আনকোরা উইন্ডিজের সহজ লক্ষ্য পেরোতে ঘাম ছুটল বাংলাদেশের

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সেরা তারকাদের কেউই আসেননি। এদিন তো ছয় জন খেলোয়াড়ের অভিষেক হয় এ ম্যাচে। এ যেন আনকোরা অচেনা এক উইন্ডিজ দল আসে বাংলাদেশে। এক পেশে লড়াইয়ের আভাস তাই ছিল শুরু থেকেই। দিনের শুরুতে সে পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই দলটিকে হারাতে ঘাম ছুটে গেছে টাইগারদের।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার উইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১২২ রানে অলআউট হয়ে যায় উইন্ডিজ। পরে লক্ষ্যে পৌঁছাতে ৩৩.৫ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয় টাইগারদের। মূলত একপেশে লড়াই হতে দেননি ক্যারিবিয়ান স্পিনার আকিল হোসেন। দারুণ বোলিং করে ম্যাচ কিছুটা হলেও জমিয়ে দিয়েছেন এ স্পিনারই।

জিততে হলে মাত্র ১২৩ রান করতে হত বাংলাদেশকে। সহজ এই লক্ষ্যে খুব খারাপ না করলে হারার উপায় নেই। দুই ওপেনার কিছুটা ধুঁকলেও পেয়ে গেলেন জুতসই শুরু। এক প্রান্তে আলজারি জোসেফ শুরু থেকেই বাড়তি বাউন্স আদায় করে চাপ রাখছিলেন। কিন্তু আরেক পাশে শেমার হোল্ডার তা আলগা করে দেন।

অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে কিছু রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে সারাক্ষণই তামিম-লিটন দুজনকেই হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়। বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন এসেই সেই চাপ বাড়িয়ে দেন অনেক। দারুণ টার্ন আদায় করে নেন তিনি। লিটন আউট হন তেমন এক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে।

আকিলের লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল ভেঙে দেয় লিটনের অফ স্টাম্প। নিজের একদম স্বভাববিরুদ্ধ খেলে ৩৮ বলে ১৪ রান করে ফেরেন লিটন। সাকিবের বদলে তিনে সুযোগ পেয়ে প্রথমবার তা কাজে লাগাতে পারলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনিও শিকার আকিলের। ৯ বলে ১ রান করে শর্ট মিড অনে দেন সহজ ক্যাচ। 

অধিনায়ক তামিমও ধুঁকছিলেন। তবু সংগ্রাম করে টিকে ছিলেন। প্রায় সবগুলো বল ব্যাকফুটে গিয়ে খেলছিলেন তিনি। লক্ষ্য কম থাকায় প্রচুর ডট বল খেলারও সুযোগ মিলছিল তার। প্রথম যে বলটি এগিয়ে এসে খেলতে গেলেন, সেটিতেই বিদায়। ৬৯ বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক করেন ৪৪। জেসন মোহাম্মদের অফ স্পিনে হন স্টাম্পিং।

স্বস্তির দেখা পাননি সাকিব আল হাসানও। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা এ তারকার দিকেই নজর ছিল সবার। তবে বেশ হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে তাকে। এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুটি আসরে খেলেও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি এ অলরাউন্ডার। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে ফিফটি করে কিছুটা আশা যুগিয়েছিলেন। যদিও বেশ ধীর গতিতেই করেছিলেন তা। এদিনও সুযোগ ছিল তেমন কিছুর। কারণ লক্ষ্য ছোট। কিন্তু আকিলের অসাধারণ একটি ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান তিনি। অফস্টাম্পের বাইরে অনেকটা স্পিন করে ভিতরে ঢুকলে ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে।

বাংলাদেশের জন্য তখন স্বস্তি ছিল যে, ওই বলটিই ছিল আকিলের স্পেলের শেষ বল। অন্যথায় এ লক্ষ্যেই হয়তো বড় কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হতো টাইগারদের। এরপর আর কোনো বিপদ হয়নি। বাকি কাজ মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে শেষ করেন মুশফিকুর রহিম। তবে ১২৩ রানের লক্ষ্যে প্রায় ৩৪ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করা, কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তামিমদের সামর্থ্যকে। 

এর আগে কাজের কাজটা আগেই সেরে দিয়েছিলেন টাইগার বোলাররা। ক্যারিবিয়ানদের বেঁধে ফেলেন মাত্র ১২২ রানে। শুরুতে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে তোপ দাগান কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর সফরকারীদের ঘূর্ণির মায়াজালে বাঁধেন অলরাউন্ডার সাকিব। টানা তিনটি উইকেট তুলে দলটির মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেন নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা এ অলরাউন্ডারই। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮ রানের খরচায় পান ৪ উইকেট।

মাঝে ষষ্ঠ উইকেটে রভমান পাওয়েলের সঙ্গে একটি দারুণ এক জুটি গড়েছিলেন কাইল মেয়ার্স। উইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে দেখার মতো ছিল এ সময়টুকুই। ৫৯ রানের জুটিতে দলীয় সংগ্রহ একশ পার করেন তারা। এ জুটি ভাঙেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ। পর পর দুই বলে দুটি উইকেট তুলে তৈরি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। তবে তুলে নেন তিন উইকেট। শেষ পর্যন্ত ১২২ রানের সাদামাটা লক্ষ্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় উইন্ডিজকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

উইন্ডিজ: ৩২.২ ওভারে ১২২ (আমব্রিস ৭, জশুয়া ৯, ম্যাকার্থি ১২, মোহাম্মদ ১৭, মায়ার্স ৪০, বোনার ০, পাওয়েল ২৮, রেইফার ০, জোসেফ ৪, আকিল ১, হোল্ডার ০*; রুবেল ০/৩৪, মোস্তাফিজ ২/২০, হাসান ৩/২৮, সাকিব ৪/৮, মিরাজ ১/২৯)

বাংলাদেশ: ৩৩.৫ ওভারে ১২৫/৪ (লিটন ১৪, তামিম ৪৪, শান্ত ১, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৯*, মাহমুদউল্লাহ ৯*; জোসেফ ০/১৭, শেমার ০/২৬, আকিল ৩/২৬, মোহাম্মদ ১/১৯, ম্যাকার্থি ০/১০, বোনার ০/১৫)।

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago