লম্বা বিরতির জড়তা আর কর্নওয়েল চ্যালেঞ্জ
গত বছর এই ফেব্রুয়ারি মাসেই করোনাভাইরাস মহামারি আকার নেওয়ার ঠিক আগে আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সব শেষ টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। এই এক বছরে কোন টেস্ট তো দূরে থাক বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খেলেননি প্রথম শ্রেণীর কোন ম্যাচও। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর লাল বলে এতটা লম্বা বিরতি আর হয়নি। এই বিরতি নিশ্চয়ই একটা টেস্ট দলের জন্য স্বস্তির নয়।
বুধবার উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে নামার সময় আরেকটি চিন্তাও বাংলাদেশকে চারপাশে ঘুরছে। রাহকিম কর্নওয়েল। দীর্ঘদেহী উইন্ডিজের এই অফ স্পিনার আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরেই আসলেন। তার অবশ্য যৌক্তিক কারণও আছে। ঘূর্ণি বলের ফাঁদ বানিয়ে উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোকে কাবু করার তরিকা বাংলাদেশের। এবার তা করতে গিয়ে কর্নওয়ালের কারণেই দুই-তিনবার ভাবা লাগছে।
বাংলাদেশে এসে শুরু থেকেই নজর নিজের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন কর্নওয়েল। তা অবশ্য আলাদা কারণে। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ওজনের টেস্ট ক্রিকেটার। কেউ টিপ্পনি কাটেন, এই শরীর নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলে যাওয়ায় কেউ শ্রদ্ধাবনত হন। কিন্তু রাহকিমের স্কিল দেখলে শ্রদ্ধাবনত হতে হবেই। কেবল বোলিং নয় জুতসই ব্যাটিং আর স্লিপে দারুণ ফিল্ডিং দক্ষতায়ও বাহবা পাওয়ার যোগ্য তিনি।
৬ ফিট ৫ ইঞ্চি উচ্চতা। বল ফেলেন আরও উঁচু থেকে। যেকোনো উইকেটে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নেওয়ার মুন্সিয়ানা তার আছে। প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশকে গুঁড়িয়ে তা দেখিয়েছেনও। টার্ন আর গতিও তার বলে দেয় বৈচিত্র্য।
বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে প্রথম ছয়জনের পাঁচজনই বাঁহাতি। অফ স্পিনার রাহকিম নিশ্চিতভাবেই আছেন মুখিয়ে।
মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক জানালেন, প্রতিপক্ষের সেরা অস্ত্রকে সামলাতে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া আছে তাদের। সামর্থ্যের ছাপ রাখতে পারলে ব্যাটিং অর্ডারে এতজন বাঁহাতি থাকাও সমস্যার মনে হচ্ছে না মুমিনুলের কাছে।
ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে খুব বাড়তি কিছু রাখেনি বাংলাদেশ। আড়াই ঘণ্টার অনুশীলনে ক্রম অনুযায়ী নেটে ব্যাটিং করেছেন ব্যাটসম্যানরা। স্পিনের বিপক্ষেই বেশি খেলতে দেখা গেছে তাদের। ধারণা করাই যায় কি ধরণের উইকেটে হতে যাচ্ছে এই টেস্ট। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক উইকেট নিয়ে প্রশ্নে থাকলেন নির্বাক, যেন এই ব্যাপারে তার কোন আগ্রহই নেই।
অথচ সকালে মাঠে এসে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে বেশ কয়েকবার সাগরিকার বাইশ গজে পায়চারি করেছেন তিনি। তামিম ইকবাল, ডমিঙ্গো আর মুমিনুল বসে ছোট একটা মিটিংও সেরেছেন।
বিকেলে অনুশীলনে আসা উইন্ডিজ স্পর্শ করেই আঁচ করে নিয়েছে উইকেট। সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন উইকেট হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চিরায়ত সেই স্পিন বান্ধব, ‘দেখে মনে হয়েছে এটা টিপিক্যাল বাংলাদেশি উইকেট। শুষ্ক দেখেছি। স্পিনাররাই সাহায্য পাবে এখান থেকে।’
স্পিন বিভাগে নিজেদের সেরা অস্ত্র কর্নওয়েলকে নিয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট যেন কিছুটা নির্মোহ, ‘প্রস্তুতি ম্যাচে রাহকিম খুব ভাল খেলেছে। প্রচুর ডট বল খেলিয়ে সে চাপ তৈরি করেছে। আমার ধারণা টেস্ট সিরিজেও সে ভাল করবে। সে মানসম্মত অফ স্পিনার। ফিল্ডিংয়ে তাকে আমাদের সমর্থন যোগাতে হবে। সেটা সব বোলারের জন্যই। কেবল ওর জন্য না ।’
বরং মন্থর গতি গতির, নিচু বাউন্সের উইকেটেও তাদের পেসাররা ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে ধারণা ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের, ‘বল এখানে ঘুরবে, মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেট। তবুও আমার ধারণা পেসাররা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় গিয়ে ম্যাচে প্রভাব রাখবে।’
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-উইন্ডিজের প্রথম টেস্ট।
Comments