প্রবাসে

গল্লামারী থেকে ইয়র্কশায়ার

পশ্চিম ইয়র্কশায়ারে ইলার্স রোডের ছোট যে বাসাটায় শুভ্র বরফ দেখতে দেখতে লিখছি সেখানে আমার আরো দিন পনের আগে আসবার কথা ছিল। প্রস্তুতিও ছিল। ঝামেলা এড়িয়ে টিকিট কেটে রেখেছিলাম নভেম্বরে। যাত্রা পূর্ববর্তী শপিং, লাগেজ গোছানো, করোনা টেস্ট করার জন্য আগে থেকে মানুষজনকে বলে রাখা এমনকি প্রিয় মানুষদের কাছ অল্প অল্প করে থেকে বিদায় নেওয়াও হয়েছিল ঠিকঠাক। কিন্তু এতো সতর্কতাও ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। বরং একের পর এক সমস্যায় পড়েছি। খুলনার গল্লামারী থেকে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের এই যাত্রার গল্পটা দীর্ঘ। এসব গল্প জুড়ে দিয়েই গত ৯ জানুয়ারি এমিরেটস এয়ারলাইন্সে আমার প্রথম কোন আন্তর্জাতিক সফরে বিদেশে আসা। গন্তব্য ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে ইয়র্কশায়ার। উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষা।
লিডস ইউনিভার্সিটি। ছবি: বায়েজীদ খান

পশ্চিম ইয়র্কশায়ারে ইলার্স রোডের ছোট যে বাসাটায় শুভ্র বরফ দেখতে দেখতে লিখছি সেখানে আমার আরো দিন পনের আগে আসবার কথা ছিল। প্রস্তুতিও ছিল। ঝামেলা এড়িয়ে টিকিট কেটে রেখেছিলাম নভেম্বরে। যাত্রা পূর্ববর্তী শপিং, লাগেজ গোছানো, করোনা টেস্ট করার জন্য আগে থেকে মানুষজনকে বলে রাখা এমনকি প্রিয় মানুষদের কাছ অল্প অল্প করে থেকে বিদায় নেওয়াও হয়েছিল ঠিকঠাক। কিন্তু এতো সতর্কতাও ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। বরং একের পর এক সমস্যায় পড়েছি। খুলনার গল্লামারী থেকে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের এই যাত্রার গল্পটা দীর্ঘ। এসব গল্প জুড়ে দিয়েই গত ৯ জানুয়ারি এমিরেটস এয়ারলাইন্সে আমার প্রথম কোন আন্তর্জাতিক সফরে বিদেশে আসা। গন্তব্য ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে ইয়র্কশায়ার। উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষা।

উচ্চশিক্ষায় সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ফান্ড। সেই ফান্ডের নিশ্চয়তা অর্থাৎ স্কলারশিপ পাওয়ার পরেও পদে পদে নানা ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে। লিখতে চাইনি প্রথমে। কিন্তু আরেকটি ঘটনায় লিখতে উৎসাহিত হচ্ছি। যুক্তরাজ্য আসার পরেই একজন মানুষের যা যা করতে হবে তার মধ্যে বায়োমেট্রিক রেসিডেন্স পারমিট (বিআরপি) সংগ্রহ করা, ব্যাংকের একাউন্ট খোলা, আবাসনের জন্য নিবন্ধন, যদি পার্টটাইম চাকরি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে জাতীয় বিমার জন্য আবেদন করাসহ অনেক কাজ থাকে।

বিআরপি সংগ্রহের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করোনাকালে অনলাইনে একজন শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশনের যাবতীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয়। আমি এখানে এসেই এগুলো করে ফেলার মনস্থির করেছি এবং কিছু  যথাযথভাবে অনলাইনে করেছি। কিন্তু আমাকে এখান থেকে জানানো হয় বিআরপি সময়সীমায় ভুল থাকায় সময় লাগবে। আরেকটি টিমের সাথে যোগাযোগ করতে হবে আমার। এমন সময় আমাকে এই মেইল পাঠানো হলো যখন আমি নিজেকে পড়াশুনার জন্য প্রস্তুত করছি।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আমার এখানে আসার কথা ছিল বলে আমার এখানকার বাসার ঠিকানায় ইউনিভার্সিটি অব লিডসের নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিসের তত্বাবধানে খাবারের বক্সটি পৌঁছে দেয়। এটা এখানকার করোনাকালের রীতি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যারাই যুক্তরাজ্যে ফিরে বা এসে আইসোলেশনে থাকবে তাদের আসার তারিখকে হিসাবে নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিডস আগে থেকে কিছু খাবার পাঠিয়ে দেয়। আমি সেগুলো ঠিকই পেয়েছি কিন্তু আমার আসা হলো না সময়মতো।

বিআরপি লেটারে আমাকে প্রচলিত নিয়মের মধ্যেও কম সময়সীমা দিয়ে চিঠি দেয় অর্থাৎ আমার ক্লাস শেষ হবে যেখানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সেখানে আমাকে রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া হয় ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। এই একটি চিঠিই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমার মনে আছে ভিসা পাওয়ার দিন খুশিতে আত্মহারা হবার থেকে বরং মন খারাপের সঙ্গী হয়েছিলাম। একদিন পরেই আমার এই ঘটনা আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন ম্যানাজারকে জানালে তিনি আমাকে একটা মেইলের ড্রাফট লিখে পাঠিয়ে ইউকে ভিসা ইমিগ্রেশনকে জানাতে বলেন।

নিয়মের মধ্যে সমস্ত ধাপ সঠিকভাবে আমি পালন করেছি। একের পর এক মেইল আদান প্রদান করেছি। যাত্রার তারিখ ঘনিয়ে আসছে।  হঠাৎ ১৬ ডিসেম্বর বুধবার বিকেল ৪ টায় ভিসা অফিস থেকে আমার মেইল আসে আমি যেন বাংলাদেশের ভিসা আবেদনের সেন্টারে আমার পাসপোর্ট জমা দিই এবং তাদের জানাই। আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। ১৭ তারিখ বৃহস্পতিবার অফিসের শেষদিন। মাত্র ১ দিন অফিস আছে। তারপর ২ দিন বন্ধ। ২৪ তারিখ থেকে ক্রিসমাসের ছুটি। হাতে একদমই সময় নেই। মুহূর্তেই আমি খুলনা থেকে বের হলাম।

ট্রেনের টিকিট কেটে সারারাত ট্রেনে জার্নি করে ঢাকায় এসেছি। গুলশানের ঢাকা ভিএসএফ অফিসে আমার পাসপোর্ট আবার জমা দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসকে ইমেইলে জানালাম। ২১ ডিসেম্বর ফিরতি মেইলে আমাকে জানানো হয় আমার সব কিছু সংশোধন করা হয়েছে। এদিকে আমি যতগুলো ইমেইল পাঠিয়েছি সবগুলোতেই আমার বিমানের টিকিট সংযুক্তিতে দিয়ে দিয়েছিলাম। ২২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে বিদায় নিয়েছি মা বাবা, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে। ২৩ তারিখে ভিএসএফ অফিসে ভিসার জন্য বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। কিন্তু তারা জানিয়ে দিয়েছে এই দুই দিনে কোনোভাবেই আমার হাতে আসা সম্ভব নয়। হাল ছেড়ে দিতে হলো। বিমানের টিকিট পুনঃতারিখ করতে হলো। এইবার যেতে হবে ৯ জানুয়ারি ২০২১।

ডিসেম্বর মাসে বিদেশে যাব বলে ইতোমধ্যে গ্রাম থেকে বিদায় নিয়ে এসেছিলাম। একবার বিদায় নেওয়ার পরে আবার গ্রামের উদ্দেশ্যে যাওয়াটা অনেকটা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু কী আর করা! ম্যানচেস্টার বিমান বন্দরের যাত্রী এই আমি ২৬ ডিসেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ফের ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যেই শেষমেশ রওনা দিলাম। গ্রামে এই কয়েকট দিন খুব ভালো কেটেছে আমার। কিন্তু দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়েনি। আবার যদি পিছাতে হয় তারিখ!

একদিকে করোনা অন্যদিকে ইংল্যান্ডে বারবার সরকার টায়ার ভাগ করে করে লকডাউন দিচ্ছে। অবশেষে ৭ জানুয়ারি যেদিন নতুন করে ভিসা ও পাসপোর্ট হাতে পেলাম সেদিন থেকে ইংল্যান্ড জুড়ে ফের লকডাউন দেওয়া হয়েছে। ফুল লক ডাউন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত টানা লকডাউন। এই লকডাউনের মধ্যেই এলাম এখানে। চারপাশে করোনা আক্রান্ত মানুষ। এক ধরনের আতঙ্ক।

যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদত্ত Confirmation of Acceptance of Studies (CAS) নামের ডকুমেন্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ছাড়া যুক্তরাজ্য সরকার আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসা দেবে না।  আমাকে ২৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় CAS লেটার ইস্যু করে ইমেইল পাঠায় যাতে আমি ভিসার আবেদন করতে পারি। নভেম্বরের ১ তারিখে ইউকে ভিসাস এন্ড ইমিগ্রেশনে আবেদন করে ভিএসএফ অফিসে বায়োমেট্রিক ইন্টারভিউের তারিখ ঠিক করি ৫ নভেম্বর, ২০২০।

এর আগেরদিন ৪ নভেম্বর ঢাকার কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল রোডের একটি বাসায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরদিন সকাল পৌণে নয়টায় গুলশানে অবস্থিত ভিএসএফ ঢাকায় আমার বায়োমেট্রিক ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার কথা। হঠাৎ রাত ১১.৩০ টায় অর্থাৎ যুক্তরাজ্য সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ইউনিভার্সিটি থেকে মেইল আসে “Unfortunately it has come to our attention that the course end date is incorrect. Please DO NOT attempt to use your CAS to submit your visa application.”

কী বিপদ! রাত পেরোলেই আমাকে ভিএফএসে যেতে হতো। ওদের ফিরতি মেইল দিলে লাভ নেই। সবাই অফিস থেকে চলে গেছে। আগে থেকে মেইল আদান প্রদানে গড়ে ওঠা পরিচয়ের সূত্র ধরে সাথে সাথেই এডমিশন ম্যানেজারকে জানালে তিনি বলেন এখন আর কিছু করার নেই। সাথে ল্যাপটপ নেই। রাত বারোটা ছাড়ালো। কাকে কী বলবো কিছু বুঝতে পারছি না। কয়েকজনের সাহায্য ও পরামর্শ নিয়ে মোবাইলে দ্রুত আবার তারিখ বদলালাম। বায়োমেট্রিক ইন্টারভিউয়ের নতুন তারিখ ঠিক হলো ১৫ নভেম্বর।

অনেক পরে ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করে মাত্র ৭ দিনের মাথায় ভিসা হাতে পেয়ে গেছেন অনেকেই। আমার অপেক্ষা যেন ফুরায় না। অবশেষে যখন আমার হাতে ভিসা এলো সেটির গল্প আগেই জানিয়েছি।  

৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ থেকে দুবাই এয়ারপোর্টে আসার সময় আমাদের বিমান যেন দারুণ ছন্দে আকাশে উড়েছে। এরপর দুবাই থেকে যে বিশাল এয়ারবাস আমাদের ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলো সেখানেও ছিল রোদের খেলা। ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেশন ক্রস করে টার্মিনাল ১ এ গেলাম। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা একটা লম্বা লাল রঙের প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল। সেটিই হলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে এয়ারপোর্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়ার জন্য শাটল কোচ সার্ভিসের ব্যবস্থা করে রেখেছিল।

আমি ছাড়াও এখানে আছে কাজাখস্তান, নাইজেরিয়া, চীন, কেনিয়া থেকে আসা শিক্ষার্থী। মিলিয়ে ৮ জন এই শাটলে করে আসি। ৩ জনের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে করতে সাড়ে ১২টায় ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে রাখা আমাদের কোচ ছাড়ে দুপুর ২টায়। ততোক্ষণে সবার সাথেই আমাদের সখ্য গড়ে উঠেছে। কোচেই আমাদের হালকা খাবার আর একটা করে সিম কার্ড দেওয়া হয়। আমাদের কোচ রোদের ঝিলিক আর চারপাশের শুভ্র বরফের সৌন্দর্য কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায়। চারদিকে লকডাউন থাকায় ইচ্ছেমত জায়গায় নামার বা চলাফেরা করার সুযোগ ছিল না। ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন। ফলে চলার পথেই ট্যাক্সি থামিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম। বেলা ২.৫০ এ আমাদের বাস থামলো ইউনিভার্সিটি অফ লিডসের পারকিনসন বিল্ডিং এর সামনে।

ইয়র্কশায়ারে লেখক।

আমি যেখানে উঠেছি সেই শহরে ২০১৬ সালের নভেম্বরে শেষ বেশ ভালো করে তুষারপাত হয়েছিল। আমি এখানে আসবার মাত্র ৫ দিনের মাথায় সেই বরফের দেখা পেলাম। একইসাথে রোদ ও বরফের সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবো বলেই কি তাহলে আমাদের উচ্চশিক্ষায় এখানে আসার পথে এত কিছু ঘটলো!

মানুষ আসলে নিজে সব কিছু খুব সহজে করতে চাইলেও সব কিছু সহজে হয় না। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তাকে আটকে দেয়। বাংলাদেশে আমি যেখানে থাকতাম জায়গাটির নাম গল্লামারী। এটি একাত্তরের বধ্যভূমির ওপরে দাঁড়িয়ে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের এই গল্লামারী থেকেই আমার ইয়র্কশায়ারে আসা। আমার এই যাত্রাটিকে কেবল ‘ এ জার্নি বাই এয়ার’ বলেই শেষ করা যাবে না। বাধা এসেছে, এসেছে নিরুৎসাহ, বিদ্রুপ, এসেছে অসহযোগিতা। তবে এসব ছাপিয়ে গেছে অনেক মানুষের স্নেহ ও পরম ভালোবাসার উৎসাহ ও প্রার্থনা। সবার ঐকান্তিক অনুরাগ আমাকে মহাদেশ পাড়ি দিতে সাহায্য করেছে।

এই যে সাত দিন হলো সবাইকে ছেড়ে এসেছি। এখন নতুন দেশ দেখছি। নতুন শহর। কিন্তু মনের মধ্যে কবি সৃজন সেনের সেই কবিতা যেখানে গ্রামের ছেলেদের মাতৃভূমিকে ছেড়ে আসাকে বর্ণনা করেছিলেন –

“আমি ছেড়ে এসেছিলাম আমার মাকে, আমার বাবাকে      

আমি ছেড়ে এসেছিলাম আমাদের সেই বুড়ো বটগাছ,

টিনের চালাওয়ালা গোবরলেপা বেড়ার ঘর, 

বাড়ির পেছনের পুকুর, পুকুরপাড়ের নোনা গাছ     

এবং আমার প্রিয় কাজলা দিদিকে,

ছেড়ে এসেছিলাম আমার মাতৃভূমিকে, আমার জন্মভূমিকে।”

লেখক: বায়েজীদ খান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটিতে বৈশ্বিক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতিতে অধ্যয়নরত।[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago