কুমিল্লার ভাষাসৈনিক আলী তাহের মজুমদার মারা গেছেন

আলী তাহের মজুমদার। ছবি: স্টার

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একনিষ্ঠ সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কুমিল্লার শতবর্ষী আলী তাহের মজুমদার মারা গেছেন।

আজ শনিবার ভোরে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন তার নাতনি দিলরুবায়েত সুরভী।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণের বারপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের মো. চারু মজুমদার ও সাবানী বিবির ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

মৃত্যুকালে আলী তাহের মজুমদার চার সন্তান ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী রেখে গেছেন।

জীবিতাবস্থায় আলী তাহের মজুমদারের কাছ থেকে জানা যায়, কুমিল্লায় ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ১৯৪৮ সালে। ঢাকায় জিন্নাহ যখন বলেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানায় এবং সারাদেশেই প্রতিবাদ হয়। তখন কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিক থেকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মিছিল নিয়ে আসে। এই খবর শুনে তখনকার বামপন্থী দলের যুবলীগ ও তমুদ্দীন মজলিশের কর্মীরা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাল্টা মিছিল বের করে। ওই মিছিল থেকে উর্দু ভাষার পক্ষের মিছিলের প্রতিবাদ জানানো হয়। একসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ঢিল ছুড়াছুড়ি হয়, এতে আহত হন অনেকেই। তখন উর্দু ভাষার পক্ষের মিছিলকারীরা শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। পরবর্তীতে ঢাকার পাশাপাশি কুমিল্লাতেও ঘন ঘন মিছিল হয়েছে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বারসহ অনেকে নিহত হন। এ খবর পেয়ে তৎকালীন বিপ্লবী ও কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান বাবু অতীন্দ্র মোহন রায় সবাইকে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনের ডাক দেন। তখন আলী তাহের মজুমদারসহ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে আলী তাহের মজুমদার সম্মুখে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

আলী তাহের মজুমদার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৪২ সালে হাইল্লার জলা নামক এলাকায় রেললাইন উপড়ে ফেলার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগ্রামী।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার ঐতিহ্যের গবেষক ও লেখক আহসানুল কবির বলেন, ‘আলী তাহের মজুমদার একজন আজন্ম বিপ্লবী। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকসহ বিভিন্ন আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন এবং দীর্ঘদিন কুমিল্লা জেলা কৃষকলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।’

তিনি দাবি জানান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের কাছে আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটিকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়ার দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। এটি তার অবদান সম্মানের সঙ্গে স্মরণ রাখার অবলম্বন হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

1h ago