দেশের প্রথম ক্রিকেট কমপ্লেক্স হচ্ছে সিলেটে

আজ (শনিবার) বিকেলে তৈরি হওয়া নতুন গ্রাউন্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল
Sylhet Cricket Stadium, Ground- 2
সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম, গ্রাউন্ড-২, মূল নকশা ও সাম্প্রতিক ছবি (শেখ নাসির)

সিলেট নগরীর উপকণ্ঠে লাক্কাতুরা এলাকায়  আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এরমধ্যেই পরিচিত বিশ্ব অঙ্গনে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে সুন্দর ভেন্যুর সুনামও কুড়িয়েছে এটি। এর পরিসর ও সৌন্দর্য বেড়ে যাচ্ছে আরও। পাশেই আরেকটি আন্তর্জাতিক মানের মাঠের নির্মাণ প্রায় শেষের পথে। বিস্তৃত আঙ্গিনায় ক্রিকেট একাডেমি ও ক্রিকেট মিউজিয়ামের পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। 

আজ (শনিবার) বিকেলে তৈরি হওয়া নতুন গ্রাউন্ডের  আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। চা বাগানে ঘেরা এই এলাকা এমনিতেই দৃষ্টিনন্দন। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন মাঠের পুরো গ্যালারিই রাখা হয়েছে পাহাড়ি ঢালের আদলে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) যাকে তৈরি করেছে ‘সিলেট আউটার স্টেডিয়াম’ নামে। বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম নাদেল অবশ্য জানালেন  ‘সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, গ্রাউন্ড-২’ নামকরণ করে আইসিসির কাছে এই মাঠের অনুমোদনের আবেদন করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। চলছে পিচ তৈরির কাজ, মাসখানেকের মধ্যেই যা শেষ হওয়ার আশা সংশ্লিষ্টদের। পিচ হয়ে গেলে ঘাস রোপণ করতে লাগবে আরও কিছুটা সময়। এরপরই খেলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে তা।

Sylhet Cricket Stadium, Ground- 2
ছবি: শেখ নাসির

নতুন গ্রাউন্ডের উদ্বোধন করতে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মোমেন আশা প্রকাশ করেন সিলেটের তরুণদের বড় সুযোগের ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে এই অবকাঠামো,  ‘যে কোন দেশের স্টেডিয়ামের সাথে তুলনীয় সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সিলেট শহরে যখন সাধারণ খেলার মাঠ কমছে, তখন এরকম একটি আউটার স্টেডিয়াম তরুণ ক্রিকেটারদের খেলায় অনুশীলনে অবদান রাখবে’।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল জানান, আরেকটি আন্তর্জাতিক মাঠে লাগোয়া হলেও সর্বোচ্চ সুবিধা রেখে তৈরি করা হয়েছে এই মাঠে। তার আশা শিগগিরই আইসিসির স্বীকৃতি পাবে নতুন এই গ্রাউন্ড,  ‘‌‌‌এই গ্রাউন্ডটি আন্তর্জাতিক মানে তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা আইসিসি‌র কাছে আবেদন করেছি এটিকে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। আশা করছি অচিরেই তা পাওয়া যাবে।’

সিলেট আউটার স্টেডিয়াম/ ‘গ্রাউন্ড ২’

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ‘আউটার স্টেডিয়াম’ হিসেবে নির্মিত হওয়া নতুন গ্রাউন্ডটির কাজের দায়িত্বে ছিল এনএসসি। তবে ক্রিকেট মাঠ হিসেবে পরিকল্পনা আর তদারকিতে সার্বক্ষণিকভাবে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

শুরুতে মূল মাঠের পাশে অনুশীলনের জন্য একটি আউটার স্টেডিয়াম বানানোরই পরিকল্পনা ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বদলে তা হয়ে যায় বিশদ। মাঠের পরিধি, সুবিধা সবই সর্বোচ্চ পর্যায়ে করায় মূল মাঠের নামও কিছুটা বদলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিসিবি পরিচালক নাদেল।

এখন আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃত মূল মাঠকে ‘সিলেট গ্রাউন্ড-১’ এবং নতুন হওয়া আউটার স্টেডিয়ামকে ‘সিলেট গ্রাউন্ড-২’ হিসেবে নামকরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

৩ একক জায়গার উপর নির্মিত নতুন গ্রাউন্ডটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। চারপাশে গ্রিন গ্যালারির সঙ্গে রয়েছে একটি প্যাভিলিয়ন ভবন।

প্যাভিলিয়ন ভবনে মোট চারটি ড্রেসিং রুম প্রস্তুত করা হয়েছে যার মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের জন্য এবং অপর দুটি স্থানীয় টুর্নামেন্টের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে এ মাঠে ফ্লাড লাইট বসানোর কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই।

আউটার স্টেডিয়ামের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এনএসসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আপাতত এই গ্রাউন্ডটি মূল মাঠের বর্ধিত আউটার স্টেডিয়াম হিসেবেই নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে নিয়ে আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে সব বাস্তবায়ন করা হবে।’

Sylhet International Cricket Stadium
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে নতুন আরেকটি মাঠ তৈরির মধ্য দিয়ে আয়োজনের শেষ নয়। এখন দেশের পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগের দিকেও এক ধাপ এগুনো গেছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন বিসিবি পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে আরো জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণের উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিকেটারদের আবাসনের জন্য একটি ডরমিটরি, সব মৌসুমে অনুশীলনের জন্য ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ড, ক্রিকেট একাডেমি, ক্রিকেট মিউজিয়াম ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

এসব স্থাপনা স্থানীয় ও তৃণমূলের ক্রিকেটারদের কথা মাথায় রেখেই করা হচ্ছে বলে জানান নাদেল, ,‘ডরমিটরি নির্মাণ হলে তা খেলোয়াড়দের আবাসিক সমস্যার সমাধান করবে। একইভাবে অনুশীলন গ্রাউন্ডে একসঙ্গে ৭০ থেকে ৮০জন খেলোয়াড় অনুশীলন  করতে পারবেন।  যার মাধ্যমে উপকৃত হবে সিলেটের ক্লাবগুলো’।

এরসঙ্গে বিসিবির আলাদা উদ্যোগে করা হচ্ছে ক্রিকেট একাডেমি ও ক্রিকেট মিউজিয়ামও, আর স্কুল করে দিচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন,  ‘বিসিবির উদ্যোগে এই কমপ্লেক্সে একটি ক্রিকেট একাডেমি এবং ক্রিকেট মিউজিয়ামেরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়াও এই কম্পাউন্ডে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনকেও কিছু জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

বিসিবির এই পরিচালকের আশা সবগুলো পরিকল্পনাই দ্রুত বাস্তবায়ন করে দেশের প্রথম ক্রিকেট কমপ্লেক্স উপহার দেবেন তারা।

Comments