রাজশাহীতে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপন স্থগিত রাখার দাবি

বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প স্থগিত রাখার দাবি উঠেছে। বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিদ্যুৎ গ্রাহক, আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা এই দাবি তোলেন।
ছবি: ইউএনবি

বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প স্থগিত রাখার দাবি উঠেছে। বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিদ্যুৎ গ্রাহক, আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা এই দাবি তোলেন।

তাদের অভিযোগ, নেসকো এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া করছে। গ্রাহকদের মতামত না নিয়েই উপর জোর করে এই মিটার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিতরণ কোম্পানিটি উদাসীন।

অভিযোগ করে তারা বলেন, বিদ্যুৎ চুরি ও সিস্টেম লস কমাতে জনগণের উপর প্রিপেইড মিটার চাপিয়ে দেওয়ার আগে নেসকোর উচিত অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনসহ মানসম্মত বিদ্যুৎ বিতরণে বিদ্যমান বাধাগুলোর সমাধান করা। বক্তারা নেসকো কর্মকর্তাদের কাছে নতুন এই মিটারিং পদ্ধতি কেন দরকার তার ব্যাখ্যা দাবি করেন।

গত বৃহস্পতিবার নেসকোর রাজশাহী সদর দপ্তরে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সভা হয়। রাজশাহীতে বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন করতে গিয়ে নেসকোর কর্মীরা বাধার মুখে পড়ার পর এই সভা আহ্বান করা হয়েছিল।

রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলা–রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের প্রায় পাঁচ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য ২০১৮ সালের জুলাই মাসে নেসকো ৪১৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। গত বছরের অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুল আলম চৌধুরী সভায় বলেন, মহামারির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

আগামী জুনে নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় ১৫ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য নেসকো ১২০০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

নেসকোর এমডি জাকিউল ইসলাম বলেন, সিস্টেম লস, বিদ্যুৎ চুরি ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল।

এ বছর জানুয়ারিতে, নেসকো রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় ৪ হাজার ২০০ নতুন প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে।

মতবিনিময় সভায় কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘নেসকো উপর মানুষের আস্থা না থাকায় গ্রাহকরা নতুন মিটার নিতে আগ্রহী হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, নতুন মিটারে বিদ্যুৎ বিলে এক শতাংশ ছাড় পাওয়ার কথা প্রচার করছে নেসকো। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলে এক হাজার টাকা রিচার্জে ৮০ টাকা কেটে নেওয়ার কথা কোথাও উল্লেখ করছে না। কোনো কারণে প্রিপেইড মিটার বন্ধ হয়ে গেলে তা আবার সচল করতে গ্রাহককে তিন হাজার টাকা এবং মিটার প্রতিস্থাপনের জন্য ১৬ হাজার টাকা মাশুলের কথাও গ্রাহকদের বলছে না নেসকো।

স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছি না, বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামা করে। এ কারণে শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে... নেসকো এ সমস্যাগুলোর সমাধান না করে কেন প্রিপেইড মিটার জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে?’ জানতে চান তিনি।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান অভিযোগ করে বলেন, নেসকোর কর্মীরা হরহামেশা গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাদেরকে না জানিয়েই নতুন মিটার স্থাপন করেন। প্রিপেইড মিটারের বিরোধিতা করার জন্য নেসকো কর্মকর্তারা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন ও হয়রানি করছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক বলেন, নেসকো কর্মকর্তাদের তাদের নিজেদের বাড়ি এবং সরকারি দপ্তরে নতুন মিটার স্থাপন করে তাদের অভিজ্ঞতা সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত। নেসকো সাধারণ মানুষকে খেপিয়ে তুললে নেসকো থেকে পিডিবিতে ফেরত যাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করবে।

প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী সেলিনা পারভিন তার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, অনেক প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীর বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালে মানুষ যখন কেবল মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে তখন এটা নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সভায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, ত্রুটিপূর্ণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বক্তাদের প্রশ্নের কোনো উত্তর নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অন্যান্য কর্মকর্তারা দেননি।

তারা বলেছেন, কাউকে হুমকি বা জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগগুলো সত্য নয়। গ্রাহক অসন্তুষ্ট হয় এমন কিছু করা হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago