বাংলাদেশকে হতাশায় মুড়িয়ে অভিষিক্ত মায়ার্সের স্মরণীয় যত কীর্তি

mayers
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার নজির মাত্র চারটি। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে শেষদিনেই প্রয়োজন ২৮৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এসব কঠিন হিসাবনিকাশে দমে যায়নি। কারণ, তারা খুঁজে পেয়েছে কাইল মায়ার্স নামের নায়ককে। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরিতে তিনি গড়লেন স্মরণীয় সব কীর্তি। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বীরত্বে বাংলাদেশকে হারাল অনেক চেনা মুখবিহীন ক্যারিবিয়ান টেস্ট দল।

রবিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিয়েছে সফরকারীরা। প্রায় চারশো ছোঁয়া লক্ষ্য পেরিয়ে তারা জিতেছে ৩ উইকেটে। অথচ আগের দিন এক পর্যায়ে ৫৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়েছিল দলটি।

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে উইন্ডিজ এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। ফলে সিরিজ হারানোর শঙ্কা আর নেই তাদের। নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছে দলটি। এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার রেকর্ডও তাদের দখলে। ২০০৩ সালে সেইন্ট জনসে ৭ উইকেটে ৪১৮ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল তারা।

যার কল্যাণে উইন্ডিজকে প্রায় অসম্ভব এক কাজকে সম্ভবে পরিণত করেছে, তিনি মায়ার্স। ২৮ বছর বয়সে সাদা পোশাকে অভিষিক্ত হয়ে তিনি খেলেন ২১০ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। ৩১০ বল মোকাবিলা করে মারেন ২০ চার ও ৭ ছক্কা। প্রথম ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৬৫ বলে ৪০ রান। অথচ জেসন হোল্ডার, শিমরন হেটমায়ার, রোস্টন চেজের মতো নিয়মিত তারকারা বাংলাদেশ সফর থেকে সরে না দাঁড়ালে তার হয়তো মাঠে নামাই হতো না।

অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ২২২ রানে অপরাজিত ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক রুডলফ।

ইতিহাসের মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন মায়ার্স। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেবল একজনই পেয়েছিলেন এই স্বাদ। ১৯৭২ সালে কিংস্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন লরেন্স রো। ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও তিন অঙ্কে পৌঁছেছিলেন তিনি। অপরাজিত ছিলেন ১০০ রানে।

তবে একটি জায়গায় অনন্য মায়ার্স। তিনি ডাবল সেঞ্চুরি করেন ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে। অভিষেকে এই কীর্তি নেই ক্রিকেট ইতিহাসের আর কোনো খেলোয়াড়ের। আগের দিনের ৩৭ রান নিয়ে নেমে ব্যাটিংয়ে পরিপক্বতার পরিচয় দেন মায়ার্স। অবধারিতভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে তিনি দলকে উপহার দেন স্মরণীয় এক টেস্ট জয়, যেখানে আগের চারটি দিনে চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ।

পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই অবশ্য মায়ার্সকে ফেরাতে পারত মুমিনুল হকের দল। তাইজুল ইসলামের বল তার প্যাডে লাগলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন উঠেছিল। আম্পায়ার তাতে সাড়া না দেওয়ায় রিভিউও নেয়নি বাংলাদেশ। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাগত স্টাম্পে। তখন তিনি ব্যাট করছিলেন ৪৭ রানে।

ব্যক্তিগত ৪৯ রানেও জীবন পান মায়ার্স। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর আর তাকে আটকানো যায়নি। ৮৯ বলে ছোঁয়া ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ফিফটিকে তিনি সেঞ্চুরিতে রূপ দেন চা-বিরতির আগে। মোস্তাফিজুর রহমানকে চার মেরে পৌঁছে যান তিন অঙ্কে।

চা বিরতি পর্যন্ত মায়ার্সের রান ছিল ১১৭। উইন্ডিজের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ২৬৬। অর্থাৎ শেষ সেশনে ৩৩ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১২৯ রান। মায়ার্সের বীরোচিত পারফরম্যান্সে এই সমীকরণ মিলিয়ে উল্লাসে মাতে ক্যারিবিয়ানরা। এসময়ে তিনি একাই তোলেন ৯৩ রান!

মায়ার্সের পাশাপাশি কৃতিত্বের দাবি রাখেন আরেক অভিষিক্ত খেলোয়াড় এনক্রুমা বোনার। চতুর্থ উইকেটে দুজনে ৪৪২ বলে যোগ করেন ২১৬ রান। এই রেকর্ড জুটিই তাদেরকে দেয় জয়ের ভিত।

টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ জুটি ছিল ১৩৪ রানের। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ ও ইয়াসির হামিদ বাংলাদেশের বিপক্ষেই করাচিতে রেকর্ড গড়েছিলেন। ১৮ বছর পর ওই কীর্তি ভেঙে নিজেদের করে নেন বোনার ও মায়ার্স।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago