কাল থেকে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরু, প্রচারণার ঘাটতি গ্রামাঞ্চলে

সারাদেশে আগামীকাল রোববার থেকে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। তবে, টিকা নেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে গ্রামাঞ্চলে সরকারি প্রচারণা হয়েছে খুবই কম। ফলে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইনে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক কম।
ছবি: রয়টার্স

সারাদেশে আগামীকাল রোববার থেকে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। তবে, টিকা নেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে গ্রামাঞ্চলে সরকারি প্রচারণা হয়েছে খুবই কম। ফলে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইনে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক কম।

দৈবচয়ণ পদ্ধতিতে নির্বাচিত দেশের প্রায় এক ডজনেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এই চিত্র দেখতে পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে নিবন্ধন সেবা নিতে আসেননি কেউই।

নিবন্ধনে সহায়তা করতে প্রায় ছয় হাজার ৬৮৬টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেকেরই প্রযুক্তিগত জ্ঞান নাও থাকতে পারে— সে বিষয়টি মাথায় রেখেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মানিকগঞ্জের বলধারা ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের একজন উদ্যোক্তা মো. সবুজ রায়হান বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য কেউ আসেননি। আমরা সেবা দিতে প্রস্তুত আছি।’

একই পরিস্থিতি গাজীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের আরেকটি ডিজিটাল সেন্টারের। সেখানকার এক উদ্যোক্তা শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, ‘এখনো কেউ নিবন্ধনের জন্য আসেননি। আমাদের সেবা দিতে প্রস্তুত। নিবন্ধনের জন্য মানুষ আসবে, সে অপেক্ষায় আছি আমরা।’

দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার আগে কেন সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করা হয়নি— প্রশ্নের জবাবে বিভিন্ন জেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এ বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি।

গাজীপুরের মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলমও জানান এ কথা।

গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাতী ইউনিয়নের নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিনা বেগম জানান, গণপ্রচারণা সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না তিনি।

প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তারিকুল ইসলাম জানান, তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আগামীকাল সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্দেশনাটি পৌঁছে যাবে বলে আশা করছেন।

তিনি বলেন, ‘আসলে মানুষ দেখেতে চায় যে অন্যরা কী করছেন। কাজেই, যখন ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে তখন এমনিতেই সবাই কেন্দ্রগুলোতে যাবে এবং নিবন্ধনের সংখ্যাও বাড়বে।’

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে সরকার স্থানীয় সরকারি প্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছে।

গতকাল পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য সরকারি ওয়েবসাইটে (surokkaha.gov.bd) প্রায় তিন লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রথম মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। গত ২৭ জানুয়ারি ওয়েবসাইটটি চালু হওয়ার পরে লগ ইন করতে সমস্যায় পড়েছেন বলে অনেকেই অভিযোগ তোলেন। এতে নিবন্ধনের সংখ্যা কমে যায়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে অনীহা প্রকাশ করছে। সবাই দেখতে চায় অন্যরা কী করে। ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলে মানুষের আস্থা বাড়বে এবং নিবন্ধনের সংখ্যাও বাড়বে।’

পাবনার দোগাছি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নিবন্ধনের ব্যাপারটি অনেকের কাছেই নতুন। মানুষ এ বিষয়টি জানে না। এর জন্য সময় লাগবে। আশা করি, ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলে নিবন্ধনের সংখ্যাও বাড়বে।’

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টাইটন জানান, রেজিস্ট্রেশনের কাজটি ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে দেওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে এখনো নিবন্ধন বাড়েনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল থেকেও নিবন্ধন করতে সহায়তা করছি।’

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলশাদ বেগম জানান, তারা বিভিন্ন সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নিবন্ধনের জন্য উত্সাহিত করেছেন।

করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে সারা দেশে মোট সাত হাজার ৩৪৪টি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রতিটি দলে দুজন ভ্যাকসিনেটর এবং চার জন ভলান্টিয়ার থাকবেন। একটি দল দিনে প্রায় দেড় শ মানুষকে টিকা দেবে। ভ্যাকসিনেটরদের মধ্যে নার্সও থাকবেন। ইতোমধ্যে ১৪ হাজার ৬৮৮ জন ভ্যাকসিনেটর এবং ২৯ হাজার ৩৭৬ জন ভলান্টিয়ারকে টিকাদানের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, প্রতি উপজেলায় তিনটি ভ্যাকসিন সেন্টার থাকবে।

গত ২৫ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ। সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কিনেছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।

এ ছাড়া, ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে বাংলাদেশ।

ভারত থেকে আসা এই ভ্যাকসিন ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে পরিচালিত কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ পাবে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। গত বুধবার কোভ্যাক্স একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রায় এক কোটি ২২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago