কারাগারে নারীসঙ্গ

‘সত্য উদঘাটনের চেয়ে ধামাচাপা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বেশি উৎসাহী’

হলমার্কের জিএম তুষারকে কারাগারে এক নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া

হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদকে কারাগারে এক নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। এ ঘটনায় কারাগারের ভেতরকার তথ্য কীভাবে বাইরে গেল, তা জানতে কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে কারা অধিদপ্তর।

সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও শহীদুল হক। (বাম দিক থেকে)

প্রশ্ন উঠেছে— কোন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ? কারাগারে বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের যে অনিয়ম চলে আসছে, তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া? নাকি তথ্য কীভাবে বাইরে গেল, সাংবাদিকদের কাছে গেল, সেটা জানা?

দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক শহীদুল হকের সঙ্গে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘খবরটা যে বাইরে গেল, সেটা তো তারা তদন্ত করবেই যে, কে খবরটা বাইরে দিলো। সেটা হলো একটা জিনিস। কিন্তু, সেটা তো পরের কথা। প্রথম দেখার বিষয় হলো, কারাগারে যে নিয়ম-কানুন রক্ষিত হচ্ছে না, কারাগার হলো নিরাপত্তার সর্বোচ্চ জায়গা, কিন্তু, সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না তারা। সেটা তাদের চরম ব্যর্থতা। খবর তো বাইরে যাবেই। সেটা তো যাওয়াই উচিত। আরও আগে যাওয়া উচিত ছিল। তারা হয়তো এখন এটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে।’

‘কীভাবে খবরটা বাইরে গেল, সেটা তো পরের কথা। ঘটনা ঘটল কীভাবে, সেটা আগে তদন্ত করতে হবে। এটা দায়িত্বে অবহেলার একটা চরম পর্যায়। আমাদের দেশে যেটা হয়, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই সত্য উদঘাটনের চেয়ে সত্য ধামাচাপা দেওয়ায় আমাদের কর্তৃপক্ষ বেশি উৎসাহী’, বলেন তিনি।

রাষ্ট্রের তার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সঠিকভাবে চলা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘যারা দায়িত্বে আছেন, তারা যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করা। কারাগারে যা ঘটল, সামনে তো আরও অন্যান্য ঘটনাও ঘটতে পারে। অতীতেও দেখা গেছে, প্রভাবশালী কারাবন্দিরা মোবাইলে বাইরে কথা বলেছেন। এতেই বোঝা যায় কারা কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। যেহেতু সেটা তারা করছেন না, তারা করছেন কি না, তা দেখার জন্যে কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছে, যারা নজরদারি করবে। কিন্তু, এখানে গণমাধ্যমেরও একটা দায়িত্ব আছে। গণমাধ্যম তো তার দায়িত্ব পালন করবেই। তারা খোঁজ রাখবে যে, ঠিকমতো সেখানে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না। কিন্তু, তাতে যদি তারা বিরক্ত হয়, সত্য উদঘাটিত হলে তো তারা বিরক্ত হবেই।’

‘অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জায়গা কারাগার। সেখানেই যদি আবার অন্য রকমের অপরাধ হয়, কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন না করে। যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সত্য উদঘাটিত হতে হবে। কিন্তু, তারা হয়তো এখন এটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে’, বলেন তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, এখন অবশ্যই তার ওপর ভিত্তি করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত কারা কর্তৃপক্ষের। সেটা না করে কীভাবে তথ্য প্রকাশিত হলো, সেটা নিয়ে অনুসন্ধান হয়, সেটা নিয়ে কমিটি হয়, তখন তা দুটি বার্তা দেয়। প্রথমত, মানুষের তথ্য জানার যে অধিকার, সেটার স্বার্থে সংবাদমাধ্যমের পেশাগত দায়িত্ব পালনের যে ভূমিকাটা রয়েছে, সেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকে প্রাধান্য দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা খুবই অগ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয়ত, সত্যিকার অর্থে কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতিটাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করার তুলনায় সেটাকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়াস করা হচ্ছে।’

‘আমার আহ্বান হবে, গণমাধ্যমের প্রতি কোনো ধরনের হয়রানি বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি বন্ধ করে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্ত করে জড়িতদের কার্যকরভাবে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা’, বলেন তিনি।

সাবেক আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ‘যে অনিয়ম হচ্ছে, সেটা বন্ধ করাই অগ্রাধিকার। সেটা তো বন্ধ করতেই হবে। পাশাপাশি একটা মহল যে আছে, যারা গোপন তথ্য ফাঁস করে, তাদের ব্যাপারেও কারা কর্তৃপক্ষের সজাগ থাকা উচিত। তবে, অনিয়ম বন্ধ করাটাই জরুরি। সেটাতেই বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

কারাগারের ভেতরের এ ধরনের অনিয়মের তথ্য তো সাধারণ মানুষের জানার অধিকার আছে?, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা তো আছে। সেটা জানতে হবে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে। সেই আইনের আলোকে যেকোনো সাংবাদিক তথ্যের জন্য আবেদন করতে পারে। সেই অনুযায়ী তো কর্তৃপক্ষ দিতে বাধ্য। নিরাপত্তার খাতিরে যেগুলো গোপন রাখা দরকার, সেটাও তো আইনেই আছে। বাকি তথ্য তো চাইলেই তারা দিতে বাধ্য।’

নারীসঙ্গের যে বিষয়টি সামনে এলো, সেটা কি গোপন রাখা দরকার ছিল?, জানতে চাইলে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘যেটা বেআইনি বা নিয়ম-বহির্ভূত কাজ, সেগুলো মানুষ জানলে তো রিঅ্যাকশন হবেই। কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে এটা গোপন রাখা দরকার, তথ্য অধিকার আইনের মধ্যে কিছু ধারা আছে যে, এই এই বিষয়গুলো জানানো যাবে না। যেমন: পুলিশের ক্ষেত্রে তদন্তের তথ্য জানানো যাবে না, তদন্তের স্বার্থে অগ্রিম কোনো তথ্য জানানো যাবে না, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য যেগুলো গোপন তথ্য, সেগুলো জানানো যাবে না, এমন কিছু আছে। জেল কর্তৃপক্ষের কাছেও এমন কিছু ধারা আছে যে, কোনগুলো জানানো যাবে না। সেগুলো তারা বাদ দিতে পারে। তা বাদ দিয়ে বাকিগুলো কেউ জানতে চাইলে তারা জানাতে বাধ্য। সিসিটিভি ফুটেজের ক্ষেত্রে তদন্তের সময় তদন্তকারী সংস্থা চাইলে দেওয়া যাবে। কিন্তু, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে দেওয়ার বিধান আছে কি না, তা আমি বলতে পারব না।’

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

6h ago