ঢাকার প্রস্তাবিত সার্কুলার রেললাইনে আরও বিস্তৃত পরিকল্পনা
ঢাকার চারপাশে সার্কুলার রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার। এই পরিকল্পনায় কেরানীগঞ্জ এবং পুরো পূর্বাচল অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগরীর চারপাশে সার্কুলার রেললাইন নির্মাণ সংক্রান্ত খসড়া সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন বলে নিশ্চিত করেছেন সভায় অংশ নেওয়া তিন জন সদস্য।
তারা জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা রাজধানীর রেল ভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় অংশ নেন।
খসড়া সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, ৮০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সার্কুলার রেললাইনটি বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ রিং রোড এবং রাজধানীর পূর্ব বাইপাস বাঁধ হয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জ জেলার কিছু অংশও এই রেললাইনের আওতায় পড়বে।
প্রস্তাবিত রুটটি হচ্ছে— বিশ্ব ইজতেমা মাঠ-উত্তরা-ঢাকা চিড়িয়াখানা-গাবতলী-মোহাম্মদপুর-সদরঘাট-পোস্তগোলা-ফতুল্লা-চাষারা-আদমজী-ডেমরা-ত্রিমোহনী-পূর্বাচল-টঙ্গী। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩৭ কোটি ডলার। (প্রতি ডলারে ৮৫ টাকা হিসাবে ৭১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা)
চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে একটি প্রতিষ্ঠান ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সম্ভাব্যতা জরিপ করেছে এবং প্রতিবেদনটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।
এই প্রকল্পে কেরানীগঞ্জকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা দেখতে বলেছেন রেলমন্ত্রী।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক রেল কর্মকর্তা জানান, বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে, সদরঘাটের লঞ্চ যাত্রীদের সুবিধার্থে এই রুটটি কামরাঙ্গীরচর-সদরঘাট-পোস্তগোলা-পাগলা-ফতুল্লা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা জানান, আরও একটি রুটের পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি হলো— কামরাঙ্গীরচর-ঝিলমিল উত্তর-বসুন্ধরা রিভারভিউ-ফতুল্লা। সেক্ষেত্রে, সার্কুলার রেললাইন সদরঘাটে যাত্রীদের বিশেষ সুবিধাটি দিতে পারবে না।
পূর্বাচলে এই রেললাইনের দুটি স্টেশন থাকলেও পুরো পূর্বাচলকেই এই প্রকল্পের আওতায় আনার বিষয়ে সম্ভবতা জরিপ করতে বলেছেন মন্ত্রী।
তবে সেক্ষেত্রে, রেললাইনটি শীতলক্ষ্যা নদীর ওপারে চলে যাবে। সেখানেও পূর্বাচলের অংশ রয়েছে। নদীর এপারে বসবাসকারী মানুষ নদী পার হয়ে এই রেল সেবা ব্যবহার করতে আগ্রহী নাও হতে পারেন বলে যোগ করেন তিনি।
প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য
গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের মতো পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে যারা ঢাকা এসে কাজ করেন, তাদের সুবিধার্থে সরকার একটি সার্কুলার রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রস্তাব করে।
বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় এই রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঢাকা শহরের যানজটও ব্যাপকভাবে কমে যাবে বলে জানান রেল কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, যারা ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে শহরের মাঝ দিয়ে যাতায়াত করতেন, তাদের আর শহরে ঢুকতে হবে না।
মেট্রোরেল, র্যাপিড বাস ট্রানজিট বা অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে যাত্রীরা শহরের ভেতরে তাদের কর্মক্ষেত্রে দ্রুত পৌঁছাতে পারবেন বলে জানান তারা।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রেল নেটওয়ার্কের ২৪টি স্টেশন থাকবে।
৮০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সার্কুলার রেললাইনটির প্রায় ১০ কিলোমিটার যাবে মাটির নিচ দিয়ে। স্টেশনগুলোর মধ্যে তিনটি থাকবে মাটির নিচে এবং বাকি ২১টি ওপরে।
খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেললাইনটি ২০৩৫ সালে প্রতিদিন ১০ লাখ ৬৫ হাজার এবং ২০৫৫ সালে প্রতিদিন ১৫ লাখ ৭৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
ডাবল লাইনের এই রেল নেটওয়ার্কে চলাচলকারী বৈদ্যুতিক ট্রেনগুলোর সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।
প্রকল্প নথি অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রাক-নির্মাণ প্রস্তুতি এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে সামগ্রিক নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০২৮ সালের সেপ্টেম্বরে রেললাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে এবং মোট নির্মাণকাল হবে ৭৫ মাস।
খসড়া প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বাস্তবায়নের উপযোগী।
Comments