মিজানুর রহমান খান: কর্তা ও কৃতি
মিজানুর রহমান খানের সঙ্গে পরিচয় ২০০৭ সালে। ইমেইলের মাধ্যমে। তখন বিদেশে পড়াশোনা করছি। ২০০৯ সালে দেশে আসি এবং তার সঙ্গে দেখা করি। এই সম্পর্ক মৃত্যু অবধি অটুট ছিল। যেহেতু সংবিধান নিয়ে গবেষণা এবং সংবিধান বিষয়ক দলিলপত্রের অনুসন্ধান করা আমার গবেষণার মূল কাজ—এজন্য মিজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হওয়া অনেকটা অনিবার্য ছিল এবং হয়েছেও তাই।
অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির আগের সপ্তাহে তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা। হাইকোর্ট বার ভবনের সামনে রিকশা থেকে নামলাম। দেখি মিজান খুব দ্রুত পায়ে গেট দিয়ে বের হচ্ছেন। চলনে ব্যস্ততার গতি। চোখাচোখি হয়েছে। মিজান তার একান্ত নিজস্ব ও অননুকরণীয় স্নিগ্ধ হাসি ছুঁড়ে দিলেন। যারা মিজানকে চেনেন তারা জানেন তার এই শিশুসুলভ সারল্যপূর্ণ হাসির এক অদ্ভুত শক্তি ছিল। এই হাসি যেকারও হৃদয়ে উষ্ণ অনুভূতির সঞ্চার করতে সক্ষম ছিল। তার এই পরম মমতাপূর্ণ হাসি নিছক একটি ব্যবহারগত বহিঃপ্রকাশ ছিল না, অন্তরে তিনি যে সততাপূর্ণ, দৃঢ় ও অকপট মনোভাব পোষণ করতেন, তা এক প্রকার মনোভঙ্গি হয়ে হাসিতে ফুটে উঠত। তখন জ্বলজ্বল করত তার চোখ। তাকালে বোঝা যেতো অপার কৌতূহলী না হলে কারও চোখ থেকে এমন দৃষ্টি বিচ্ছুরিত হয় না।
এই যে অকপট মন ও অপার কৌতূহল, এ দিয়েই মিজান তৈরি ছিলেন। এই দুটি ছিল তার মৌলিক গুণ। এর সঙ্গে তিনি রপ্ত করেছিলেন অমানুষিক পরিশ্রমের ক্ষমতা। এসব মিলে একজন সংবাদ ভাষ্যকার হিসেবে তিনি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
মিজানের মৃত্যুর পর অযুত মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে অভিভূত হয়েছি। এই শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন মিজান। তবে, আশ্চর্যও হয়েছি, কেননা, বেঁচে থাকতে মিজান তার মৌলিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য কোনো স্বীকৃতি পাননি। বরং, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপমান, অপদস্থ হয়েছেন, এমনকি দণ্ড ভোগও করতে হয়েছে তাকে।
মিজানের সাংবাদিক ক্যারিয়ার ছিল ত্রিশ বছরের (১৯৯০-২০২০)। ২০০৫ সালের ১ নভেম্বর প্রথম আলোতে যোগ দেন। এর আগে যুগান্তর ও সমকালে ছিলেন মোট পাঁচ বছর। দৈনিক সমকালে ডেপুটি এডিটর ছিলেন, দৈনিক যুগান্তর, মুক্তকণ্ঠ ও বাংলাবাজার পত্রিকায় ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট ছিলেন। এর আগে তিনি ডেইলি নিউনেশন ও সাপ্তাহিক ঢাকা কুরিয়ারেও কাজ করেছেন। এই সময়ে মোটা দাগে তিনি তিনটি বিষয়ে— পররাষ্ট্র বা কূটনীতি বিষয়ক; আইন, বিচার ও সংবিধান বিষয়ক ও অন্যান্য সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বেশি লিখেছেন।
মিজানের মনোযোগ ও কাজের ক্ষেত্র ছিল বহুধাবিস্তৃত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক দলিলপত্রভিত্তিক গবেষণা ছিল তার অন্যতম আগ্রহের জায়গা। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে তার মৌলিক গবেষণা রয়েছে। আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগের অবমুক্ত করা বিপুল পরিমাণ গোপন দলিলের ওপর তিনি কাজ শুরু করছিলেন ২০০৫ সাল থেকে। এ বিষয়ে তার গবেষণালব্ধ একটি বই প্রকাশিত হয়েছে ২০০৮ সালে। মিজানের গবেষণায়ই প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলের সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে তৎকালীন ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকান কনস্যুলেট একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রণয়ন করেছিল। যে তদন্তে তারা দেখিয়েছে যে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত ছিল।
এসব ক্ষেত্রে অনেক নতুন ও অজানা তথ্যের ওপর মিজানের দখল ছিল সুবিদিত। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বিচারের সময় মিজানের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এই মামলায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি লিখিত জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালে সংগঠিত ক্যু’র সঙ্গে সিআইএর সম্পৃক্ততার বিষয়ে গবেষণা খুব কম হয়েছে। এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল লরেন্স লিফসুলজের। মিজান হলো প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি গবেষক যিনি এ বিষয়ে সবচেয়ে গভীর অনুসন্ধানমূলক গবেষণা করেছেন। ২০১৩ সালে এই বিষয়ের ওপর তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণা কাজের জন্য মিজান ২০১২ সালে টানা দুই মাস আমেরিকায় থেকেছেন এবং ইউএস ন্যাশনাল আর্কাইভসে কাজ করেছেন। তার এই গবেষণায় আমরা প্রথম জানতে পেরেছি যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের মূল হোতাদের দুই জন ১৯৭৩ সালেই অস্ত্র কেনার অজুহাতে ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসে গিয়েছিল এবং এসময় তারা ক্যু ঘটানোর জন্য আমেরিকার সহায়তা কামনা করে।
নব্বই দশকের প্রথমার্ধে পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি বিষয়ক লেখালেখি দিয়ে মিজানের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল। সেখানে তিনি তার নিজস্ব পরিচিতি ও অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, কার্যকরী ও বাংলাদেশে সম্পূর্ণরূপে অকর্ষিত একটি বিটের সন্ধানলাভ করতে তার দেরি হয়নি। সেটি হলো আইন, বিচার ও সংবিধান বিষয়ক বিট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক আন্দোলন ও এ বিষয়ে সাংবিধানিক ধোঁয়াশা, বিতর্ক ইত্যাদি মূলত মিজানকে এই আনকোরা একটি বিটের প্রতি স্থায়ীভাবে আগ্রহী করে তুলেছিল। জাত-সাংবিধানিক হিসেবে বিষয় নির্ধারণের পারঙ্গমতা ও সেই বিষয়ের হৃৎপিণ্ড ধরে টান দেওয়ার যোগ্যতা তিনি আগেই অর্জন করেছিলেন। এবার এই নতুন বিটের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজন ছিল শুধু আইন, জুরিসপ্রুডেন্স ও ইতিহাস বিষয়ক পড়াশোনা। এই প্রস্তুতি তিনি খুব সক্ষমতার সঙ্গে এবং দ্রুত নিতে পেরেছিলেন। মিজানের এই বিট ট্রান্সফরমেশনের সবচেয়ে ভালো সাক্ষী হলো তার প্রথম বই ‘সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক’ (মার্চ, ১৯৯৫)। দল-নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির যে আন্দোলন তখন হয়েছিল তার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল বা ডকুমেন্টেশন হলো মিজানের এই বই।
মিজান ব্যক্তিগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দিগ্ধ ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বহু আগে থেকেই তিনি এর অগণতান্ত্রিক দিকগুলো ও ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থার বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনা বিষয়ে সরব ছিলেন। তার মতে ‘এই ব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে এখন পর্যন্ত যে সাতটি বই লেখা হয়েছে এদের মধ্যে মিজানের বইটি সবচেয়ে মৌলিক ও চিন্তার ব্যাপ্তিতে সুবৃহৎ। ২০১৬ সালে চা খেতে খেতে এক আড্ডায় তিনি কিছুটা তৃপ্তি ও গর্বের সঙ্গে জানিয়েছিলেন বইটি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ২০০৮ সালে তার এই বইকে ডিজিটাইজড ভার্সন করে তাদের লাইব্রেরিতে সংযোজন করে ও বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ওপর রেফারেন্স বইয়ের মর্যাদা প্রদান করে। এজন্য তিনি এর একটি সম্পূর্ণ নতুন ও বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করতে চান। বলা বাহুল্য, মিজান তা করতে পারেননি। মিজানের মাথায় এত নতুন ও মৌলিক সব লেখার রসদ ছিল যে বহু পরিকল্পনা করেও তিনি আগের কোনো লেখার সম্পাদনার কাজের জন্য সময় করে উঠতে পারেননি।
বিচারব্যবস্থা নিয়ে তার একটি প্রবন্ধ সংকলন বেরিয়েছিল ২০০৩ সালে। এর পর তিনি আরও প্রায় শ পাঁচেক প্রবন্ধ বা কলাম লিখেছেন। দেখা হলেই আমি তাড়া দিতাম তার প্রকাশিত কলামগুলো নিয়ে আরেকটি সংকলন প্রকাশের। এর প্রয়োজনীয়তা তিনি সবসময় স্বীকার করতেন ও তাড়া দিলেই নড়েচড়ে বসতেন, কিন্তু এ-যে মিজান। নিত্যনতুন লেখা নিয়ে তিনি ব্যস্ত। পেছন ফেরার অবসর কোথায় তার? এরকম আরও বহু অসমাপ্ত কাজের স্মৃতি তার সঙ্গে আছে। তবে, তার এলএলবি কোর্স সম্পন্ন না করতে পারার বিষয়টি উল্লেখ করা দরকার। আমার সঙ্গে পরিচয়ের শুরুর দিকে লক্ষ্য করেছি, তিনিও মনে করতেন যে তার এই ডিগ্রিটি নেওয়া দরকার। আমি বিপুল উৎসাহ দিতাম। তিনি ভর্তিও হয়েছিলেন, কিন্তু কোর্স সম্পন্ন করার মতো অগ্রগতি হচ্ছিল না। অনেকদিন পর একদিন তার ডেস্কে বসে কথায় কথায় বললাম, আপনার জন্য এই ডিগ্রি নেওয়া নেহাতই নিরর্থক। এটি আপনার দরকার নেই। আইন ও বিচারব্যবস্থা বিষয়ক কাজ করার জন্য আইনের তথ্যগত ও তত্ত্বগত জ্ঞানকাণ্ডের ওপর যে দখল অর্জন করা দরকার, সেটি আপনি বহু শ্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আত্মস্থ করে ফেলেছেন। আমার এই মন্তব্যে শুনে মিজান সেদিন কিছু বলেনি, তবে তার চোখে ও মুখে আমি সেই বিনয়মিশ্র হাসির ঢেউ খেলে যেতে দেখেছি। তবে তর্কের খাতিরে এও মেনেছি যে, আমাদের সমাজে পাণ্ডিত্যের চেয়ে ডিগ্রির দাম বেশি। মিজানের এলএলবি শেষ হয়নি, ভালোই হয়েছে। তবে, মিজানের ছেলে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্টসহ এলএলবি পাস করেছে। তাকে নিয়ে মিজানের অনেক স্বপ্ন।
মিজান সাংবাদিক ছিলেন এবং ঈর্ষণীয় পর্যায়ের দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিক মিজানের অভাব হয়তো পূরণ হবে, কিন্তু পূরণ হবে না অন্য একটি জায়গা। সেটি হলো, বাংলা ভাষায় লিগ্যাল কমেন্টারি বা আইনভাষ্য পরিবেশনের মতো যোগ্য ব্যক্তির অভাব। আরেকজন মিজান আমরা সহজে পাব না। সাধারণ (নন ল’) মানুষের বোঝার ও যুক্ত হওয়ার মতো উপযুক্ত করে আইনের বিষয়-আশয় উপস্থাপনের জন্য কার্যকর একটি গদ্যভাষার নির্মাতা ছিলেন মিজান। এটি তার একান্ত নিজস্ব সাধনার ফল ছিল। দৈনিক পত্রিকার জন্য আইনি, সাংবিধানিক ও বিচার বিভাগীয় জটিল ইস্যুগুলোর এরকম প্রাঞ্জল উপস্থাপন তার আগে সম্ভব হয়নি। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তার পক্ষে এরকম একটি গদ্যভঙ্গি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল যে কয়টি কারণে তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো তিনি প্রথাগত আইনের ডিগ্রিধারী ছিলেন না। ফলে, তার পক্ষেই সম্ভব ছিল আইনের জনভাষ্য নির্মাণের একটি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর গদ্যের সন্ধান পাওয়া। প্রচলিত লিগ্যাল অ্যাকাডেমিয়ায় প্রশিক্ষিত হলে এটি সম্ভব হতো না হয়তো। এটি বোঝা যায় এই তথ্য থেকেও যে, বাংলা অঞ্চলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলা ভাষায় আইন চর্চা হচ্ছে প্রায় একশ পঁচাশি বছর (১৮৩৬-২০২০) ধরে। এদেশের উচ্চশিক্ষা স্তরে পাঠক্রম হিসেবে পড়ানো হয় যে কয়টি বিষয় এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হলো আইন। কিন্তু এই প্রায় দুই শতাব্দীতেও আমরা আইনের বিষয়ে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো লেখা পাইনি। এর মূল কারণ হয়তো এই যে, আইনের মতো জটিল একটি বিষয়ের উপস্থাপনের জন্য একটি জুতসই গদ্যভাষার অভাব। প্রায় ত্রিশ বছরের বিরতিহীন সাধনায় বহু ভেঙে চুরে মিজান তা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্যই তার কলাম এত জনপ্রিয় ছিল। মিজানের কলাম যে ব্যতিক্রমী ছিল একথাই সবাই স্বীকার করেন। তিনি তার কলামে প্রচুর তথ্য ও রেফারেন্স ব্যবহার করতেন (যা সচরাচর দৈনিক পত্রিকার কলামে করার নিয়ম নেই) সেও আমরা জানি। তারপরও সকলেই তার কলাম গ্রহণ করেছিল এর কারণ তার পরিবেশনরীতি; এবং তা সম্পূর্ণরূপে মিজানের নিজস্ব উদ্ভাবিত। এজন্য তাকে বাংলায় ব্যবহার উপযোগী অনেক আইনি পরিভাষায় সন্ধান ও সেগুলোর প্রয়োগ করতে হয়েছে। এবং একাজে তিনি সফল হয়েছেন।
আমার ধারণা বাংলা ভাষায় আইন বিষয়ক লেখালেখির কৃতিত্বের সঙ্গে মিজানের একমাত্র পূর্বসূরি ছিলেন গাজী শামসুর রহমান (১৯২৪-১৯৯৭)। তিনি প্রায় একক চেষ্টায় বাংলাদেশে প্রচলিত সকল আইনের বাংলা অনুবাদ ও বাংলা ব্যাখ্যার এক মহাসংগ্রহশালা নির্মাণ করে গিয়েছিলেন। তবে, তার সেই কাজ ছিল বিশুদ্ধভাবে লিগ্যাল অ্যাকাডেমিক কাজ যেটি আইনজীবী, বিচারক, আইন-শিক্ষার্থীদের অধীত শাখার অন্তর্ভুক্ত। মিজানের কৃতিত্ব হলো তিনি বাংলা ভাষায় আইন আলোচনাকে অ্যাকাডেমিক শৃঙ্খলমুক্ত করতে পেরেছেন সক্ষমতার সঙ্গে।
মিজান বিচার বিভাগের প্রেমে পড়েছিলেন। তার ক্ষুরধার বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়ে আইন, আদালত, সংবিধান, নজির প্রভৃতির বিষয়ে অজস্র লেখালেখি করে গেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল তার অনড় আস্থা। আগে যেমন বলা হয়েছে, তিনি যে-বিষয় ও যে-ভাষায় তার বক্তব্য উপস্থাপন করতেন বাংলা ভাষায় ও বাংলাদেশে এরকম নজির ছিল না। ফলে, কিছু ক্ষেত্রে তিনি ভুল বোঝাবুঝিরও শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে চারবার তাকে উচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় আসামি হিসেবে দাঁড়াতে হয়েছিল। তার যেসব কলামের বিষয়ে এই অভিযোগগুলো উঠেছিল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান প্রশাসনিক স্বচ্ছতার মানদণ্ডে সেগুলোতে দোষের কিছু ছিল না। তবুও মিজানকে জবাবদিহি করতে হয়েছে, অপদস্থ হতে হয়েছে, শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। কেননা আমাদের আইন ও বিচার কাঠামোগত প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতার মানদণ্ড এখনও সুবিদিত নয়। এখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও স্বচ্ছতার নিক্তিতে নয়, কারো ব্যাখ্যা বা মন্তব্যকে মাপা হয় ‘স্পর্শকাতরতা’র মানদণ্ডে। এই দুটি মামলার কারণে মিজানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়েছিল। তার আইনজীবী ছিলাম না, তবে এসব মামলা মোকাবিলার আইনি বিষয়-আশয় সম্বন্ধে আলোচনা হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনো মনে হয়নি যে, এই মামলাগুলোর কারণে যে ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে তিনি যাচ্ছেন সেজন্য তিনি ক্ষুব্ধ। তবে, সংবিধান ও আইনের শাসনের রক্ষক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যে উদারতা ও বিস্তৃত দূরদৃষ্টি থাকা দরকার তার অভাব দেখে তিনি ব্যথিত হতেন। এই ব্যথা আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারতাম। যেকোনো তর্কে উচ্চস্বরে কথা বলা, ও গগণবিদারী হাসি ছিল মিজানের পরিচিত স্টাইল; কিন্তু নানা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও আইনের শাসনের বিচ্যুতি ইত্যাদির কারণে তার হৃদয়ে যে সুগভীর বেদনা তিনি লালন করতেন সেটি তার ঘনিষ্ঠজনরা অবগত ছিলেন।
সংবিধান, আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি মিজানের যে নিবেদন ছিল তা অতুলনীয়। শত আঘাতেও তার সেই নিবেদনে চির ধরেনি। বিচার বিভাগও যে তাকে ধারণ করত তার প্রমাণ আমরা পেলাম তার মৃত্যুর পর। সুপ্রিম কোর্ট বারের ইতিহাসে মিজান একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই বারের সদস্য ছিলেন না, কিন্তু তারা তার জানাজার আয়োজন করেছে। আইন অঙ্গনের সকলের তরফ থেকে ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শিত হয়েছে, তা অতুলনীয় ও অভূতপূর্ব।
একটি অনুবাদ বইসহ এখন পর্যন্ত মিজানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়। যেমন: সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক, সিটি প্রকাশনী, ১৯৯৫; বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপ, মৌলি পাবলিশার্স, ২০০৩, (১১৮টি প্রবন্ধ); ১৯৭১: আমেরিকার গোপন দলিল, সময় প্রকাশন, ২০০৮; তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: এক অশনি সংকেত, আগামী প্রকাশনী, ২০১০ (৫৩টি প্রবন্ধ); এবং মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড, প্রথমা প্রকাশনী, ২০১৩। আর গত পনেরো বছরে লিখেছেন প্রায় পাঁচ শ কলাম ও প্রবন্ধ। এছাড়াও পাণ্ডুলিপি (যেমন: অজানা মুজিব) প্রস্তুত এরকম কিছু কাজ আছে বলে অনেক সময় গল্পে গল্পে জানিয়েছেন।
বিভিন্ন জার্নালে প্রায় ত্রিশটির বেশি প্রবন্ধ আছে মিজানের। দেশে ও বিদেশে বহু আন্তর্জাতিক সেমিনারেও তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। যেমন: ১৯৯৮ সালে শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে পাকিস্তান ও ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কৌশলগত গুরুত্ব ও ফলাফল বিষয়ে তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন (প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যৌথভাবে)। এই প্রবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল সোশ্যাল সাইন্স রিভিউতে প্রকাশিত হয়েছে (ডিসেম্বর ২০০১, খণ্ড ১৮, সংখ্যা-২, পৃ.৩-১৬।)
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ২০০১ সালে মিজান ভারত ভ্রমণ করেন। ২০০২ সালে চীনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ার এথ্নিক মাইনরিটি বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।
২০০৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত ইংরেজি থেকে বাংলায় আইন অনুবাদের একটি প্রকল্পে তিনি কাজ করেছেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ ড. মরিস ডি. জিগারের অধীনে।
২০০৩ সালে পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে তিনি পাকিস্তান ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ পাকিস্তান সম্পর্ক ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি স্থাপনের কৌশলগত পন্থা ইত্যাদি বিষয়ক সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
২০০৪ সালে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের আমন্ত্রণে মিজান আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন। এবছরই ব্রিটিশ ফরেন অফিস আয়োজিত একটি ওয়ার্কশপে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি হাউজ অব কমন্সের কার্যপ্রণালী দেখে অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন।
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভবিষ্যৎ ও পারমাণবিক অস্ত্রনীতি বিষয়ক আলোচনার অংশগ্রহণ করেছেন ২০০৬ সালে (১৯-১২ সেপ্টেম্বর)।
২০০৭ সালে নরওয়ে ও ইন্দোনেশিয়ার সরকারের যৌথভাবে আয়োজিত ও বালিতে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইন্টার-মিডিয়া ডায়ালগ কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।
২০০৯ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রুহুল আমীনকে তিনি একটি অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত শুরুর অনুরোধ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তার অনুরোধে সেই তদন্ত সম্পন্ন করেছে এবং তদন্তের ফলাফল লিখিতভাবে ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে (স্মারক নং ১৯২৬) তাকে অবহিত করা হয়।
২০১৩ সালে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে তিনি একটি সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। সেই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
১ নভেম্বর ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে বাংলাদেশ আইন সমিতি কর্তৃক একটি জাতীয় পর্যায়ের সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ বা কি-নোট পেপার পাঠ করেছিলেন তিনি। এই আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক, সিনিয়র আইনজীবী ও অন্যতম সংবিধান-প্রণেতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম প্রমুখ।
২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হোটেলে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় তিনি মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। বিষয় ছিল সাংবিধানিক সংস্কার, গণতন্ত্র ও সুশাসন। এই আলোচনায় অন্যতম আলোচক ছিলেন সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম এবং আইন, বিচার ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন, প্রমুখ। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত একটি সেমিনারে তিনি ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাত বছর’- এই শিরোনামে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।
২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি আইন ও বিচারব্যবস্থা বিষয়ক একটি আলোচনার আয়োজন করে। সেখানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. কামাল হোসেন ও এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় মিজানকে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে তিনি চীন ভ্রমণ করেন।
প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের আইন পেশায় পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার আইনি চিন্তা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের নেপথ্য ইতিহাস ও বাহাত্তরের সংবিধান তৈরির নানা অজানা তথ্যের সংগ্রহে একটি সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। মিজান ছিলেন সেই গ্রন্থের সম্পাদক। এমনসব বিরল সম্মানলাভের সৌভাগ্যও তার হয়েছে। মিজানকে মুখ্য বক্তা বা আলোচক হিসেবে নির্ধারণ করে বহু প্রতিষ্ঠানে ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি হলো স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, দ্য পিপলস্ ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।
এইসব মিলে মিজানের সৃষ্টিশীল কাজ কম নয়। এগুলোর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ হওয়া দরকার। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সাংবিধানিক ও আইনি বিষয়ে (যেমন: আইনের শাসন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন গঠন, নির্বাহী ক্ষমতার সীমা, নির্বাচন ব্যবস্থার সাংবিধানিক স্বরূপ, সংসদের কার্যক্রম ইত্যাদি) তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিজাত মৌলিক ব্যাখ্যা ছিল। সাংবিধানিক সংস্কার ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারের পক্ষে জনমত গঠনে তিনি আজীবন চেষ্টা করেছেন। মিজানের সকল লেখালেখি এক সঙ্গে করতে পারলে দেখা যাবে এই সময়ে বাংলা ভাষায় তিনি সবচেয়ে শক্তিশালী আইন চিন্তক হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ছিলেন।
মিজান ছিলেন আমাদের মাইকেল জেন্ডার (জন্ম ১৯৩২)। মাইকেল জেন্ডার ১৯৬৩ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার লিগ্যাল করেসপন্ডেন্ট ছিলেন এবং এই সময়ে প্রায় ১৪০০ আইন বিষয়ক কলাম লিখেছেন।
ইংল্যান্ডের বিচারব্যবস্থার সংস্কার আন্দোলন ও সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের পেছনে তার সেসব শক্তিশালী কলামের প্রভাব ছিল। মিজানও সেই উচ্চতায় পৌঁছানোর কাছাকাছি ছিলেন। দক্ষ আইনজীবীর মতো যুক্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তিনি নির্ভুল ছিলেন না, কিন্তু আইন এবং আইনের বিভিন্ন নীতি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব চিন্তা এবং অনুধাবনের একটি ক্ষেত্র নির্মাণ করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। এবং সেগুলোর ভিত্তিতেই তিনি শতশত পৃষ্ঠা লেখালেখি করেছেন। তার এসব লেখালেখি বাংলা ভাষায় আইন বিষয়ক লিটারেচার হিসেবে কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে সবচেয়ে বড় অবদান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিকত্ব এত প্রকট যে, সেগুলো ভবিষ্যতে আমাদের আইন-বিষয়ক চিন্তার ও কতিপয় সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে। তার অসমাপ্ত কাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এযাবৎ তার লিখিত সকল কলাম বা প্রবন্ধকে একসঙ্গে করে বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশ করা। অন্তত এই কাজটি করতে পারলে মিজানের প্রতি আমরা যে বাঁধভাঙ্গা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করেছি, সেই ভালোবাসার প্রতি কিছুটা হলেও ঋণ শোধ করা সম্ভব হবে।
মিজান ছিলেন সত্যিকারের একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল। ভবিষ্যতে তার এসব কর্মকাণ্ডের আরও গভীর ও কার্যকর মূল্যায়ন হবে এ আমার নিশ্চিত বিশ্বাস।
আরিফ খান: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সম্পাদক, মাসিক লিগ্যাল ইস্যু
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)
Comments