প্রকল্প পরিচালকদের গৎবাঁধা অজুহাত
![Planning_Minister_22Jan21.jpg Planning_Minister_22Jan21.jpg](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/planning_minister_22jan21.jpg?itok=MiV43Oja×tamp=1612877800)
বরিশাল বিভাগে চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি এবং প্রকল্প পরিচালকদের গৎবাঁধা অজুহাততে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল সার্কিট হাউসে বরিশাল বিভাগের প্রকল্পগুলো পরিচালকদের সঙ্গে বসেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
সভায় আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বরিশাল বিভাগের ৬৭টি প্রকল্পের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, শূন্য শতাংশ অগ্রগতি রয়েছে ছয়টি প্রকল্পের; ১০টি প্রকল্পের অগ্রগতি ১০ শতাংশেরও কম, এক থেকে ২৫ শতাংশ অগ্রগতি রয়েছে ১৩টি প্রকল্পের; ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ অগ্রগতি রয়েছে ১৯টি প্রকল্পের এবং ৫১ ভাগের বেশি অগ্রগতি রয়েছে ২৯টি প্রকল্পের।
প্রকল্প পরিচালকরা জানান, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার মূলে রয়েছে জমি প্রাপ্তিতে সমস্যা।’ জবাবে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবতী বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে ফিজিবিলিটি স্টাডি ঠিক মতো না হওয়া। ৫০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্পের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি বাধ্যতামূলক থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে প্রকল্প পাস হওয়ার পরে বাস্তবে যখন কাজ করতে যাওয়া হচ্ছে তখন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘একজন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা সবাই ঢাকায় থাকেন। প্রকল্প এলাকায় আসেন খুব কম। নির্বাহী প্রকৌশলীরা প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যান। ঢাকায় বসে প্রকল্প মূল্যায়ন করা যায় না। সে জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিভাগীয় শহরে গিয়ে প্রকল্পের সম্মুখ পরিস্থিতি অবলোকন করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের প্রকৃত মূল্যায়ন না করার ফলে প্রকল্প ব্যায় বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি একটি রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বরিশাল বিভাগের মেগা প্রজেক্ট পায়রা বন্দরকে ঘিরে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রদীপ রঞ্চন চক্রবর্তী বলেন, বরিশাল বিভাগের প্রকল্পগুলোর মোট আর্থিক মূল্য সাত হাজার ১০৩ কোটি টাকা, যা দেশের মোট প্রকল্পের তিন দশমিক ৩১ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্পের ২২ শতাংশ।
‘অনেক সময় পরামর্শকদের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধি হচ্ছে। মূল্যায়ন সভায় বলা হয়, ব্যয় কম দেখিয়ে কোনো রকমে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে পরে রিভিশন চাওয়া হয়। অনেক সময় ঘরে বসে ফিজিবিলিটি করে দেওয়া হয়। এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে’— বলেন আইএমইডি সচিব।
সভায় শূন্য অগ্রগতি হওয়া বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প; সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষা প্রকল্প; বরিশালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার স্থাপন প্রকল্প; পিরোজপুরের নেসারাবাদ উপজেলা হেড কোয়ার্টার থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া রাস্তা নির্মাণ সীমা প্রকল্প; বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সরকারের এই মেয়াদে এম এ মান্নান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরে গত দুবছরে বিভিন্ন বিভাগে সরেজমিনে প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে সভা করেছেন। প্রকল্প বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। দুবছর পরে মূল্যায়ন সভায় সরকারের প্রকল্প তদারকি সংস্থা একই সমস্যা তুলে ধরলো।
Comments