দ্বিতীয় চিঠিতে ইসির দুর্নীতির আরও তথ্য, রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চান ৪২ নাগরিক
সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল (এসজেসি) গঠন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন দেশের ৪২ নাগরিক।
এবার এসব অভিযোগের সপক্ষে অতিরিক্ত কিছু তথ্য দিয়ে দ্বিতীয় চিঠি দিয়েছেন তারা এবং রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সুবিধামতো সময়ে সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি এ চিঠিটি পাঠানো হয়।
এতে ইসির আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনে প্রচারিত সাত পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও নির্বাচন কমিশনের আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত কিছু প্রতিবেদনের লিংক সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব তথ্য সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ৯ মাসের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ ইলেক্টরাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের ভয়াবহ দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়ম সম্পর্কে ২০১৯ সালে বৈশাখী টেলিভিশনে ৭ পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনে বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা, কোর্স পরিচালক, কোর্স সমন্বয়ক, সহকারী সমন্বয়কসহ ‘বিতর্কিত’ ১৫টি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য চার জন কমিশনার, সচিব ও ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালকসহ কিছু উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে অন্যায় ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। প্রতিবেদনে ২০১৮-১৯ সালে অল্প কিছু কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ বাজেটের অন্তত ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়, এর মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারগণ, নির্বাচন কমিশনের সচিব, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রধানসহ মাত্র ১৮ জন কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে প্রকাশিত বক্তব্যে কমিশনের বর্তমান সচিবও এমন অর্থ ভাগাভাগি করে নেওয়ার নীতিগত দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, 'নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে এটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কমিশনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এটিকে স্বেচ্ছাচারিতামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে নয় কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের ট্যাক্সের টাকা অভিনব কৌশলে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার জন্য নয়, বরং নিরপেক্ষভাবে জনকল্যাণে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার জন্য। কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং প্রশিক্ষণ প্রদান তাদের রুটিন দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত, যার জন্য তারা সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই নিজেদের দাপ্তরিক পদবীর বাইরে নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে সাংবিধানিক স্বাধীনতার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা প্রশিক্ষণের নামে ভাগাভাগি করে নেওয়া দুর্নীতিমূলক চরম গর্হিত কাজ, যা সম্পর্কে অডিট আপত্তি উঠেছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আর একই কাজের জন্য দুইবার সুযোগ-সুবিধা নেওয়া আইনের ভাষায় ‘ডাবল ডিপিং’, যা অন্যায়, অনৈতিক ও গুরুতর অর্থসংশ্লিষ্ট অসদাচারণ।'
চিঠিতে ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, ‘আমাদের পূর্বের অভিযোগগুলির মতো এই আবেদনে উল্লেখিত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ক্ষমতা সংবিধান বা কোনো আইন আমাদের ওপরে ন্যস্ত করেনি। এই অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় নথি, রেকর্ড ও দলিল, প্রদেয় অর্থ ও অর্থ গ্রহণসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব লিখিত প্রমাণাদি নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তলব করতে পারে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একমাত্র সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল। অর্থাৎ কেবলমাত্র সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের যথাযথ তদন্তেই আমাদের অভিযোগুলির সত্যতা প্রমাণিত হতে পারে।’
আরও পড়ুন-
ইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: 'সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল' গঠনের আহ্বান ৪২ নাগরিকের
Comments