বড় জয়ের সঙ্গে মিরাজের সামনে দুই রেকর্ডের হাতছানি
রেকর্ড রান তাড়ায় নামা উইন্ডিজকে জুতসই শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ পর পর উইকেট ফেলে ঠিকই নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন বাংলাদেশের হাতে। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বড় জয়ের সম্ভাবনার সঙ্গে মিরাজের সামনেও হাতছানি রয়েছে দুটি দারুণ রেকর্ডের।
শনিবার চতুর্থ দিন শেষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জেতার সব পরিস্থিতিই তৈরি। ৩৯৫ রান তাড়ায় নেমে ৩ উইকেটে ১১০ রান তুলেছে উইন্ডিজ। ম্যাচ জিততে করতে হবে আরও ২৮৫ রান, ম্যাচ বাঁচাতে হলে বাকি ৭ উইকেট নিয়ে খেলতে হবে তিন সেশন। শেষ দিনের উইকেটে এই দুই সম্ভাবনাই খুবই ক্ষীণ।
সফরকারীদের হয়ে ১৫ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন এনক্রুমা বোনার, ৩৭ রানে ব্যাট করছেন কাইল মায়ার্স। বাংলাদেশের হয়ে সবগুলো উইকেটই তুলেছেন মিরাজ।
এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে উইকেট নিয়েছিলেন চারটি। দ্বিতীয় ইনিংসে এর মধ্যেই হয়ে গেছে তিন উইকেট। ম্যাচে ১০ উইকেট পেতে আর তার দরকার তিন উইকেট। একই টেস্টে সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেটের ঘটনা টেস্টে আছে আর তিনটি। ইমরান খান, ইয়ান বোথাম আর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সেই তালিকায় নাম ওঠানোর সুযোগ মিরাজেরও।
কেবল তা-ই নয়। ম্যাচে ১০ উইকেট নিতে পারলে দ্রুততম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেটও হয়ে যাবে মিরাজের।
বিশাল লক্ষ্য, উপমহাদেশের চিরায়ত চতুর্থ দিনের শেষ বিকেল। স্পিনাররা টার্ন পাবেন। বল আচমকা নিচু হবে। এমন অবস্থায় রান তাড়ায় নামা উইন্ডিজ প্রথম ১৬ ওভারে যে কোনো উইকেট হারালো না, এটাই বরং কিছুটা ভিন্নরকম। তবে উইকেট পড়া শুরু হতেই একের পর এক বিপর্যয়।
সুইপ খেলে স্পিন সামলাবেন, এমন তরিকা নিয়ে নেমেছিলেন ওপেনার জন ক্যাম্পবেল। তেমন ঢঙে একাধিক বাউন্ডারিও পেলেন। তবে এই চেষ্টাই কাল হলো তার। মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে পেছনের পায়ে লাগল বল। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি।
১৭তম ওভারের প্রথম বলে ৩৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় উইন্ডিজ। এক ওভারের ব্যবধানেই দ্বিতীয় উইকেট পতন। প্রথম ইনিংসে ৭৬ রানের ইনিংস খেলা উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখাচ্ছিলেন দৃঢ়তা। তাকেও ফেরান মিরাজ। তবে এই উইকেটে বড় অবদান বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বির।
ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে বা দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় নিচু ক্যাচ হাতে জমান তিনি। এবার ২০ রানেই থামতে হয় ব্র্যাথওয়েটকে।
অভিষিক্ত শেন মোসলি এই ইনিংসেও ব্যর্থ। মিরাজের আচমকা নিচু হওয়া বল ব্যাকফুটে গিয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলেন। উঁচু ব্যাকলিফট নিচে নামাতে নামাতে বল এসে লাগে পায়ে। পরিষ্কার এলবিডব্লিউ হয়ে তিনি ফেরেন ১২ রান করে।
এরপরই একটা প্রতিরোধ গড়ে উঠে ক্যারিবিয়ানদের। চতুর্থ উইকেটে বোনার-মায়ার্স মিলে তুলেছেন ৫১ রান। এতে কিছুটা দায় আছে নাঈম হাসানেরও। সহায়ক পরিবেশ পেয়েও তিনি ছিলেন বেশ আলগা। মিরাজ অবশ্য একদিকে চাপ তৈরি করছিলেন। ৪০ ওভারের মধ্যে তিনি একাই করেন ১৬ ওভার। তাইজুল ইসলামও রান আটকে রাখার কাজটা করেছেন ভালোভাবে। তবে উইকেট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি।
এর আগে বাংলাদেশের ইনিংস রাঙান মুমিনুল হক আর লিটন দাস। টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক মুমিনুল। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি করার দিনে টেস্টে তিন হাজার রানও পূর্ণ করেন তিনি। দলের লিড বড় করতে লিটন খেলেন ৬৯ রানের ইনিংস। আগের দিনের ৩ উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে নেমে বাংলাদেশ চা-বিরতির আগে ৮ উইকেটে ২২৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(চতুর্থ দিন শেষে)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৩০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৫৯
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৬৭.৫ ওভারে ২২৩/৮ (সাদমান ৫, তামিম ০, শান্ত ০, মুমিনুল১১৫, মুশফিক ১৮ , লিটন ৬৯, মিরাজ ৭, তাইজুল ৩, নাঈম ১*; রোচ ০/১৭, রাহকিম ৩/৮১, গ্যব্রিয়েল ২/৩৭, ওয়ারিকান ৩/৫৭, বোনার ০/১৩, ব্র্যাথওয়েট ০/৭)।
উইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ৪০ ওভারে ১১০/৩ (ব্র্যাথওয়েট ২০, ক্যাম্পবেল ২৩, মোসলি ১২, বোনার ১৫*, মায়ার্স ৩৭*; মোস্তাফিজ ০/১৪, তাইজুল ০/১২, মিরাজ ৩/৫২, নাঈম ০/২৯)।
Comments