অলিম্পিক আয়োজনে দৃঢ় অবস্থানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী
টোকিও অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক-২০২০ গেমসের আয়োজন নিয়ে আশঙ্কা এখনো কাটেনি। এগুলো অনুষ্ঠিত হবে কিনা তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে, অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সব ধরনের আশঙ্কা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
গত ২২ জানুয়ারি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের অধিবেশন চলাকালে সুগা বলেন, অলিম্পিক দেরিতে আয়োজন বা স্থগিত করার কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী জুলাইয়ে টোকিওতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসবে।
সংসদে সুগা আরও বলেন, ‘আগামী জুলাইয়ে দেশি ও বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায় নিরাপদে অলিম্পিকের আয়োজনে আমি বদ্ধপরিকর।’
সুগার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই কথা বলেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ বৃহস্পতিবার কিয়োডো নিউজকে বলেন, ‘অলিম্পিক গেমস বাতিল বা স্থগিতের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই আগামী ২৩ জুলাই টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গেমসের উদ্বোধন হবে না এমন ধারণার কোনো কারণ নেই।’
দ্য টেলিগ্রাফ সূত্রে জানা যায়, টোকিও অলিম্পিক আয়োজনে সব অ্যাথলেটকে টিকা দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অলিম্পিক কমিটির পরিকল্পনা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলো দ্রুত ট্র্যাকিং করা। অথচ, ভ্যাকাসিন নিয়ে জাপানের জাতীয় কর্মসূচি এখনো শুরু হয়নি।
জাপান সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র জানিয়েছেন, অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমস আয়োজন বা এগিয়ে নিতে করোনা ভ্যাকসিনের বিতরণ কোনো পূর্বশর্ত নয়। জাপানে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে ভ্যাকসিনের কার্যক্রম শুরু হবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ক্যাটসুনোবু কাটো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিনকে শর্ত না বানিয়ে নিরাপদে অলিম্পিক গেমস আয়োজনে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভাবছি।’
তবে, সুগার এমন আশ্বাসের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না জাপানের সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, জাপানসহ বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। তাই কয়েক হাজার অ্যাথলেট, কোচ, কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক, মিডিয়াকর্মী এবং দর্শকদের নিয়ে এই গেমস আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে বলেছেন, মিডিয়া কোথা থেকে এসব তথ্য পেয়েছে আমার জানা নেই। তিনিও সব আশঙ্কা নাকচ করে দেন।
কিন্ত, গত বৃহস্পতিবার সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অলিম্পিক গেমস স্থগিত বা বাতিলের আহ্বান জানান। বিরোধী দলের নেতারা ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও ঝুঁকির মধ্যে বিশ্বজুড়ে চতুর্ভুজ ক্রীড়া ইভেন্টের হোস্টিং নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন জোটের সমালোচনা করেন।
জাপানিজ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কাজুও শিয়ে বৃহস্পতিবার লোয়ার হাউসের প্লেনারি অধিবেশনে সুগাকে গেমস বাতিল এবং ভাইরাসের মোকাবিলায় মনোনিবেশের অনুরোধ জানান।
জাপানের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক পার্টির নেতা ইউকিও এডানো (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান সরকারের মুখপাত্র) জানান, অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে তিনি আশাবাদী। কিন্তু, তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ইচ্ছাবাদী চিন্তার ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়াটা হবে বোকামি ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।’
বৃহস্পতিবার টোকিও আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি জাপানি সংবাদমাধ্যম নিশি নিপ্পন শিম্বুনকে বলেন, ২৫ মার্চ অলিম্পিক টর্চ রিলে যে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হলে আয়োজকদের এই গেমস এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভাব।
গত ১২ জানুয়ারি মোরি আরও বলেন, এবারের গ্রীষ্মে টোকিও অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক-২০২০ গেমসের আয়োজন করতে তিনি বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছে। তাই, পিছপা হওয়ার উপায় নেই।
গত বছরের এপ্রিলে টোকিও অলিম্পিক গেমসের প্রেসিডেন্ট ইয়োশিরো মোরি বলেছিলেন, ‘আগামী বছরও যদি এই পরিস্থিতি থাকে, তাহলে অলিম্পিক বাতিল করা হবে। অতীতেও অলিম্পিক বাতিল হয়েছে। আমরা দেখেছি, দুই বিশ্বযুদ্ধের সময় অলিম্পিক বাতিল হয়েছে। বর্তমানে আমরা অদৃশ্য এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’
তখন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমরা যদি করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হই, তাহলেও বলতে হবে অলিম্পিক আশঙ্কার মধ্যে হতে চলেছে। আমরা ধরে নিচ্ছি অলিম্পিক সামনের বছর হবে। সেটা ধরে নিয়েই এগোচ্ছি। কিন্তু, সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।’
সূত্র: জাপান টাইমস
Comments