এখনকার মোস্তাফিজকে আগের চেয়ে বেশি ভালো লাগছে বিশপের

উইন্ডিজ কিংবদন্তির সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি, পেসারদের করণীয়সহ আরও কিছু বিষয়ে, তা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
fizz and bishop

ওয়েস্ট ইন্ডিজে ফাস্ট বোলিংয়ের ঐতিহ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যারা পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ইয়ান বিশপ। খেলা ছাড়ার পর ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তিনি অর্জন করেছেন সুনাম। ক্যারিবিয়ানদের চলমান বাংলাদেশ সফরে ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন ৫৩ বছর বয়সী  সাবেক তারকা। ক্রিকেট ইতিহাসের খ্যাতিমান এই চরিত্রের সঙ্গে একান্ত আলাপে মেতেছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের ক্রীড়া সাংবাদিক মাজহার উদ্দিন। উইন্ডিজ কিংবদন্তির সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি, পেসারদের করণীয়সহ আরও কিছু বিষয়ে, তা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

স্টার: ভালো ক্রিকেট সংস্কৃতি বলতে আসলে কী বোঝায় এবং বাংলাদেশ কীভাবে নিজেদেরটার উন্নতি করতে পারে?

বিশপ: সংজ্ঞা অনুসারে, দলগত সংস্কৃতি বলতে ‘একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে বিরাজমান মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস এবং আচরণের সমষ্টি’কে বোঝায়। আমি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার এতটা ঘনিষ্ঠ কেউ নই যে, তাদেরকে আমি উপদেশ দিতে পারি। বাংলাদেশ বেশ কিছু সময় ধরে সাদা বলের সংস্করণে ধীরে ধীরে উন্নতি করে চলেছে। তাই আমি নিশ্চিত যে, তাদের দুর্দান্ত ও অভিজ্ঞ পরিচালকবৃন্দ নিজেদের প্রয়োজন সম্পর্কে অবগত।

যদি কোনো যুব ক্লাব বা স্কুল দলের কাজে লাগে, সেক্ষেত্রে নীতিগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো কঠোর পরিশ্রম, একে অপরের সাফল্যের অংশীদার হওয়া, প্রতিটি খেলোয়াড়ের সর্বদা উন্নতির পথের খোঁজ করা, একে অপরের কাছে দায়বদ্ধ থাকা, দল কী খেলতে চায় এবং কীভাবে খেলতে চায়, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদির সংস্কৃতি গড়ে তোলা। সংস্কৃতির বেশিরভাগ অংশই দলের সিনিয়র খেলোয়াড় ও নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। সিনিয়ররা যখন এসব পালন করবে, তখন অন্যরা সহজেই অনুসরণ করবে।

স্টার: আপনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যুব দলকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এই ক্রিকেটারদের তৈরি করতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোন দিকগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

বিশপ: বিশ্বকাপ জয়ের পথে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলটি খুব চিত্তাকর্ষক ছিল। ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের আরও একটি ইঙ্গিত এটি। শরিফুল ইসলাম ইতিমধ্যে সিনিয়র দলে ঢুকে পড়েছেন এবং আমি আশা করি, আকবর আলী খুব শিগগিরই তার সঙ্গে যোগ দেবেন। মাহমুদুল হাসান জয়, তৌহিদ হৃদয়- এদের সবার প্রতিভা আছে। ওই অনূর্ধ্ব-১৯ দলটির মাঝে আমি সবচেয়ে বড় যে জিনিসটি দেখতে পেয়েছি, তা হলো ওরা অকুতোভয়। আমার মনে আছে, জয়ের পরে খালেদ মাহমুদের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত কথোপকথন হয়েছিল এবং আমার মনে হয়, এই প্রতিভাবান দলটির কী কী প্রয়োজন, সেদিকে তার তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে।

স্টার: বাংলাদেশ এখনও খুব দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার তৈরি করতে পারেনি। একজন তরুণ পেসারের বিকাশের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী হবে?

বিশপ: বিসিবি যখন কাঙ্ক্ষিত গতির একজন বোলারকে খুঁজে পাবে- হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামদের সবারই দক্ষতা এবং গতি আছে- বোর্ডকে অবশ্যই সেই খেলোয়াড়দের প্রতি নির্দিষ্ট মনোযোগ দিতে হবে এবং সেভাবেই তাদের তদারক করতে হবে। এর অর্থ যদি হয়, এই তরুণ খেলোয়াড়দের তাদের ঘরোয়া পরিবেশ থেকে কিছু সময়ের জন্য সরিয়ে নিয়ে শক্তিশালী করা, হৃষ্টপুষ্ট করা ও যত্ন নেওয়া, তাহলে অবশ্যই সেটা হওয়া উচিত।

(বোলিং কোচ) ওটিস গিবসন তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শক্তি ও উপযুক্ত কন্ডিশন এই তরুণ বোলারদের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশ যদি এমন বোলারদের বিকাশ ঘটাতে না পারে যারা ১৪০ কিলোমিটার বা এর কাছাকাছি বেগে বোলিং করতে পারে, তবে উপমহাদেশের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব হবে না। দ্রুতগতির পিচগুলো যদি আলোর মুখ দেখে, তাহলে এটি ফাস্ট বোলিংকে উৎসাহিত করবে এবং ব্যাটিংয়ের মানও উন্নত হবে। আমি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে এই কাজটি করতে দেখেছি।

স্টার: আপনি মোস্তাফিজুর রহমানকে অতীতে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দেখেছেন। দ্য ফিজকে নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

বিশপ: আমি আগের বছরগুলোর চেয়ে এখনকার মোস্তাফিজকে বেশি পছন্দ করছি। নতুন বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দিকে বল ঢোকানোর তার যে দক্ষতা, সেটা কাটারের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে দারুণ একটি সম্পদে পরিণত হয়েছে। তার গতি ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে এবং তাকে ভালো ছন্দে দেখা যাচ্ছে।

স্টার: উপমহাদেশের কন্ডিশন পেসারদের জন্য সবসময় আদর্শ নয়। একজন তরুণ পেসারকে কীভাবে এর থেকে সেরাটা আদায় করে নিতে হবে?

বিশপ: এশিয়ায় বোলিং করতে হলে দুর্দান্ত ফিটনেস লাগবে। উপমহাদেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের পিচ রয়েছে। কিছু কিছু সময় পিচ পেসারদের সহায়তা করে এবং কোথাও কোথাও বল স্যুইং করে। সাধারণত, আপনি যখন ধীরগতির কোনো পিচ পাবেন, তখন পিচ যতই শুষ্ক হোক ও গতি কমে যাক না কেন, কখন স্টাম্প বরাবর বোলিং করতে হবে, সেটা আপনাকে জানতে হবে।

সাধারণ স্যুইংয়ের পাশাপাশি রিভার্স স্যুইং শিল্পটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মরা পিচে পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রে এটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। তাছাড়া, এসব পিচ তাদের বৈশিষ্ট্যের কারণে রিভার্স স্যুইংকে সাহায্য করে থাকে। বোলার হিসেবে আপনার খুব বেশি গতি ও দক্ষতা না থাকলে কিছু কিছু এশিয়ান পিচে ধৈর্যও একটি ভালো গুণ হতে পারে।

স্টার: আসন্ন দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কাছে আরও ভালো প্রদর্শনীর প্রত্যাশা আপনি নিশ্চয়ই করছেন?

বিশপ: আমি আশাবাদী। যে কোনো প্রাক্তন খেলোয়াড়ই এটা বলবে যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডের চেয়ে টেস্টে ভালোভাবে মানিয়ে নেয়। তবে এটা কঠিন হবে। কারণ, তাদেরকে সাম্প্রতিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো ব্যাটিং করতে হবে। তবে সমস্ত সামর্থ্য ও দক্ষতা নিয়ে বোলিং বিভাগকেই সামনে এগিয়ে আসতে হবে। শেষ চারটি টেস্ট ম্যাচে ২০ উইকেট তুলতে না পারলেও প্রচুর রান দিয়েছে তারা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago