‘আমার বাড়িতে হামলা, আমাকেই মারধর, আমি অবাঞ্ছিত হবো কেন?’
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানকে তার নিজ এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এনিয়ে রবিবার রাতে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে হামলা, আমাকেই মারধর, আমি অবাঞ্ছিত হবো কেন? আমি কী অপরাধ করেছি?’
তিনি বলেন, ‘মামলা করছে সরকারি নির্দেশে, সরকারি কর্মকর্তাকে পিটিয়েছে এজন্য। মামলা করেছে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার জন্য এইচইডি। আমাকে অবাঞ্ছিত কেন করবে? আমি কীভাবে মামলা প্রত্যাহার করব?’
গতকাল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য সচিবের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের কর্মী-সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের যে এমপি সাহেব আছেন- উনি এতো ক্ষমতাধর, উনি যদি মনে করেন অবাঞ্ছিত বা এলাকা ছাড়া, ওনার ভিডিও ক্লিপটা দেখেন। উনি তো বলছেন, আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে না জানিয়ে কাজ শুরু করেছে ভেঙে দিয়েছি। ভিডিওতে বলেছে। আর কী কথা বলবেন? তাহলে, উনি নিজেই আমার এটা ভাঙল, নিজেই পিটাইলো, নিজেই সবকিছু করল, আমি অবাঞ্ছিত কেন হবো?’
আপনি এখন কী করবেন?
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘আমি কী করতে পারব? আমি সরকারি কর্মচারী। আমি করোনাকালে আজ কতজন ভ্যাকসিন নিয়েছে, এ পর্যন্ত কতজন রেজিস্ট্রেশন করেছে, টিকা নেওয়ার পরে কেউ অসুস্থ হয়েছে কিনা এ তথ্যই নিচ্ছি সারাদিন। আমার প্রতিবাদ এটুকুই আল্লাহ যেন তাদের শান্ত করে। এই দুর্বৃত্তায়নের যেন একটা অবসান হয়।’
তিনি বলেন, আমি টেলিভিশনে দেখলাম সে বলছে যে আমার এলাকায় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হলে আমি জানব না, আমাকে না জানিয়ে করা অপরাধ হয়েছে, তার বিচার হওয়া উচিত। সে নিজেও সচিব ছিল, সে যখন যুব উন্নয়ন কেন্দ্র করে এক থেকে দেড় একর জায়গার ওপর ছয়-সাত তলা ভবন করেছে। আমার তো ক্লিনিক। তখনকারও তো একজন সংসদ সদস্য ছিল। তাকে তো সে কোনোদিন মানুষই মনে করত না। এখন তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে আগের যে সংসদ সদস্য ছিল, তার সময়ে যে ছিল তার অনুমতি নিয়ে করেছিল কিনা, তিনি জানেন কিনা।’
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘তার কিছু ফেক লোক আছে। যারা এই কাজটা করেছে, তারা কেউ আওয়ামী লীগ করে না। তারা সন্ত্রাসী লোকজন। প্রতিমাসে, সপ্তাহে সপ্তাহে সভাপতি বানায়, সেক্রেটারি বানায়। এরে ধরে, এরে মারে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা এবং এসব দুর্বৃত্তদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আমি বলছি এটা।’
স্বাস্থ্য সচিবের বাড়িতে হামলা প্রসঙ্গে গতকাল সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, ঘটনার সময় তিনি উপজেলা সদরে একটি সভায় ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘গ্রামের লোকজন আমাকে ক্লিনিক নির্মাণের ব্যাপারে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে, কিন্তু আমি উত্তর দিতে পারিনি। কারণ, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।’
‘আমি শুক্রবার কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন ও কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তারা আমাকে জানায় যে, একটি ক্লিনিক নির্মাণ হচ্ছে।’
একজন সরকারী কর্মকর্তা তার ইচ্ছা অনুযায়ী এটা করতে পারেন না, বলেন এই আইন প্রণেতা।
তিনি আরও বলেছিলেন, স্থানীয় রাজনীতিক নেতা-কর্মীসহ গ্রামের মানুষের মধ্যে এ নিয়ে হয়তো ক্ষোভ ছিল। এজন্য তারা হয়তো ঘটনাস্থলে গিয়ে থাকতে পারে।
আজ এ নিয়ে ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও এমপি নূর মোহাম্মদ ফোন ধরেননি, টেক্সট মেসেজ পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।
নিজ এলাকায় অবাঞ্ছিত
গতকাল স্বাস্থ্য সচিবের বাড়িতে হামলার ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীদের নামে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ এনে আজ স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলীপ কুমার ঘোষ।
তিনি সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকালের ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। এজন্য আজ আমরা কটিয়াদী ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করি। ওই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।’
ওসি প্রত্যাহার
এদিকে, স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়িতে হামলার পর কাটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হোসেনপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোনাহর আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ সকালে আমরা ওসির প্রত্যাহারের অর্ডার পেয়েছি। তবে, এতে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কারণ উল্লেখ নেই। তাকে ঢাকা অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
Comments