মুগদা মেডিকেলে ভ্যাকসিন বুথ

প্রবীণদের উপস্থিতি বাড়ছে, অব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ

হাড়ের দুর্বলতাজনিত রোগে আক্রান্ত ৮৪ বছর বয়সী রিজিয়া খাতুন তার ছেলে রেজাউর রহমান ও ছেলের স্ত্রী ফারহানা হোসাইনকে নিয়ে গতকাল সোমবার রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন করোনার ভ্যাকসিন নিতে।
Mugda Hospital
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভ্যাকসিন বুথ। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১। ছবি: স্টার/ এসকে এনামুল হক

হাড়ের দুর্বলতাজনিত রোগে আক্রান্ত ৮৪ বছর বয়সী রিজিয়া খাতুন তার ছেলে রেজাউর রহমান ও ছেলের স্ত্রী ফারহানা হোসাইনকে নিয়ে গতকাল সোমবার রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন করোনার ভ্যাকসিন নিতে।

পুরান ঢাকার নারিন্দা থেকে তারা সেখানে এসে পৌঁছেছিলেন সকাল ১০টার দিকে। কিন্তু, সেখানে পৌঁছে তারা কোনো অ্যাডেনডেন্ট বা হুইল চেয়ার পাননি যার সাহায্যে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ভ্যাকসিন দেওয়ার বুথে যেতে পারেন। সেখানে কোনো এলিভেটরও তারা পাননি।

ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর হাত ধরে অনেক কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে বুথে গিয়েছিলেন রিজিয়া।

তার মতো আরও অনেক প্রবীণকে হাসপাতালে ভ্যাকসিন দিতে এসে একই কষ্টে পড়তে হয়েছিল। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা হাসপাতালের ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন।

তাদের মধ্যে রয়েছেন গোপীবাগের ৭৩ বছর বয়সী আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী ৬৫ বছর বয়সী মনোয়ারা বেগম। আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখানে সকাল ১০টার দিকে এসেছি। ভ্যাকসিন নিতে আমাদের ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।’

হাসপাতালের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এই হাসপাতালে গতকাল সকাল ১০টায় প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

তারা আরও জানিয়েছেন, সেখানে গতকাল মোট ৫০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল। তাদের মধ্যে ৩৫৪ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।

গত রোববার সারা দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলে মুগদার এই হাসপাতালটিতে সেদিন নিবন্ধিত ৪৭১ জনের মধ্যে ৩১৪ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল।

মুহতাসিম বেলাল এই হাসপাতালে এসেছিলেন তার বাবা নূরুল হক পাটোয়ারী (৯৩) ও মা রোকেয়া বেগম (৭৫) নিয়ে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরাও এখানে এসে কোনো অ্যাটেনডেন্টকে পাইনি।’

‘আমি রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞাস করি ভ্যাকসিন দেওয়ার বুথ কোথায়। তিনি জানান, দুই তলায়। যেহেতু অনেক বয়স্ক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আসছেন তাই বুথটি হাসপাতালের নিচ তলায় হলে ভালো হতো। হুইল চেয়ারও রাখা উচিত ছিল,’ যোগ করেন বেলাল।

অনেকে বলেছেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার বুথে প্রিন্টার না থাকায় তাদেরকে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরমের কপি প্রিন্ট করে আনতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. নূরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন যে তারা লিখিত নির্দেশনা হাসপাতালের নিচ তলায় দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

লিফটের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘চারটার মধ্যে দুইটা এলিভেটর নষ্ট হয়ে আছে। আমরা সেগুলো ঠিক করছি। বয়স্কদের জন্যে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে।’

অন্যদিকে, গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবীণরা সেখানকার সেবার মানে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাঈদ হোসেন ও তার স্ত্রী এসেছিলেন বিএসএমএমইউ’র টিকাদান কেন্দ্রে। তারা সেখানে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগেই ভ্যাকসিন নিতে পেরেছিলেন।

অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগে হুইল চেয়ারে বসে প্রকৌশলী সাঈদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি এই সেবায় সন্তুষ্ট। আমরা এখন বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’

ব্যবসায়ী হাজী তোফাজ্জল হোসেন (৬৮) সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসেছিলেন ধানমন্ডির শংকর থেকে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেকে ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছেন না। আমি মনে করি, এটা একটা জরুরি ইস্যু। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আমি ভালো বোধ করছি।’

সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোনো গুজবে কান দেওয়া উচিত না। যদি ভ্যাকসিনটি ভালো নাই হতো তাহলে সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার মানুষ এটি নিতেন না।’

কেরানীগঞ্জ থেকে এক তরুণ ব্যাংকার আহসান হাবিব এখানে এসে গতকাল ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার সব সহকর্মী ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্যে নিবন্ধন করেছেন। আমরা সবাই করোনা থেকে নিরাপদে থাকতে স্বেচ্ছায় ভ্যাকসিন নিচ্ছি।’

‘সবাই আগ্রহী হয়ে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন’ উল্লেখ করে টিকাদান কেন্দ্রের নার্স মার্থা মণ্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের উপস্থিতির হার বেশ ভালো। গত দুই দিনে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কারো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।’

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

56m ago