রাস্তায় মেডিকেল সেন্টার, ওয়াশিং মেশিন, লাইব্রেরি: দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষক জীবন
![Delhi.jpg Delhi.jpg](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/delhi_6.jpg?itok=Q3UKQHKj×tamp=1612592018)
ভারতে নতুন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করছেন কয়েক লাখ কৃষক। তারা দিল্লির তিন সীমান্ত- সিংহু, টিকরি ও গাজীপুরে রাস্তার পাশে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করছেন।
আজ শনিবার ভারতে কৃষক আন্দোলন নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি সীমান্তে অবস্থান নেওয়া অধিকাংশ কৃষকই পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছেন।
গত তিন মাস ধরে তীব্র শীতের মধ্যেই তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্প করে কৃষকরা রাস্তায় অবস্থান করেছেন। রাস্তায়ই তাদের রান্নার চুলা, পানির ট্যাঙ্ক, টয়লেট, মেডিকেল সেন্টার- সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে ওয়াশিং মেশিন বসানো হয়েছে, আছে একটি অস্থায়ী লাইব্রেরিও।
সিএনএন জানায়, আন্দোলনরত কৃষকরা রাতে রাস্তায় টানানো তাঁবু কিংবা তাদের ট্রাক্টর, কয়েকশো ভ্যান ও ট্রাকে গদি বিছিয়ে ঘুমান। তাদের মধ্যে এক দল কৃষক রাত জেগে পাহারা দেন। সকালে অন্যরা ঘুম থেকে উঠলে তারা বিশ্রাম করেন। এভাবেই আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন।
ক্যাম্পে পোর্টেবল টয়লেট আছে। যদিও সেখানকার দুর্গন্ধ মাঝে মাঝে অস্বস্তিতে ফেলে। সেখানে সাবান, শ্যাম্পু ও টিস্যু সরবরাহের জন্য অস্থায়ী গুদামঘর রয়েছে। এ সবকিছুই কৃষক বা কৃষকদের পক্ষে সমর্থকরা তাদেরকে দিয়েছেন।
পানীয়, গোসলসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য কাছাকাছি লোকালয় থেকে ট্রাক্টর ব্যবহার করে ট্যাঙ্কে করে পানি আনা হয়। রাস্তার পাশেই সামান্য গ্যাসের আগুনে খাবার তৈরি হয়। ক্যাম্পে বেশিরভাগ সময়ই ফুলকপি, আলু ইত্যাদি শীতকালীন সবজি রান্না করা হয়ে থাকে। সব কৃষকদের মধ্যে খাবারগুলো বিতরণ করা হয়।
ক্যাম্পে অস্থায়ী মেডিকেল সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। কৃষক পরিবারের ডাক্তার সন্তানসহ কয়েকজন তরুণ স্বেচ্ছাসেবক সেখানে থেকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তায় অবস্থান করা মানুষগুলোর জন্য বিনামূল্যে ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা-সামগ্রীও সরবরাহ করা হচ্ছে।
সিএনএন জানায়, প্রজাতন্ত্র দিবসে পুলিশের টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে আহত কৃষকদেরও সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে চরম আপত্তির পরেও কৃষিসংস্কার নিয়ে তিনটি বিল ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয়। প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ বিল তিনটি সই করলে সেগুলো আইনে পরিণত হয়।
বিতর্কিত তিনটি আইন পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় আন্দোলনরত কয়েক লাখ কৃষক। তারা নিজেদের ট্রাক এবং ট্র্যাক্টর-ট্রলি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। পুলিশি হামলা ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পরেও এখনও তারা দিল্লি সীমান্তে অবস্থান করছেন।
কৃষকদের দাবি, ওই তিনটি আইনের একটির অধীনে সরকার ন্যায্যমূল্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনা বন্ধ করে দিতে পারবে। যার ফলে পাইকারি বাজারে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন। তাদের ভয়, ওই আইনের ফলে ফসলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বড় বড় ব্যবসায়ী ও কোম্পানির হাতে চলে যাবে।
Comments