যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক, উপসাগর থেকে সরে গেল মার্কিন রণতরী

US carrier.
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী। ছবি: এএফপি ফাইল ফটো

ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির সই করা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মূল অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করেছেন জোটের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো। পাশাপাশি, ইরানের সঙ্গে বিরাজমান উত্তেজনা কমাতে পারস্য উপসাগর থেকে বিমানবাহী রণতরী সরিয়ে নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

আজ বুধবার সৌদি আরব-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, পিটার স্ট্যানো গতকাল সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, একই সঙ্গে ইইউ চায় তেহরান চুক্তিটি পুরোপুরিভাবে মেনে চলুক।

তিনি বলেছেন, ‘পরমাণু চুক্তির সমন্বয়ক ও হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেল বিষয়টি নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছেন। তিনি চুক্তিতে সই করা দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখছেন।’

হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন উল্লেখ করে ইইউ মুখপাত্র পিটার আরও বলেছেন, ‘চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ফিরে আসাই হচ্ছে জোটের অগ্রাধিকার। জোট আরও চায় ইরান চুক্তিটি পুরোপুরি মেনে চলুক।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখপাত্র পিটার স্ট্যানোর বক্তব্যের একদিন আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ পরমাণু চুক্তির সমন্বয়ক ও হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের সঙ্গে দেখা করে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসা ও তেহরানের চুক্তি মেনে চলার বিষয়ে কথা বলেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস তার প্রথম সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘এটি একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের তা মোকাবিলা করতে হবে।’

ইরান যে পরমাণু বোমা বানাবে না তা নিশ্চিত করাকে আরও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার পক্ষে রয়েছেন বললেও তিনি ইরানকে প্রথমে চুক্তিটি পুরোপুরি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন।

ইইউ মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো বলেছেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যালোচনা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখনো ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে সংস্থাটির পুরোপুরি প্রবেশাধিকার রয়েছে। তারা সবকিছু দেখভাল করছে। সেগুলোকে এখন চুক্তির ভিত্তিতে যাচাই করতে হবে।’

উপসাগর থেকে সরে গেল মার্কিন রণতরী

ইরানের সঙ্গে বিরাজমান উত্তেজনা কমাতে পারস্য উপসাগর থেকে বিমানবাহী মার্কিন রণতরী সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

আজ আল জাজিরা’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি গতকাল বলেছেন যে ইউএসএস নিমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।

প্রায় নয় মাস সাগরে থাকার পর রণতরীটিকে যুক্তরাষ্ট্রেই ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এমন প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনকে তিনি নিশ্চিত করেননি। বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন মনে করে না যে আমেরিকার নিরাপত্তার জন্যে রণতরীটি এখন উপসাগরীয় অঞ্চলে রাখার প্রয়োজন রয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে ইরানের হামলার কোনো আশঙ্কা রয়েছে কি না এ সম্পর্কে পেন্টাগন মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইরানের ‘সাম্প্রতিক হুমকি’

ইরানের ‘সাম্প্রতিক হুমকি’র পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন রণতরীটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপসাগরে পাঠানোর পর গত মাসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা সেখানেই থাকবে। এই প্রেক্ষাপটে রণতরীটি উপসাগর থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো বলে আল জাজিরা’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগে ইরান সামরিক মহড়ার আয়োজন করলে তা তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু বোমা বহনকারী বি-৫২ বোমারু বিমান মধ্যপ্রাচ্যের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার পর ইরান দুই সপ্তাহের মধ্যে সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছিল।

গত কয়েক মাসে ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত সোমবার সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ’কে বলেছেন, ইরান পরমাণু বোমা বানানো থেকে কয়েক মাস দূরে রয়েছে।

পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান বলেছে যেকোনো আলোচনার আগে ওয়াশিংটনকে অবশ্যই ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।

পরমাণু চুক্তি অপরিবর্তিত থাকবে এবং যাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল আলোচনায় শুধু তারাই থাকতে পারবে উল্লেখ করে আজ বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র আলোচানয় আসতে চায় তাহলে তারা আসতে পারে। যদি না চায় তাহলে তারা তাদের মতো করে চলুক। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো।’

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

4h ago