বিষমুক্ত সবজি চাষে স্বাবলম্বী কলাপাড়ার কৃষক

কলাপাড়ায় বছরব্যাপী বিষমুক্ত নানা ধরনের শাক-সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের কৃষি জমিতে এক সময় নোনাপানির কারণে বছরে একটি মাত্র ফসল উৎপাদন হতো। বছরের বাকিটা সময় মানুষ মাছ ধরে অথবা দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু, এখন সেখানে বছরব্যাপী বিষমুক্ত নানা ধরনের শাক-সবজি চাষাবাদ হচ্ছে।

স্থানীয় পাখিমারা বাজারে এলাকার সবজি চাষিরা উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি বিক্রি করেন। পরে, এখান থেকে সেসব বিষমুক্ত সবজি উপজেলা সদর থেকে জেলা, বিভাগ, এমনকি রাজধানীতেও পৌঁছাচ্ছে।

নীলগঞ্জের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আন্ধারমানিকের একটি শাখানদী বা খাল। যা পাখিমারা এলাকায় ‘পাখিমারা খাল’ এবং কুমিরমারা এলাকায় ‘কুমিরমারা খাল’ নামে পরিচিত। এই খালের লবণাক্ততার কারণেই নীলগঞ্জে একসময় শুধু একটিই ফসল হতো।

নীলগঞ্জের ১৫টি গ্রামে দেশি সবজি ছাড়াও রেড বিট, ব্রকলিসহ লবণসহনশীল আলুর জাত ‘মেট্রো’ আবাদ হচ্ছে। ছবি: স্টার

২০০৫ সালে স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমি বছরব্যাপী চাষাবাদ করতে ওই খালে প্রয়োজনীয় মিঠাপানি সংরক্ষণ করতে ঐক্যবদ্ধ হন। তারা স্বেচ্ছাশ্রমে খালটিতে ৪টি অস্থায়ী বাঁধ দেন। এই অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে মিঠাপানি সংরক্ষণের ফলে ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের কৃষক আমনের পাশাপাশি সবজি চাষেও ব্যাপক সাফল্য পেতে শুরু করেন।

শুরুটা হয়েছিল শফিউদ্দিন (৭০) উদ্যোগে। কয়েক বছর আগে নীলগঞ্জে তিনি বারোমাসি সবজির চাষ শুরু করেন। তার সবজি চাষের সাফল্যে ধীরে ধীরে পুরো ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম সবুজে ভরে উঠেছে। এখানে সবজি চাষ হচ্ছে ক্ষতিকারক কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই। আর এক সময়ের বর্গাচাষি শফিউদ্দিন সবজি চাষ করে এখন দুই দশমিক ৬৬ একর জমির মালিক। ওই জমি আবার সাত ছেলের মধ্যে বণ্টন করেছেন তিনি। সন্তানরাও তাতে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী।

নীলগঞ্জে সবজি চাষের শুরুটা সনাতন পদ্ধতিতে হলেও এখন নতুন প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক কৃষক গ্রিনহাউজ পদ্ধতির আদলে নিজস্ব পদ্ধতিতে

চাষাবাদ শুরু করেছেন। প্লাস্টিকের স্বচ্ছ আবরণ দিয়ে ঢেকে সেখানে বোম্বাই মরিচ, টমেটো, কাঁচা মরিচ, গাজর, লালশাক, বাটিশাক, পালংশাক, ধনের আবাদ করতে দেখা গেছে।

কুমিরমারা গ্রামের সুলতান গাজীর ছেলে গাজী হেমায়েত উদ্দিন (২৫) এমএ শেষ পর্বের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি তিনি তার বাবার জমিতে বছরব্যাপী সবজি উৎপাদনও করেন। বাধা কপি, ওল কপি, ধনিয়া, লাল শাক, মুলা, ফুলকপিসহ নানা ধরনের শাক-সবজির চাষ করেন তিনি। তার দুই ভাই মাহফুজ গাজী এবং আব্দুল্লাহও লেখাপড়ার পাশাপাশি সবজি খেতে কাজ করেন।

নীলগঞ্জে সবজি চাষের শুরুটা সনাতন পদ্ধতিতে হলেও এখন নতুন প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা। ছবি: স্টার

গাজী হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘বছরে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা সবজি চাষ করে আয় করি। আমরা এখন বেশ ভালো আছি। আমরা খেতে জৈবসার ব্যবহার করি, তাই আমাদের উৎপাদিত সবজি বেশ সুস্বাদু এবং চাহিদাও বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বাজারজাত করতে কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে পাখিমারা বাজারে একটি কৃষি বিপণন কেন্দ্র খোলেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘কালেকশন পয়েন্ট’। সেখানে থেকে পাইকাররা দেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এমনকি রাজধানীতেই আমাদের সবজি নিয়ে যান।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘নীলগঞ্জের ১৫টি গ্রামে দেশি সবজি ছাড়াও রেড বিট, ব্রকলিসহ লবণসহনশীল আলুর জাত ‘মেট্রো’ আবাদ হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার ২৮৫ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয় এখানে। যার আর্থিক মূল্য ১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আমারা এখানকার কৃষকদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি।’

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

Khaleda urges unity, quick action to institutionalise democracy

She also demanded a comprehensive list of victims of abduction, murder, and extrajudicial killings

3h ago