‘কেন মুমিনুল? কেন?’ কোচের কণ্ঠে ঝাঁজ

শর্ট বলে সমস্যা। পাশাপাশি চতুর্থ ও পঞ্চম স্টাম্পের (অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের) বলও ঠিকভাবে খেলতে পারেন না। দেশের বাইরে কার্যকরী নন। এ সকল কারণে বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে অনেক আগেই মুমিনুল হককে বাদ দিতে চেয়েছিলেন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহে। কিন্তু দেশের অন্যতম সেরা এ টেস্ট ক্রিকেটারকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া যায়নি। কিন্তু হাতুরুসিংহের তোলা সমস্যাগুলো উতরে উঠতে পেরেছেন কি মুমিনুল?
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শর্ট বলে সমস্যা। পাশাপাশি চতুর্থ ও পঞ্চম স্টাম্পের (অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের) বলও ঠিকভাবে খেলতে পারেন না। দেশের বাইরে কার্যকরী নন। এ সকল কারণে বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে অনেক আগেই মুমিনুল হককে বাদ দিতে চেয়েছিলেন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহে। কিন্তু দেশের অন্যতম সেরা এ টেস্ট ক্রিকেটারকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া যায়নি। কিন্তু হাতুরুসিংহের তোলা সমস্যাগুলো উতরে উঠতে পেরেছেন কি মুমিনুল?

হাতুরুসিংহের পর্যবেক্ষণ যে খুব একটা ভুল নয়, তা সাম্প্রতিক সময়ে মুমিনুলের আউটগুলো দেখলেই বোঝা যায়। শেষ ৯ টেস্টের ১৬ ইনিংসে বোল্ড ও এলবিডব্লিউ ছাড়া যা আউট হয়েছেন এ ব্যাটসম্যান, তার সবই ক্যাচ দিয়েছেন হয় উইকেটরক্ষককে কিংবা স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডারদের। পেসারদের অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে রাখা বল কিংবা শর্ট বলে পরাস্ত হয়েছেন মুমিনুল। সবশেষ চারটি অ্যাওয়ে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের ব্যাটিংয়ের এ দুর্বলতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

ঠিক একই চিত্র মঙ্গলবার দেখা গেল বাংলাদেশের অনুশীলনেও। উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে মিশন শেষে এখন টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাগতিক দল। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হলো প্রথম দিনের অনুশীলন। সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজ পর অনুশীলনে আসেননি প্রায় সব সিনিয়র খেলোয়াড়। সিনিয়রদের মধ্যে কেবল টেস্ট অধিনায়ক (ওয়ানডেতে ছিলেন না) মুমিনুলকেই দেখা গেল। শুরুতে রানিং করে কিছুক্ষণ ফিল্ডিং অনুশীলন করার পর ব্যাটিংয়েই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন তিনি।

মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম-প্রান্তের নেটে তখন ব্যাটিং করছিলেন সাইফ হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুন। তাদের ব্যাটিং শেষ হতেই নেটে আসেন মুমিনুল। অধিনায়ক নেটে আসার পর নেট বোলারদের সঙ্গে থ্রোয়ার দিয়ে বল ছুঁড়তে আসেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও। প্রথমেই অধিনায়ককে তিনি বলেন, 'তোমার জন্য ফিল্ডিংয়ে দুটি স্লিপ থাকছে। পাশাপাশি গালিও। এখন ব্যাটিং করো।'

একের পর এক বল থ্রো করে যাচ্ছেন কোচ। আর প্রতিটি বলই করছেন অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরে। অর্থাৎ সেই চতুর্থ ও পঞ্চম স্টাম্প লক্ষ্য করে বল ছুঁড়ছেন তিনি, মুমিনুলের দুর্বল জায়গায়। প্রথম সাতটি বল ছেড়ে দেওয়ার পর অষ্টম বলটি প্রথমবার খেলতে গেলেন মুমিনুল। সাফল্যের সঙ্গে রক্ষণাত্মক ঢঙে খেললেন। এর মাঝে নেট বোলার যারা বল করেছেন, তাদের মধ্যে যারা অফ স্টাম্পে বল রেখেছেন, তাদের সেসব বল মোকাবেলা করতেও হিমশিম খাচ্ছেন অধিনায়ক। একজনের বল তো তার ব্যাটের কানা ছুঁয়েই পেছনে গেল।

এটা দেখার পর ফিল্ডিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন করলেন কোচ। স্লিপে বাড়ালেন আরও একজন। সঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বললেন, 'তুমি দলের এখন শেষ ব্যাটসম্যান। যা করার তোমাকেই করতে হবে।'

বল ছুঁড়লেন দক্ষিণ আফ্রিকান ডমিঙ্গো। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বলটি কিছুটা বাড়তি বাউন্সও হয়। মুমিনুল এবার নিজেকে সামলাতে না পেরে গেলেন খেলতে। কিন্তু সম্পূর্ণ পরাস্ত হলেন। তাতে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন কোচ। ঝাঁঝাল কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, 'কেন মুমিনুল? কেন?'

এরপর বল থ্রো করা বন্ধ করে পাশে বসে পড়েন কোচ। হয়তো দলের অধিনায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানের এমন শট দেখে বিরক্ত। অথবা বিশ্রামও নিতে পারেন। ওইদিকে, নেট বোলারদের কিছু বল মোকাবিলা করে অনুশীলন পর্ব শেষ করেন মুমিনুল। নেটে তখন ব্যাট করতে নামেন নুরুল হাসান সোহান ও ইয়াসির আলি রাব্বি।

মুমিনুলকে পরক্ষণেই কোচ ডেকে নেন। কী বলছিলেন বা উপদেশ দিচ্ছিলেন, তা আন্দাজ করে নেওয়াই যায়! আলাপ শেষে  বাংলাদেশের সাদা পোশাকের অধিনায়ককে নিয়ে মাঠের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের নেটে চলে যান ডমিঙ্গো। একের পর এক অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে বল রাখছিলেন তিনি। মুমিনুলকে মিয়ে লম্বা সময় ধরে একই অনুশীলন চালিয়ে গেলেন। দুর্বলতার ইতি টেনে উইন্ডিজের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে শিষ্যকে সেরা ছন্দে যেন তার চাই-ই চাই।

অবশ্য, চট্টগ্রামের মাঠে বরাবরই দুর্বার মুমিনুল। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার করা নয় সেঞ্চুরির ছয়টিই এসেছে এ ভেন্যুতে। কিন্তু উইন্ডিজের দুই পেসার কেমার রোচ আর শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে হয়তো সতর্কতা অবলম্বন করতে চান কোচ। সেজন্যই হয়তো মুমিনুলকে প্রস্তুত করার বাড়তি আয়োজন ডমিঙ্গোর।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago