লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ডমিঙ্গোর বিশেষ ক্লাস
ওয়ানডে সংস্করণে যেমন এগিয়েছে বাংলাদেশ, টেস্ট ক্রিকেটে ঠিক ততোটা আগাতে পারেনি বাংলাদেশ। এখনও এ সংস্করণে সংগ্রাম করতে হয় দলটিকে। দেশের বাইরে অবস্থা আরও করুণ। আর টেস্ট ক্রিকেটে ভালো ফলাফল পেতে আধুনিক ক্রিকেটে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু মোহাম্মদ রফিক, মাশরাফি বিন মুর্তজা, শাহাদাত হোসেনদের পর লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন খুব কমই।
গত দুই বছরে লোয়ার অর্ডারদের কাছ থেকে পাওয়া অবদানে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশই। এমনকি এটা টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের চেয়েও কম। র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের নিচে থাকা জিম্বাবুয়েরও বেশি। লেজের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে গত দুই বছরে ৭ টেস্টে মোট ৩৫৪ রান পেয়েছে বাংলাদেশ, গড় মাত্র ৯.৮৩। এই সময়ে আফগানরা পেয়েছে গড়ে ১১.৭৫ রান, আয়ারল্যান্ডের ১৮.২৬ আর জিম্বাবুয়ে ১১.৬২।
অথচ টেস্ট ম্যাচে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা অনেক সময়ই গড়ে দেয় বড় পার্থক্য গড়ে দেন। বাংলাদেশ এ সুযোগটা সাম্প্রতিক সময়ে যেন পাচ্ছেই না। আইসিসির টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে যাওয়ায় নিউজিল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান বড় অবদান রয়েছে। শেষ দুই বছরে ৮ থেকে ১১ নম্বরে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে গড়ে পেয়েছে ২৬.৩০ রান করে।
তাই উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট মিশনের আগে টাইগারদের লেজের দিকে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বিশেষ ক্লাস করলেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। অবশ্য এটাকে ডমিঙ্গোর ক্লাস না বলে লিটন দাসের ক্লাস বললেও ভুল হবে না। কারণ ইবাদত, খালেদ, মোস্তাফিজদের পরামর্শ বেশি দিচ্ছিলেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানই। অথচ সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাটিং কোচ জন লুইসও।
ইবাদত যখন ব্যাট করছেন তখন চিৎকার করেই লিটন বলছিলেন, 'ইবা, স্টান্সে একটু নিচু হয়ে দাঁড়া।'
ইবাদত অবশ্য কাজটা ঠিকভাবে করতে পারছিলেন না। শুরুতে লেগ স্টাম্পের গার্ড নিয়ে দাঁড়ালেন অফস্টাম্পে। বাংলাদেশের বিশ্লেষক শ্রিনিবাসন চন্দ্রশেখর বললেন, 'তুমি লেগ স্টাম্পের গার্ড নিয়ে অফ স্টাম্পে কেন দাঁড়িয়েছ?'
পরে গার্ড ঠিক করে ইবাদত। কিন্তু ব্যাটে বলে ঠিকভাবে করতে পারছিলেন না। লিটন বারবারই তার ব্যাটিং পজিশন ঠিক করে দিচ্ছিলেন। তখন পাশ থেকে নুরুল হাসান সোহান বলেন, 'মনে কর মিঠুন ভাই বল করছে, এবার খেল, পারবি।'
আর ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদ তখন লড়ছেন ২০ বলের চ্যালেঞ্জে। নেটে ঢুকতেই কোচ ডমিঙ্গো তাকে জানিয়ে দেন, শট না খেললেও চলবে, কিন্তু টিকে থাকতে হবে ২০ বল।
তবে কাজটা ঠিকভাবে করতে পারছিলেন না খালেদ। তখন ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক এগিয়ে গিয়ে বলেন, 'যখন শর্ট বল সামনে পাবে, পরিকল্পনা করে খেলতে হবে। খেলার বল পেলে শট খেলবে। সবকিছু পরিকল্পনা করে খেলতে হবে, তাহলে তুমি সফল হবে।'
মোটামুটি নিজের কাজটা খারাপ করেননি খালেদ। ১৫টি বল পার করে দিয়েছেন। তখন বাকী ৫টি। কোচ বললেন, 'আর পাঁচটি বল ছেলে, তুলে টিকতে পারবে।'
কোচের সাহসে যেন জ্বলে উঠলেন খালেদ। দারুণ এক শট খেললেন। চার নিশ্চিত। 'নাইস শট' বলে ডমিঙ্গোর চিৎকার। কুক তো দৌড়ে গিয়ে খালেদের সঙ্গে ফিস্ট বাম্প করলেন। অন্যসময় হলে হয়তো পিঠ চাপড়ে দিতেন। ফেরার সময় স্পষ্ট বাংলায় বললেন, 'বেশি ভালো, বেশি ভালো।'
২০ বলের চ্যালেঞ্জে টিকে গেলেন খালেদ। কোচ ডমিঙ্গোও খুশি, 'সুন্দর ব্যাটিং খালেদ, তুমি পেরোছো। এটাই চেয়েছিলাম।'
আর ওইদিকে খালেদের সুন্দর ব্যাটিংয়ে যেন বিরক্ত মোস্তাফিজ। কারণ অপেক্ষা বাড়ছিল তার, ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, 'তোর শেষ হয় না। তাড়াতাড়ি শেষ কর।' আর ব্যাট হাতে নিয়েই মোস্তাফিজ শুরুটা করলেন দারুণভাবে। শট খেলে বললেন 'এটা চার'। তবে চন্দ্রশেখর বলেন 'এটা দুই'। চন্দ্রশেখরের এমন কথায় নাখোশ কাটার মাস্টার। পরে চাইলেন কুকের সমর্থন, 'এটা চার তো। তুমি আমাকে সমর্থন করো।'
Comments