টিকাদান কর্মসূচি

স্বাস্থ্যকর্মীরা ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মস্থল ত্যাগ ও ছুটি নিতে পারবেন না

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সোমবার বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির জন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউ কর্মস্থল ত্যাগ ও ছুটি নিতে পারবেন না।
দেশের ইতিহাসে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। ছবি: ভিডিও কনফারেন্স থেকে নেওয়া

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সোমবার বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির জন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউ কর্মস্থল ত্যাগ ও ছুটি নিতে পারবেন না।

জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং মেডিকেল কলেজের পরিচালকদের সঙ্গে অফিস থেকে অনলাইন সভা শেষে একথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, সরকারি ছুটির দিনে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রস্তুত আছে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন। যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদের মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা সহায়তা করবেন।’

এ সময় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ঢাকা জেলার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে চার লাখ টিকা।

আরেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, তিনিসহ টিকা নেওয়া সকলেই সুস্থ আছেন।

এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনায় আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ প্লে-স্টোরে চলে আসবে বলে রোববার জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান তিনি।

ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা অ্যাপ প্রস্তুত রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই গুগল প্লে-স্টোরে অ্যাপটা আপলোড করেছি। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এটা অনুমোদন হয়ে যাবে। তখন থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।’

‘আপাতত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলছে। আর যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদের উপজেলা পর্যায়ে সহায়তা করবে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা’, বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আরও বলেন, ‘আজকালের মধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় টিকা পৌঁছাবে। বেক্সিমকো ফার্মা আমাদের বলেছে আজকালের মধ্যে তারা জেলায় জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে। সারাদেশে টিকা প্রয়োগের সব সরঞ্জামও প্রস্তুত আছে। টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের বুথগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে।’

টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাত হাজার ৪০০টি দল কাজ করছে বলেও জানান ডা. খুরশীদ আলম।

রাজধানীর একটি হাসপাতালে গত বুধবার বহুল কাঙ্ক্ষিত কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচ জনকে টিকা দেওয়া হয়।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়।

কোভিড-১৯ টিকার ডোজপ্রাপ্ত অন্য চার জন হলেন— হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অ্যাডমিন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের সদস্য (মতিঝিল অঞ্চল) দিদারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৭০ লাখ ডোজ এসেছে। বাংলাদেশ প্রথমে ভারতের উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার ২০ লাখ ডোজ পেয়েছিল। এ ছাড়া, ক্রয় করা ‘কোভিশিল্ড’র প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজও ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, সম্ভাব্য টিকা গ্রহণকারীরা হলেন চার লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর সবাই এবং ছয় লাখ বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী (অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের), যারা সরাসরি কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত আছেন।

সেইসঙ্গে অগ্রাধিকারের তালিকায় দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য্য ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৫০ হাজার গণমাধ্যমকর্মী, এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দেড় লাখ কর্মচারী, পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি এবং জরুরি সেবার (পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবহন) চার লাখ কর্মী রয়েছেন।

এ ছাড়া স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের দেড় লাখ কর্মী, এক লাখ ২০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জেলা ও উপজেলায় কর্মরত চার লাখ জরুরি সেবার সরকারি কর্মচারী, এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যান্সার) ছয় লাখ ২৫ হাজার জনগোষ্ঠী, ৬৪ থেকে ৭৯ বছর বয়সী এক কোটি তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন্য ব্যক্তি, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়াড় ২১ হাজার ৮৬৩ জন এবং বাফার, ইমার্জেন্সি ও প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় এক লাখ ৭০ হাজার নিয়োজিতের জন্য টিকা সংরক্ষণ করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago