‘আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার জটিলতা বাংলাদেশি বন্ধুদের বুঝতে হবে’

গত কয়েক দশকে ভারত ও বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস, স্থলসীমা ও সমুদ্র সংশ্লিষ্ট বিরোধসহ বড় বড় বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়ে সমাধান করেছে। তবে পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক সমস্যাসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেশ দুটির পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। এমন বিভিন্ন বিষয়ে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারকে।
vikram-doraiswami-1.jpg
বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী | স্টার ফাইল ছবি

গত কয়েক দশকে ভারত ও বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস, স্থলসীমা ও সমুদ্র সংশ্লিষ্ট বিরোধসহ বড় বড় বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়ে সমাধান করেছে। তবে পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক সমস্যাসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেশ দুটির পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। এমন বিভিন্ন বিষয়ে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারকে।

দ্য ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর হতে যাচ্ছে এ বছর। বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ককে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী: প্রথমত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা মূলত বাংলাদেশিদেরই অর্জন। আমরা যুদ্ধে সহায়তা করেছি। তবে আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, আমরা বাংলাদেশি জনগণের নিজস্ব পরিচয় দৃঢ় করার ইচ্ছাকেই সমর্থন করেছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের ৫০ বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছিল।

তবে আমাদের এই সম্পর্ক এখন অনেক উন্নত হয়েছে এবং আমরা এগিয়ে চলেছি। উভয় দেশে এই সম্পর্ক স্বীকৃত এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, নিকটতম দেশের বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্ব থাকা প্রয়োজন উভয় দেশের মৌলিক জাতীয় স্বার্থেই। আমাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে আমাদের নিজ নিজ দেশের উন্নতিতেই তা সহায়ক হবে। ভারতের ১২০ কোটি এবং বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে এই জনকেন্দ্রিক বন্ধুত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গে আমদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সর্বদাই থাকবে।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে, বিশেষ করে গত দশকে। অর্থনৈতিক বিকাশ অসাধারণ, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি দারুণ। বাংলাদেশ তার জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশকে দারিদ্র্য সীমার বাইরে নিতে পেরেছে। এগুলো বড় অর্জন। কখনও কখনও নিজের চারপাশের অগ্রগতি দেখতে পাওয়া কঠিন হয়ে পরে। অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষ আরও অগ্রগতি চাইবেন। আমরা সবাই আরও চাই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আমি মনে করি, অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে যা আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে সহায়তা করবে। আমরা বাণিজ্য বাড়াতে পারি, জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ বাড়াতে পারি।

ডেইলি স্টার: দুই দেশের সম্পর্কে কোনো ফল্ট লাইন দেখতে পান কি?

দোরাইস্বামী: না, আমি এগুলোকে ফল্ট লাইন বলব না। আমার মনে হয়, কখনও কখনও মানুষ সমস্যাগুলোকে অতিরঞ্জিত করে। সমস্যা আছে। আমরা প্রতিবেশী, আমরা চার হাজার ১০০ কিলোমিটার সীমানা ভাগাভাগি করেছি। এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটা শুধু আপনাদেরই নয়, আমাদেরও বৃহত্তম স্থলসীমা। কিছু জায়গায় সীমান্ত পড়েছে খুবই জনবহুল এলাকায়। সেখানকার অধিবাসীরা মূলত একই রকম। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস একই।

সুতরাং, যেকোনো প্রতিবেশীর মধ্যে সব সময়ই কিছু সাংঘর্ষিক অবস্থান এবং সমস্যা থাকবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সাংঘর্ষিক অবস্থান বা সমস্যাগুলো বাড়ছে নাকি কমছে। আমি মনে করি, গত ১০ বা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সাংঘর্ষিক অবস্থান কমেছে। এখনও কিছুটা আছে এবং সেগুলোর সমাধান করা দরকার। তবে সেগুলো আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নের বাধা নয়। কাজেই সেগুলোকে আমি বলতে পারি, সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এগুলো সমাধানে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।

ডেইলি স্টার: তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এক দশক ধরে আটকে আছে। সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে হতাশ। আমরা কি শিগগির চুক্তিটি হবে বলে আশা করতে পারি?

দোরাইস্বামী: আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার জটিলতা বাংলাদেশি বন্ধুদের বুঝতে হবে। আমাদের সংবিধান রাজ্যগুলোর হাতে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে। যারা একটু বেশি বয়সী আছেন, তারা ফারাক্কা বাঁধ চুক্তির কথা মনে করতে পারবেন। সেটা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে এর পক্ষে আনতে হয়েছিল সরকারকে। (তিস্তা চুক্তির জন্য) পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমকে এর পক্ষে আনতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও আমাদের জন্য এটা করা কঠিন। সরকার একতরফাভাবে এই কাজটি করতে পারে না। এ কথাটি আমরা বার বার বলছি। আমরা বাংলাদেশের উদ্বেগ বুঝতে পারি এবং এর সমাধানের জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

এর মধ্যে আমরা আমাদের অন্যান্য কয়েকটি নদী নিয়ে কাজ করতে পারি। যাতে নদীর পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়। আমাদের আরও ৫২টি নদী আছে, সেসব নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা যদি একটি একটি করে সমাধান করার অপেক্ষায় থাকি তাহলে কত সময় লাগবে তা ঈশ্বর জানেন। একইসঙ্গে যে কয়টি নিয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব আমরা করব। সে লক্ষ্যে, জানুয়ারির প্রথম দিকে আমাদের একটি কারিগরি-পর্যায়ের সভা হয়েছিল। সভা থেকে ভালো ফলাফল এসেছে। আমরা এখন পানির তথ্য আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছি। যৌথ নদী কমিশনের একটি সচিব-পর্যায়ের বৈঠক শিগগির হবে।

ডেইলি স্টার: গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাবে। পদ্মা নদীতে আসা পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ একটি যৌথ উদ্যোগ, সম্ভবত বাঁধ বানাতে চাইছে। আপনাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অগ্রগতি কতটুকু?

দোরাইস্বামী: হ্যাঁ, আমরা এটা নিয়ে যৌথ গবেষণায় টার্মস অব রেফারেন্স নিয়ে আলোচনা করেছি। কাজেই এর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পদ্মা নদীর পানির জন্য আপনাদের যে অগ্রাধিকার আছে, তা আমরা বুঝতে পারি। সুতরাং, আমাদের আরও দ্রুত কাজ করা উচিত।

ডেইলি স্টার: সীমান্ত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের বহুল আলোচিত বিষয়। কীভাবে এটাকে শূন্যে নামিয়ে আনা যায়?

দোরাইস্বামী: মানুষ হত্যা কেউই দেখতে চায় না। তবে এ বিষয়ে এমন কিছু আলোচনা হয় যা সঠিক নয়। প্রথমত, এটা কেবল একদিকে হচ্ছে তা নয়। ভারতীয় নাগরিকরাও সীমান্তে মারা যাচ্ছেন। চোরাকারবারিদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) সেনারা আহত হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো সাধারণত ঘটে রাত ১০টা থেকে ভোররাত ৫টার মধ্যে। যেটা পর্যটকদের চলাচলের সময় না। এটা আমাদের সীমানাতেই হচ্ছে। আর প্রতিটি হত্যাই বিএসএফের হাতে হয়নি। সীমান্তের উভয় পাশে সংগঠিত অপরাধীরা রয়েছে। সীমান্তের দু’পাশের কিছু মানুষ অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত। কখনও কখনও তারা একসঙ্গে কাজ করছে এবং কখনও কখনও তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করছে। ভারতীয় বা বাংলাদেশি মৃত্যুর কারণ কেবল বিএসএফের শক্তি প্রয়োগের কারণেই হচ্ছে তা নয়। কখনও কখনও মৃত্যুর কারণ জানা যায় না। বিএসএফ যে পরিসংখ্যান দেয়, কখনও কখনও তার চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবরে আসে। মনে রাখবেন সীমানা বেড়া শূন্যরেখা থেকে গড়ে ১৫০ গজ দূরে। কাজেই বিএসএফের পক্ষে প্রায় ৩০০ গজ পেরিয়ে হত্যা করা সম্ভব নয়। তারা কেন এমনটা করবে? এটা তাদের কাজ না, তারা কোনো সামরিক বাহিনী না। তারা একটি সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এর অর্থ, কারও বোঝায় ভুল আছে।

সমস্যাটি দূর করার জন্য দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও বেশি সমন্বয় খুব জরুরি। এর মধ্যে যৌথ টহল এবং তথ্য আদান-প্রদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যদি আপনি (অবৈধভাবে) সীমান্ত অতিক্রম করা আটকাতে পারেন, তাহলে সীমান্তে মানুষের আহত হওয়ার সম্ভাবনা কমই থাকবে। এটা শুধু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাজ না। মানুষ যাতে এ কাজ না করে সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তার উপায় খুঁজে বের করা। মানুষ প্রকৃতিগত কারণে এটা করে না। তারা করে বাধ্য হয়ে। তারা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জড়াতে চায়, আয় করতে চায়। আমাদের উচিত সীমান্ত এলাকার উন্নয়নে অর্থ বিনিয়োগ করা। সীমান্ত হাট তৈরি ও আন্তঃসীমান্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা। যাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে, বিশেষ করে বাংলার সীমান্তে সহজেই বাণিজ্য করতে পারে। এমনকি আমরা স্থানীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলও করতে পারি। যাতে স্থানীয়রা ইতিবাচক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অভ্যস্ত হয়। এগুলো করতে পারলে আমরা সীমান্তের ওপর থেকে চাপ কমাতে পারব। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, যারা মারা যাচ্ছেন তারা সবাই দরিদ্র মানুষ।

সর্বশেষ, আমরা বুঝতে পারছি সীমান্তের সব সহিংসতা একতরফা নয়। গত দশ বছরের হিসাব লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, দুর্ভাগ্যক্রমে সীমান্তে নিহত হওয়া ভারতীয়র সংখ্যা এবং বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় সমান। গতবছর ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ বছরে ভারতীয় সীমানায় বিএসএফের গুলিতে মোট ১৩২ জন বাংলাদেশি এবং ৯৫ জন ভারতীয় নিহত হয়েছে। এই সময়কালে চোরাকারবারিদের সঙ্গে লড়াইয়ে বিএসএফের ১৭ সদস্য মারা গেছেন এবং এক হাজার ১১০ সদস্য আহত হয়েছেন। এটা ভালো না। আমি চাই না কাউকে হত্যা করা হোক। কিন্তু, শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের লক্ষ্যবস্তু করে গুলি করা হচ্ছে এমন ধারণা মোটেই সত্য নয়।

ডেইলি স্টার: আমরা কবে নাগাদ এই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে পারব?

দোরাইস্বামী: আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং স্বরাষ্ট্র সচিবরা প্রতিবছর বৈঠকে বসেন। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রতি দুই বছর পর পর দেখা করেন। এই প্রক্রিয়াগুলোকে আরও কার্যকরী করা এবং সেখান থেকে যে নির্দেশ আসে সেগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আমরা যদি এটা করতে পারি তাহলে অনেক জীবন বাঁচাতে পারব।

ডেইলি স্টার: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ভারত মিয়ানমারের ওপর পর্যাপ্ত চাপ তৈরি করেনি বলে বাংলাদেশ মর্মাহত। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

দোরাইস্বামী: আমরা সমাধান চাই। আমরা দুটি দেশেরই প্রতিবেশী। তাই উভয় দেশই আমাদের ভূমিকা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি, যার মাধ্যমে কোনো একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। আমরা এখানে মধ্যস্থতাকারী না। বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি কতটা সংবেদনশীল তা আমরা বুঝতে পারি। এর প্রভাব আমাদের ওপরও পরে। জনগণকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা সম্পূর্ণরূপেই বুঝতে পারি এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে। এটা বুঝতে হবে, আমরা প্রকাশ্যে কিছু বলছি না তার অর্থ এই নয় যে, আমরা সমাধান খুঁজছি না। এটা করার জন্য আলাদা পন্থা আছে। আমি সেই সম্পর্ক নিয়েও কাজ করছিলাম। আমরা যখনই মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি, তখনই বাস্তুচ্যুতদের নিরাপদে, দ্রুত এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তুলে ধরেছি। পার্থক্যটি হলো- আমরা প্রকাশ্যে এটা করছি না। রাখাইনে তাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরিতে এটা আরও বেশি সহায়ক হবে। আমরা কখনই এমন কিছু করব না যা বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থী এবং দশ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ দীর্ঘকাল বাংলাদেশে অবস্থান করলে তা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। আমরা সত্যিই চাই সমস্যাটির সমাধান হোক। যুক্তিসঙ্গত সমাধান খুঁজে পেতে আমরা যা করতে পারি করব।

ডেইলি স্টার: আমরা জানি যে ভারত রাখাইনে বাড়ি তৈরি করছে। ভারত আর কী করছে?

দোরাইস্বামী: আমরা বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। যাতে রাখাইনের অন্যান্য সম্প্রদায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যে থাকে। রাখাইন রাজ্যে আমাদের প্রকল্পগুলো শুধু ঘর নয়। সমস্যা যে তিনটি প্রধান জেলায় ঘটেছে, সেখানে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট সেতু, কমিউনিটি সেন্টার এবং মার্কেট তৈরি করা। যাতে করে মানুষ সেখানে যাওয়ার জন্য উত্সাহ পায়। আমরা সিটওয়েতে একটি বন্দর তৈরি করেছি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরি করবে। আমরা জনগণকে ফিরিয়ে আনতে এবং জাতিগত সমস্যা সমাধানের জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে মিয়ানমারের সঙ্গেও কাজ করেছি।

আমরা যদি প্রকাশ্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতাম তাহলে এর কোনোটিই করতে পারতাম না। কাউকে না কাউকে এই কাজগুলো করতেই হবে। সেখানকার মানুষদের ফিরিয়ে নিতে আপনাকে একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আমরা ভারতের নিজস্ব প্রাদেশিক ব্যবস্থার উদাহরণ তাদের দেখিয়েছি, যাতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। আমরা মনে করি, সমাধানের সুযোগ এনে দিয়ে মিয়ানমারের প্রতি আমরা একটি ইতিবাচক অবদান রাখতে পারি।

ডেইলি স্টার: আপনি রোহিঙ্গাদের আইনি বিষয় নিয়েও কথা বলছেন?

দোরাইস্বামী: আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি। তারা বলে, তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি পথ রয়েছে, তাদের আগে ফিরে যেতে হবে এবং তারপর নাগরিকত্বের দিকে এগোতে হবে। আমরা তাদের এগিয়ে যেতে উত্সাহিত করেছি। এটাই আলোচনা হয়েছে। আমরা মিয়ানমার এবং বাস্তুচ্যুত মানুষ বা বাংলাদেশের মধ্যকার আলোচনায় নিজেকে যুক্ত করতে চাই না। কেউ আমাদের সেটা করতে বলেনি।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে আপনার সামগ্রিক মন্তব্য কী?

দোরাইস্বামী: আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এই সম্পর্ক। এটাকে ভালো রাখা এবং সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করার একটি পদ্ধতিতে থাকার লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা দরকার। আমাদের অঞ্চলটি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল। দৃঢ় সংযোগ থেকে পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কতটা উপকার পেয়েছে তা আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। ইউরোপের কথা নাই বললাম। ১৯৪০ সালে এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো অবস্থা ছিল সবার। আমরা বাস মিস করছি। এগিয়ে যাওয়াই আমাদের জন্য সবকিছু।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago