‘দুই’ চ্যালেঞ্জ নিয়ে ১০ মাস পর ফিরছে বাংলাদেশ

bangladesh cricket
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

গত জুলাইয়ের কথা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তখন কিছুটা কমতে শুরু করে। তখন সবার আগে মাঠে ক্রিকেট গড়ানোর কাজ শুরু করে ইংল্যান্ড। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলতে দেশটিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতেই ইংলিশদের তাদের মাটিতে হারিয়ে চমকে দেয় দলটি। সেই ক্যারিবিয়ানরা পরে নিউজিল্যান্ড ঘুরে এবার এসেছে বাঘের ডেরায়; আরও একটি নতুন শুরুর অপেক্ষায়। এ ম্যাচ দিয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।

আগামীকাল বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। থমকে যাওয়ার পৃথিবীতে তামিম ইকবালদের নতুন শুরু নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই। যদিও দেশের ঘরোয়া অঙ্গনে আগেই ফিরেছে ক্রিকেট এবং তার আয়োজন সফলভাবেই শেষ করতে পেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এবার তাদের চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। এ সিরিজের সফল আয়োজনে নির্ভর করছে ভবিষ্যতের পথচলা।

গত মার্চে বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, তখন টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে জিম্বাবুয়ে দল বাংলাদেশে। চারদিকে তখন বড় আতঙ্ক। এরপরও সফলভাবে সে সিরিজ সম্পন্ন করে বিসিবি। কিন্তু এরপরই থমকে যায় সবকিছু। শুধু ক্রিকেট নয়, পুরো ক্রীড়াঙ্গনই স্থবির হয়ে যায়। এরপর ১০ মাসেরও বেশি সময় পর আবার যখন ক্রিকেট ফিরছে, তখন অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। মাঠে দেখা যাবে না সমর্থকদের সেই বুনো উল্লাস।

bangladesh pacers
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

অবশ্য এত প্রতীক্ষার এ সিরিজের আমেজ শুরুতেই কিছুটা পানসে করে দিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। দলের সেরা তারকাদের অধিকাংশই দলে নেই। আনকোরা একটি দল নিয়ে এসেছে তারা। তাদের মধ্যে আবার সাত জন রয়েছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। তাতে বাড়তি ঝামেলাও তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। দুর্বল দলটির বিপক্ষে শতভাগ জয় না পেলে যে জাত রক্ষা হবে না! এক ম্যাচ হারা মানেই সাকিব-তামিমদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়বেন অনেকেই।

পাশাপাশি এখন থেকেই র‍্যাঙ্কিং ভাবনা মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশকে। আগামী ২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হলে অর্থাৎ বাছাইপর্ব এড়াতে হলে, সেরা আট দলের মধ্যে থাকতে হবে। তবে হারলে সমালোচনাও হবে, আবার হয়তো বাছাইপর্ব উৎরে খেলতে হবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। তবে সিরিজ আয়োজনে সামান্য ত্রুটি হলে অনেকে আবার বাংলাদেশের ক্রিকেট নির্বাসনেও পাঠিয়ে দিতে চাইবেন। তাই বাংলাদেশের জেতার চ্যালেঞ্জের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বিসিবির সিরিজ আয়োজনের চ্যালেঞ্জ।

আর ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জটা নিতে হচ্ছে তামিম ইকবালকে। মাশরাফি বিন মর্তুজা নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তার কাঁধে। কিন্তু এরপর আর মাঠেই গড়ায়নি ক্রিকেট। মাঝে সামাজিক মাধ্যমে আলাপ আলোচনাই ছিল যেন তার প্রধান কাজ। আর সে কাজটি অবশ্য দারুণভাবেই করেন তিনি। বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন, ফাফ দু প্লেসিদের মতো তারকাদের নিয়ে লাইভ করেন। কিন্তু তার মূল কাজটির পরখ এখনও বাকি। তাই অধিনায়ককে নামতে হচ্ছে নতুন পরীক্ষায়।

তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষে বিসিবির আয়োজিত দুটি ঘরোয়া আসরেই নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে চান এ বাঁহাতি, ‘একটা ভাল দিক বলতে পারেন যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব শুরু করার আগে আমি দুইটা টুর্নামেন্টে অধিনায়কত্ব করতে পেরেছি। দুটো আসরই আমার জন্য কঠিন ছিল। কঠিন ছিল বলে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যদি ভালো করে থাকি তাহলে সেটা সামনে এগিয়ে নিব। আর স্টাইল অব ক্যাপ্টেন্সি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হবে।’

jason
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সঙ্গে ম্যাচ জয়ের চাপ তো রয়েছেই তার, ‘স্বাভাবিকভাবে তো সবসময়ই জেতার চাপ অবশ্যই থাকে। এখন থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমরা খুব বেশি হলে ২৭-২৮ টা ওয়ানডে খেলব। আমাদের জন্য পয়েন্ট সিস্টেমের জন্য প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতাটা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই চাইবো যাতে আমাদের বাছাই পর্ব না খেলা লাগে। আমরা যাতে সেরা আটে থাকতে পারি। আমাদের জন্য সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ।’

চ্যালেঞ্জের রয়েছে আরও। এ সিরিজে বেশ কিছু তরুণ তুর্কিকে ডেকেছে বাংলাদেশ। শেখ মেহেদী হাসান আর হাসান মাহমুদ এর আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। শরিফুল ইসলাম একেবারেই আনকোরা। আবার পেস বোলিংয়ে নেতৃত্বও হয়তো দিতে হতে পারে তাদের। এ তরুণদের দিকে থাকবে বাড়তি নজর। 

তবে বাংলাদেশের কাজটি কঠিন করে দিতে চাইছেন উইন্ডিজের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ, ‘আমরা মুখিয়ে রয়েছি। নির্দিষ্ট দিনে আপনি কীভাবে খেলবেন তার উপর নির্ভর করে সব। অনেকের অভিষেক হবে। আপনি যখন নিজের মধ্যে এবং দলে বিশ্বাস অর্জন করবেন যে, আপনি ম্যাচ জিততে পারবেন, তখন জিনিসগুলো অর্জনযোগ্য। এটি ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে দেখা গেছে। আগামীকাল ভালো ক্রিকেট খেলতে আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। আশা করি ফলাফলও আমাদের পক্ষে যাবে।’

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago