বেরোবিতে জাতীয় পতাকার অবমাননা, ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার জামিন

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলায় ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তারা জামিনের আবেদন করলে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক ফজলে এলাহি খান তাদো তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক বলেন, ‘জাতীয় পতাকা অবমাননার যে মামলা হয়েছে তা জামিনযোগ্য। আমরা আদালতকে বোঝাতে পেরেছি এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আদালত দু’পক্ষের কথা শুনে জামিন মঞ্জুর করেছেন।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক হাসনাইন বলেন, ‘আমরা এই মামলার পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছি। কারণ, পুলিশ যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু উপাচার্যের লিখিত আদেশে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তাই তাকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

আমরা আদালতকে বলেছি, এই মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে। কারণ পুলিশ তদন্ত করে রাষ্ট্রদ্রোহ করার মতো অপরাধ পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মামলাটি রাষ্ট্রদ্রোহ হবে কিনা সে বিষয়ে আদালত এখনো আদেশ দেননি।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন জাতীয় পতাকা বিকৃত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত স্বাধীনতা স্মারকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রদর্শন এবং সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আরিফ বাদী হয়ে নগরীর তাজহাট থানায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান ও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ লিখিত অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক আসিব আহসান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানীকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে প্রত্যক্ষদর্শী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিসহ অন্যান্য বিষয় তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে জাতীয় পতাকার নকশা পরিবর্তন করে সবুজের ভেতর লাল বৃত্তের পরিবর্তে চার কোণা আকৃতির বিকৃত পতাকা দিয়ে কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তার ছবি তোলার সত্যতা পাওয়া গেছে। যা জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা-১৯৭২-এর বিধি ৩-এর পরিপন্থী।

আদালতে জামিন পাওয়া ১৯ জন হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আর এম হাফিজুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মণ, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রশিদুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক রহমতউল্লাহ, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইয়ুম শারাফাত, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু সায়েদ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুজ্জামান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম সরকার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ জামান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চার্লস ডারউন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুর আলম সিদ্দিক এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) শুভঙ্কর প্রমুখ।

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English

Barishal University VC, pro-VC, treasurer removed

RU Prof Mohammad Toufiq Alam appointed interim VC

1h ago