভারত। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলির অনুপস্থিতি ও এক ঝাঁক তারকা খেলোয়াড় চোটে ছিটকে যাওয়া সত্ত্বেও ভাঙাচোরা দল নিয়ে চার ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ তারা ধরে রাখে ২-১ ব্যবধানে।
শুবমান গিল, চেতেশ্বর পূজারা, রিশভ পান্তদের ব্যাটিং নৈপুণ্যে নতুন কীর্তি গড়ে সফরকারী ভারতীয়রা। দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতেই টেস্ট সিরিজ হারানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তারা। দলকে জেতাতে ১৩৮ বলে ৮৯ রান করে অপরাজিত থাকেন পান্ত। গিল করেন ১৪৬ বলে ৯১। পূজারার ব্যাট থেকে আসে ২১১ বলে ৫৬ রানের ভীষণ কার্যকর ইনিংস।
ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার সবশেষ হারটি ছিল ১৯৮৮ সালে। এরপর ৩২ বছর তারা গ্যাবায় ছিল অপরাজিত। এই মাঠে রান তাড়ার আগের রেকর্ডটিকেও বিশাল ব্যবধানে পেছনে ফেলেছেন রাহানেরা। ১৯৫১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৩৬ রান তুলে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচ শেষে গাভাস্কার যা বলেন
নাটকীয় জয় নিয়ে
অবশ্যই, এটা একটা জাদুকরী ব্যাপার। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ঐন্দ্রজালিক মুহূর্ত। তারা কেবল ম্যাচ বাঁচাতেই তৈরি ছিল না, তারা মাঠে গিয়ে গৌরবের সঙ্গে সফর শেষ করতে চেয়েছিল। তরুণ ভারত এটা করেছে। তরুণ ভারত পথ দেখিয়েছে। তরুণ ভারত দেখিয়েছে যে, তারা ভয় পায় না। কী দারুণ জয়! কী অসাধারণ জয়! শুরুটা হয়েছিল আজ (মঙ্গলবার) সকালে শুবমান গিলের দুর্দান্ত একটি ইনিংসের মাধ্যমে। এরপর মাঝের সেশনে অস্ট্রেলিয়ানরা যেন কোনো আক্রমণ চালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করে যুদ্ধের অভিজ্ঞ ঘোড়া চেতেশ্বর পূজারা। আর তারপর রিশভ পান্তকে আবারও পাঁচ নম্বরে পদোন্নতি দেয় রাহানে, যার এখন (টেস্ট অধিনায়ক) হিসেবে অপরাজিত থাকার রেকর্ড রয়েছে। এই সিরিজে তিনটি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে দুটিতে অধিনায়কত্ব করে সে জিতেছে। আর এর আগে দুবার ভারতকে সে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ওই দুটি টেস্ট ম্যাচও সে জিতেছে। (থাঙ্গারাসু) নটরাজনের অভিষেক হয়েছে। কী অসাধারণ অভিষেক।... কী দারুণ একটা সফর, কী দারুণ একটা জয়।
পূজারার ইনিংসের গুরুত্ব নিয়ে
দেখুন, আমি তার সম্পর্কে যা কিছু বলব, তা খুবই কম হবে। সে নিজের শরীরকে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য, ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য উৎসর্গ করেছে। সে গ্লাভসে, শরীরে, হেলমেটে আঘাত পেয়েছে। কিন্তু সে ভয় পায়নি। তার উপস্থিতি অন্য প্রান্তে থাকা তরুণ খেলোয়াড়দের, যারা মেরে খেলতে পছন্দ করে, তাদের আত্মবিশ্বাস দেয়।... তাই তার ইনিংস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভারত যদি দ্বিতীয় সেশনে দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলত, তবে পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে পড়ত। (অস্ট্রেলিয়ার) দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়া পর্যন্ত সে ভারতের দুর্গ ধরে রেখেছিল। আর তার সঙ্গে সঙ্গে পান্তেরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল এবং সবাই দেখলেন, কী উন্মোচিত হলো! খুবই অসাধারণ একটি দিন।
সিরিজ জয়ের তাৎপর্য নিয়ে
এই সিরিজ জয়টি আরও বেশি দুর্দান্ত। কারণ, এবার অস্ট্রেলিয়ার তাদের পূর্ণ শক্তি দল নিয়ে খেলেছে। (২০১৮-১৯ মৌসুমে ভারত যখন প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতে, তখন নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার)। পঞ্চম দিনে বল টার্ন করছিল। গতকালও (সোমবার) কিছু বল লাফিয়ে উঠেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সময় কিছু কিছু বল নিচু হয়ে যাচ্ছিল। সুতরাং, সেই পিচে এমন স্বাচ্ছন্দ্যে রান তোলা (দারুণ ব্যাপার)। ভারতের শেষ দুই-তিনটি উইকেট পড়েছে লক্ষ্য পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে। খুবই ভালো লাগছে। কারণ, এই তরুণ ভারতীয় দলটি অন্যরকম কিছু একটা করে দেখিয়েছে। এই জয়ে আপনি কৃতিত্ব দেবেন কাকে? মোহাম্মদ সিরাজ ৫ উইকেট নিয়েছে, ওয়াশিংটন সুন্দর, নটরাজন উইকেট নিয়েছে। যেভাবে (প্রথম ইনিংসে) ওয়াশিংটন সুন্দর ও শার্দুল ঠাকুর ব্যাটিং করেছিল! শুবমান গিল, রিশভ পান্তও যেভাবে ব্যাটিং করল! এসব দেখার পর এবং যেহেতু তারা সবাই তরুণ খেলোয়াড়, আমি মনে করি, ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত এতটাই উজ্জ্বল যে, আমরা প্রতিটি আসন্ন সিরিজের জন্য দুর্দান্ত কিছুর প্রত্যাশা রাখতে পারি।
Comments