পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের ক্ষমা নিয়ে চিন্তিত ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসের শেষ সময়ে এসে একটি চূড়ান্ত সতর্কবার্তা পেয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক দীর্ঘ বৈঠকের পর আইনি পরামর্শকরা তাকে সতর্ক করে বলেছেন যে, ক্ষমতাবলে পরিবারের সদস্য বা নিজেকে ক্ষমা করা ট্রাম্পের উচিত হবে না।
কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, আইনি পরামর্শদাতাদের মতে, পরিবার বা নিজেকে ক্ষমাপত্র দিলে তা ট্রাম্পকে আইনত বিপদে ফেলবে। এর মাধ্যমে ট্রাম্পের মধ্যে যে অপরাধবোধ আছে তা বোঝা যাবে এবং তার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
প্রতিবেদন মতে, ট্রাম্পকে আরও জানানো হয়েছে যে যেসব রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে ক্যাপিটল ভবনে সহিংস হামলায় ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে তাদের ক্ষমা করা হলে সিনেটের রিপাবলিকানরা ক্ষুব্ধ হতে পারেন।
সিনেটে কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে বিচার শুরু হবে। শেষ সময়ে এসে সিনেটের রিপাবলিকানদের রাগিয়ে তোলা ট্রাম্পের উচিত হবে না বলেও পরামর্শকরা জানিয়েছেন।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হোয়াইট হাউসের আইনজীবী প্যাট সিপোলন ও অ্যাটর্নি এরিক হারশম্যান।
ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসনের সময় এরিক তার প্রতিনিধি হিসেবে বিচারে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অন্য আইনজীবীরাও টেলিফোনে যুক্ত হয়েছিলেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, আইনি পরামর্শকদের প্রত্যেকেই ট্রাম্পকে জানিয়েছেন— যদি ট্রাম্প সুনির্দিষ্ট অপরাধের তালিকা দেখাতে না পারেন তবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে নিজেকে, নিজের পরিবারকে কিংবা রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের কাউকেই তার ক্ষমা করা উচিত হবে না।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র গত সপ্তাহে সিএনএন’কে জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতেই ট্রাম্পকে ক্ষমার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন আইনজীবী সিপলোন ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। তারা সেসময় জানিয়েছিলেন যে তাদের বিশ্বাস, ট্রাম্পের নিজেকে ক্ষমা করা উচিত না।
গত মাসে পদত্যাগের আগেই ট্রাম্পের কাছে এই অবস্থানটি উইলিয়াম বার তুলে ধরেছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের বিশ্বাস ছিল যে, বিষয়টির সমাধান হয়েছে। কিন্তু, শেষ সময়ে এসে ট্রাম্প বারবার এটি নিয়ে আলোচনা করছেন।
গত শনিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের সভায় এই ধারণাটি বাতিল করা হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। তবে, কোন বিষয়ে একমত না হলে ট্রাম্প প্রায়ই তার আইনীজীবীদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করেন। বিশেষত প্যাট সিপোলোনের পরামর্শ আগেও অগ্রাহ্য করেছেন তিনি। এ নিয়ে তার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কও ইতোমধ্যেই নষ্ট হওয়ার পথে।
সাবেক কৌশলবিদ স্টিভ ব্যাননসহ অনেকেই যারা একসময় প্রেসিডেন্টের ক্ষমা চেয়ে প্রত্যাখাত হয়েছিলেন ট্রাম্প এখন আবারও নতুন করে তাদেরকে ক্ষমার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ আছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নসহ একাধিক মানহানি মামলা চলছে। নিউইয়র্ক রাজ্যের প্রসিকিউটররা ট্রাম্পের ট্যাক্স রিটার্ন তথ্যের জন্য আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নি সাইরাস ভ্যানস জুনিয়রের পরিচালিত সম্ভাব্য বীমা বা ব্যাংক জালিয়াতির মামলায় বিস্তৃত অপরাধমূলক তদন্তের অংশ হিসেবে এটি চাওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও, নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পৃথক একটি নাগরিক তদন্ত (সিভিল ইনভেস্টিগেশন) পরিচালনা করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প আইনি পরামর্শের পরও তার ভাবনা পরিবর্তন করতে পারেন। হোয়াইট হাউসের শেষ দিন তথা বুধবার দুপুর পর্যন্ত তিনি ক্ষমতা দেখাতে পারে।। আইনজীবীদের পরামর্শ ট্রাম্প কতখানি মেনে চলবেন এ নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
যা করতে এসেছিলাম, তার সবই করেছি: বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প
ট্রাম্পের নয়, বাইডেনের অনুষ্ঠানে থাকছেন পেন্স
হোয়াইট হাউসে বাইডেনের আগমন: উত্তরসূরিকে স্বাগত জানাবে না ট্রাম্প দম্পতি
জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থায় ট্রাম্পের অনুগতের দায়িত্ব না দেওয়ার অনুরোধ পেলোসির
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও মার্কিন স্টেট হাউজগুলোর সামনে সশস্ত্র বিক্ষোভ
সবচেয়ে কম জনপ্রিয়তা নিয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন মেলানিয়া ট্রাম্প
Comments