ঢাকার জনঘনত্ব নির্ধারণে পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে সরকার
বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যার ঘনত্ব জানা শহরের পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ধারণে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
মন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তত্ত্বাবধানে ২০ বছর মেয়াদী ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হচ্ছে। ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে জনসংখ্যা বাড়ালে শহরকে বাসযোগ্য রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে এ শহরের আয়তন, সড়ক ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে জনঘনত্ব নির্ধারণ করতে হবে। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ড্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে।’
তাজুল ইসলামের মতে, ভবনের উচ্চতা বাড়িয়েও ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব। তবে তার জন্য কর্তৃপক্ষকে রাজধানীর জনসংখ্যার ঘনত্বের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। প্রয়োজনের তুলনায় সড়ক অবকাঠামো নেই। আর ভবনের উচ্চতা বাড়ালে সড়ক অবকাঠামো সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে না। তখন শহরের যানজট বাড়বে। সে কারণে যতটুকু উচ্চতা হলে এ শহর বাস উপযোগী থাকবে, সে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে। কেননা সকলে মিলেই একটি শহর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হয়।’
‘আমরা ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর বানাতে চাই এবং সেজন্য যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করতে হবে। এ ছাড়াও, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। জলাশয়গুলো পরিষ্কার করতে হবে, অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। সেজন্য আমরা বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি’, বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘রাজউক ১০ লাখ মানুষের আবাসের কথা মাথায় রেখে পূর্বাচলে শহর গড়ে তুলছে। কিন্তু যেভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে ধারণা করা যায় যে, সেখানে অন্তত ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারবে। আর এটা হলে চার লেনের সড়ক হলেও তাতে যানজট নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এজন্য এসব বিষয় নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে ধাপে ধাপে এ শহরকে বাসযোগ্য করা সম্ভব হবে। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
ঢাকার খাল পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘খাল দখলমুক্ত করা বা রাখার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এটা জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সেই বিবেচনা করে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকার দুই মেয়রকে খালের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু, তৎকালীন দক্ষিণ সিটি মেয়র এ দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এজন্য সেসময় এটা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বর্তমান দুই মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাদেরকে বিষয়টি বুঝালে তারা দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহী হওয়ায় যুগান্তকারী এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে বিশ্বব্যাংকসহ অনেক দাতা সংস্থাও আমাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে আমরা নিজস্ব তহবিল দিয়ে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করব।’
তিনি বলেন, ‘পুরাতন বুড়িগঙ্গা চ্যানেলসহ সব অবৈধ অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে, রাজধানীতে যারা ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে পুরাতন বুড়িগঙ্গা চ্যানেলসহ খাল দখল করে অবৈধভাবে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।’
Comments