পাপুল ‘মাফিয়া বস’

MP Papul
শহিদ ইসলাম পাপুল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে পাঁচ মিলিয়ন দিনার সম্পদ করেছেন বলে দেশটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার কুয়েতের দৈনিক আল কাবাস’র বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতের তদন্তকারীরা বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ও মারাফি কুয়েতিয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে তদন্ত করে জানতে পেরেছেন যে দেশটিতে তিনি পাঁচ মিলিয়ন দিনার সম্পদ করেছেন।

তদন্ত চলাকালে পাপুল ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছিল উল্লেখ করে সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে জানা গেছে আসামি পাপুল একটি সংগঠিত চক্রের অংশ। এই চক্রটি এক কুয়েতি নাগরিক গড়ে তুলেছিলেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, পাপুল কুয়েতি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে শ্রমিক আনতেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া ও ওয়ার্ক ভিসার কথা বলে অবৈধভাবে ২,৫০০ থেকে ২,৭০০ দিনার নেওয়া হতো।

আল কাবাস’র বরাত দিয়ে দ্য টাইমস’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক কুয়েতে এনে আসমিরা ৫০ মিলিয়ন দিনারের বেশি আয় করেছেন।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল কুয়েতে এমপি পাপুলকে মানব ও অর্থপাচারের দায়ে চার বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা দিয়েছে দেশটির আদালত।

এতে আরও বলা হয়েছে, পাপুলের সহযোগী কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট আন্ডারসেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজেন আল-জারাহকেও একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

এ মামলায় কুয়েতের এমপি সাদৌন হাম্মাদ ও দেশটির সাবেক এমপি সালাহ খুরশিদকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় দৈনিকে বলা হয়েছে, এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানব ও অর্থপাচার, কুয়েতের আইন অমান্য করে কর্মী নিয়োগে জালিয়াতি ও ঘুষের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এতে আরও বলা হয়েছে, আইন অমান্য করায় সেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকরা কুয়েতে এসে দেখেন তাদের ভিসা নকল। তখন তাদেরকে জোর করে পাপুলের মালিকানাধীন অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ দেওয়া হয়।

প্রতিবেদন মতে, সাক্ষী দেওয়া শ্রমিকরা জানিয়েছেন, চুক্তিতে যে বেতন ও আবাসনের কথা বলা হয়েছিল তা না মেনে শ্রমিকদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় মানবেতর পরিবেশে কাজ করানো হতো।

কোনো শ্রমিক এর প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হতো এবং মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হতো।

সাক্ষীরা আরও বলেছেন, বাংলাদেশে এমপি পাপুলের মালিকানাধীন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে তাদেরকে কুয়েতে আনা হয়েছিল।

প্রতিবেদন মতে, তদন্তে আরও জানা গেছে এমপি পাপুল অবৈধ উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করতেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আয়ের উৎস গোপন রাখতেন এবং কুয়েতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে মানবপাচার করতেন।

পাপুল প্রথমে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন এবং কোনো অপরাধের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছিলেন। পরে, তার বাসা ও প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালিয়ে এসব অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল বলে সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাপুল ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে’ তার বন্ধুদের উপহার দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এর বিনিময়ে তারা তার প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।

পাপুল ‘মাফিয়া বস’র মতো কাজ করার অভিযোগেও অভিযুক্ত উল্লেখ করে সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিনি গরিব ও স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের  থেকে অর্থ আদায় করতেন।

পাপুলের লোকেরা শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৮ কুয়েতি দিনার করে ‘রয়েলটি’ আদায় করতো বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সাক্ষী ১১ বাংলাদেশি শ্রমিক আদালতকে জানিয়েছেন যে তারা শুধুমাত্র ভিসার জন্যেই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেননি, ভিসা নবায়নের জন্যেও অর্থ দিতেন।

প্রতিবেদন মতে, জেরা করার সময় পাপুল কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন দিনারের চেক দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।

পাপুল আরও এক কর্মকর্তাকে ১ মিলিয়ন দিনার নগদ দিয়েছেন ও অন্য এক কর্মকর্তাকেও কয়েক মিলিয়ন দিনার ভর্তি ‘ব্যাগ’ দিয়েছেন বলে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতের আদালত পাপুলের মাধ্যমে আসা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নিয়েছেন।

পাপুল ‘ভিসা বাণিজ্য’ করে যুক্তরাষ্ট্রে টাকা পাচার করেছেন বলেও প্রতিবেদনে রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত শুরুর আগে পাপুল যখন জানতে পারেন যে এই তদন্তে তার নাম রয়েছে তখন তিনি কয়েকটি সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক মিলিয়ন দিনার ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ব্যাংকে পাঠিয়েছেন।

সেসময় তিনি কুয়েত ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলেও সংবাদ প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন:

কুয়েতে এমপি পাপুলের ৪ বছরের কারাদণ্ড

মানব পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কুয়েতে গ্রেপ্তার

আমি নিষ্পাপ… কিন্তু কুয়েতের কর্মকর্তারা নন: এমপি পাপুল

এমপি শহিদকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কুয়েতের আদালতের

এমপি শহিদের বিরুদ্ধে কুয়েতে মামলা: অভিযুক্ত নারীর জামিন

এমপি শহিদের জালিয়াতির জবানবন্দি দিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরলেন ১১ শ্রমিক

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

6h ago